আলীনুরের প্রতারণায় নিরব কেন প্রশাসন

0
594

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারী অনুমোদনহীন পুষ্পধারা আবাসনের এমডি আলীনুর প্লট বুকিং দিয়ে সাধারন জনগনের নিকট থেকে শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। আর চোখে কালো চশমা লাগিয়ে নিরবতা ভূমিকা পালন করছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। পুষ্পধারা আবাসনের বৈধ কোন অনুমোদন নেই। তবুও দিনের পর দিন প্রকল্প সংলগ্ন প্রশাসনের চোখের সামনেই বড়বড় সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে, আবাসন মেলা বসিয়ে, পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে আকর্ষনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে, লিফলেটে নানা তথ্য দিয়ে পুষ্পধারা আবাসনের প্লট দেখিয়ে প্রবাসী ও চাকুরীজিবি শ্রেণীর মানুষের কাছে কিস্তিতে বুকিং বা বিক্রির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই কোম্পানীটি। প্লট নেই একশ আর বুকিং দিয়েছে বারোশ। কিন্তু কিভাবে? আর প্লট বিক্রি বা বুকিংয়ের টাকা কোথায় যাচ্ছে তার হদিস কেউ রাখছে না। হয়তো ডেসটিনির মতো ধরা খাইলে দুদক বলবে তদন্ত করা হচ্ছে।

এবিষয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তি পর্যন্ত দেখভাল করার অধিকার রাখলেও তারা কেন এসব প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা তা কারোই বোধগম্য নয়।

তবে পুষ্পধারা একজন পরিচালক বলেন, তারা সব পক্ষকে ম্যানেজ করেই নাকি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পুষ্পধারার প্রতারণার সংবাদ প্রকাশিত হলেও স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক যেন চোখ বন্ধ করে রেখেছেন। তাদের যেন কোন দায় নেই। প্রশাসনের চোখের সামনে পুষ্পধারা এমন অবৈধ কার্যক্রম কিভাবে চালিয়ে আসছে তা নিয়ে জনসাধারনের মধ্যেও ব্যাপক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা-মাওয়া রোডে পদ্মা সেতু সংলগ্ন এলাকায় গ্রাহকদের নিয়ে সমাবেশ, মতিঝিলে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপস্থিত রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ইউনুস আলী, মহাব্যবস্থাপক আবদুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম ইসহাক আলী।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিএম রফিকুল ইসলাম, ডিজিএম বিষ্ণুপদ বিশ্বাস, ডিজিএম সিরাজুল ইসলাম, ডিজিএম আবদুল হালিম, ডিজিএম নেসার আহমেদ ভূঁইয়া, ডিজিএম শিকদার সিদ্দিকুর রহমানের মতো ব্যক্তিবর্গকে। যাদের উপস্থিতি দেখে সাধারন গ্রাহকরা খুব সহজেই পুষ্পধারাকে বিশ^াস করে।

আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোস্তফার উক্তি “নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু ঘিরে আমাদের এ আবাসন প্রকল্প”।

ব্যস, কেল্লাফতে। সাধারন গ্রাহকদের বিশ^াস অর্জন করাতে এমন কয়েকটি কথাই যথেষ্ট। এই সুযোগে সহজ কিস্তির নামে পুষ্পধারা গ্রাহকদের নিকট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তবে এই টাকা কোথায় তার হদিস কেউ রাখছে না।

এমডি আলী নুরের ঘোষণা ‘পুষ্পধারা হবে পদ্মাসেতুর অলঙ্কার’ ‘স্বপ্ন সত্যি হবেই’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে ১৫শ গ্রাহক নিয়ে সমাবেশ করে পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লিমিটেড। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ইউনুস আলী বলেন, পুষ্পধারার গ্রাহকরা পুষ্পধারার মাধ্যমে তাদের আবাসন সুবিধার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন। এটাও পদ্মাসেতুর মতো বাস্তবতা। আমরা আশাবাদী পদ্মা এলাকায় গড়ে ওঠা পুষ্পধারা হবে পদ্মাসেতুর অলঙ্কার।

এখন বাস্তবতা হলো নামি দামী লোকজন দিয়ে অনুষ্ঠানে কথা বলিয়ে সাধারন মানুষের চোখে ধুলো দেয়া প্রধান উদ্দেশ্য মাত্র। কারন নিজের বিবেকের চিন্তা যতটা না করে তার চাইতে ক্ষমতাবান অন্যদের কথায় বেশী আসক্ত হয়। আর এই সুযোগটিই আলী নুর গ্রহন করেছে প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লিমিটেড প্লট ব্যবসার নামে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে চটকদার সাইনবোর্ড লাগিয়ে জনগনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হরদম চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারণা। পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লিমিটেড এযাবৎ নিজেদের কোম্পানীর নামে শ্রীনগর ভূমি অফিসের মৌজাধীন এলাকায় জমি কিনেছে  প্রায় ৭০ শতাংশ। সরকারী নিয়ম মেনে প্লট বানালে সর্বোচ্চ প্লট হতে পারে ৫টির মতো।

