এক সময় প্রায় ১৭ টি খাল ঢাকার বুকে প্রবাহিত হত। স্বচ্ছ পানি, মাছের আধার ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য এসব জলাধারের গুরুত্ব আজও অসীম। এক সময় এসব খাল থেকে নিকটস্ত কৃষি জমিতে পানি সেচ দেওয়া হত। কিন্তু কালের বিবর্তনে ঢাকার প্রাণ খালগুলো দখল ও দূষনে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে হওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। পরিবেশবিদ ও সংশ্লিষ্টদের শত আবেদন-নিবেদন এতদিন উপেক্ষিত ছিল। তৎকালে ঢাকা ছিল বসবাসের জন্য একটি শান্তি ও নিরাপদ শহর। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে শহর প্রসারিত হয়। ক্রমশ: ঢাকা ইট পাথরের জঙ্গলে পরিণত হয়। ঢাকাবাসির দাবি ছিল দখল হওয়া খালগুলো উদ্ধার করে সেগুলোকে দুষন মুক্ত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। ঘিঞ্চি ঢাকায় অগ্নিকান্ড ঘটলে যাতে দমকল বাহিনী নিকটস্ত খাল থেকে পাইপ দিয়ে পানি নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে সেজন্য খালগুলো উদ্ধার ও দুষনমুক্ত করা বিশেষ জরুরি।
এতদিন খালগুলোর দায়িত্বে ছিল ওয়াসা। অবশেষে উত্তর ও দক্ষিন সিটির তৎপরতায় খাল উদ্ধার ও দুষনমুক্ত করার দায়িত্ব উভয় সিটি কর্পোরেশনকে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে খাল উদ্ধারে কিছু তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।
ঢাকা শহরে মোট কতটি খাল ছিল, এগুলোর দৈর্ঘ, প্রস্ত ও গভীরতা কত ছিল তার কোন পরিসংখ্যান কোন কর্তৃপক্ষের আছে কিন না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আরও সন্দেহ রয়েছে উভয় সিটি কর্পোরেশন এগুলো উদ্ধারে কতটুকু আন্তরিক থাকবে। অধিকাংশ খাল ময়লার ভাগারে পরিণত হয়েছে। উভয় পারে দখলদাররা অবৈধ স্থাপনা বানিয়ে যে যার মত দখল করে নিয়েছে। অনেক আগেই হাতছাড়া হয়ে যায় ঢাকার প্রাণ খালগুলো।
এগুলো উদ্ধার করতে সরকার কত টাকা বাজেট করবে এবং বাজেটের টাকা সঠিকভাবে ব্যয় হবে নাকি অসাধুদের পকেট ভারী হবে তা নিয়ে ঢাকাবাসির মনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। উদ্ধার অভিযানে বাধা ও রাজনৈতিক তদ্বির একটি স্বাভাবিক ব্যপার।
নদী দখলকারীদের উচ্ছেদের সময়ও বাধা ও রাজনৈতিক তদ্বির আমরা দেখেছি। তবে বিআইডব্লিউটিএ আন্তরিক ও কঠোর থাকায় নদীর জমি উদ্ধারে কোন সমস্যা হয় নাই। আলোচিত খালগুলো উদ্ধারে উভয় সিটি কর্পোরেশন সকল বাধা ও তদ্বিরকে উপেক্ষা করে সততার সাথে কাজ করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।