কিন্তু প্রতারক কোম্পানী প্রতিষ্ঠালগ্ন সময় হতে রাজধানী ঢাকা শহরের নামিদামী হোটেল ও ভিআইপি লাউঞ্জ ভাড়া নিয়ে জমকালো মেলার আয়োজন করে সহজ কিস্তিতে এপর্যন্ত ১৫শর উপরে প্লট বুকিংয়ে বিক্রি করেছে। যার পুরো পরিকল্পনাটাই ঠকবাজি আর প্রতারনায় ভরপুর। কারন এই মুহুর্তে পুষ্পধারা সহজ কিস্তির মাধ্যমে গ্রাহকে কাছে প্লট বুকিং দিয়ে যেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সেই টাকা বা প্লট অদুর ভবিষ্যতে কখনোই গ্রাহক ফেরত পাবেনা বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। আর আসল ঘটনা হলো এই মুহুর্তে যারা প্রষ্পধারা নিকট জমি ভাড়া দিয়েছে সাইনবোর্ড লাগানোর জন্য তাদের জমিও একদিন এই হায় হায় কোম্পানী গ্রাস করবে।

যা ইতিপূর্বে দেশের নামিদামী আবাসন কোম্পানীগুলো জনগনের জমি জোড়পূর্বক দখল করে নিয়েছে। জনগনের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঐ টাকা দিয়ে আবার জনগনের উপরই নির্যাতন করার বহু রেকর্ড ভূমিদস্যু কোম্পানীগুলো বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে। জনগনকে নি:স্ব করার এক ডিজিটাল ফাঁদ হচ্ছে পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লিমিটেড। এই কোম্পানীর চেয়ারম্যান, এমডি সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশের বড় বড় দুর্নীতিবাজ গডফাদারদের নিকট আত্মীয়। তাদের ক্ষমতার জোড় অনেক উপরে।

তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে কেউ সুবিধা করতে পারেনা। তারা একবার টাকা হাতিয়ে নিজেদের পকেটে নিতে পারলে ঐ টাকা আর কখনোই কেউ ফেরত আনতে পারবে না। কারন তারা খুব সুক্ষè কৌশলে জনগনের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

পুষ্পধারা প্লট বুকিংয়ের মাধ্যমে জনগনের নিকট থেকে যেই টাকাটা নিচ্ছে তার বিপরীতে জনগনকে দিচ্ছে কোম্পানীর নামের উপরে একটুকরো রশিদ ভাউচার। আর এই ভাউচার হবে ঐ সমস্ত জনগনের গলার তাবিজ মাত্র। কোম্পানী টাকা বা জমি বুঝিয়ে না দিলে এই তাবিজ ব্যবহার করে জনগন হাজার বছরেও তার সমস্যার সমাধান পাবে না। কারন ডেসটিনিতে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এমন তাবিজ অন্তত ২০ লাখ গ্রাহক পেয়েছে। ডেসটিনির তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে ২০ লাখ গ্রাহক শুকিয়ে শুটকি মাছ হলেও ডেসটিনির কর্মকর্তারা কিন্তু খুবই আরাম আয়েশে দিন পার করছে।

এদের নামে মামলা হয়েছে ঠিকই তবে এরা জনগনের থেকে হাতিয়ে নেয়া ঐ টাকা খরচ করে জামিনে বেরিয়ে এসে এখন তারা আছে মহা সুখে। পুষ্পধারার ঠিক একইভাবে জনগনকে নি:স্ব বানাবে এতে কোন সন্দেহ নেই বলে জানিয়েছে ঐ প্রতিষ্ঠানের কর্মরত প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

রাস্তার মোড়ে মোড়ে সহ পত্রপত্রিকায় বা টিভিতে পুষ্পধারা চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপনের ফাঁেদ পড়ে যারা তাদের তিল তিল করে জমানো টাকা পুষ্পধারার হাতে তুলে দিচ্ছে ভবিষ্যতে তাদের চোখে কান্না করার মতো পানিটুকু থাকবেনা বলে মনে করছে সচেতন মহল।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলীনূর ইসলাম বলেন, পুষ্পধারা প্রতিষ্ঠার পর থেকে অল্প সময়ে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। আমরা বিশ্বস্ততার সঙ্গে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। গ্রাহকের নিকট থেকে টাকা নিচ্ছেন কিস্তি আকারে আর প্লট বুঝিয়ে দিবেন ১০/১৫ বছর পরে। যদি নির্ধারিত সময় পরে প্লট বা টাকা ফেরত না দেন তাহলে কি হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে আলীনুর কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen + 1 =