দুর্নীতির শীর্ষে অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনকে মিথ্যা বলছেন

0
616

মো: আবদুল আলীম: ঢাকার যাত্রাবাড়িতে অবস্থিত শহীদ জিয়া গার্লস স্কুল ও কলেজ এর অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে একের পর এক অভিযোগ করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী শিক্ষকমন্ডলী, অভিভাবক এবং উক্ত এলাকার ৪৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা অধিদপ্তর, জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক সহ একাধিক বিভাগে এসব অভিযোগ দায়ের করেন। সর্বশেষ উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঁচজন শিক্ষক কর্তৃক স্বাক্ষরিত অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর অভিযোগের তদন্ত করেন। তদন্তের প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদের বিরুদ্ধে উথ্যাপিত একাধিক অভিযোগের প্রমাণ পওযা গেছে। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের স্মারক নং ৩৭. ১৯. ০০০০. ০০৬. ১৬. ০২৪. ২০. ২৬ তারিখ ২২ অক্টোবর, ২০২০ পরিদর্শন প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন পরিচালক প্রফেসর অলিউল্লাহ মো: আজমতগীর। শিক্ষকদের দাখিল করা অভিযোগের তদন্ত করেন প্রফেসর রসময় কীর্ত্তনিয়া, ড: রেহানা খাতুন, উপপরিচালক, প্রফেসর এইচএম জাহাঙ্গীর আলম, শিক্ষা পরিদর্শক এবং মো: ফরিদউদ্দিন, অডিট অফিসার। ফাতেমা রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের একটি বিষয় ছিল অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিষ্টানে শিক্ষার্থী সংখ্যা হ্রাস ও নিয়ম বহির্ভূত শিক্ষক নিয়োগ।

এসব অনিয়মে গভর্ণিং বডির সভাপতি মো: নজরুল ইসলাম ফাতেমা রশিদকে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগে প্রকাশ। তদন্তে ২০০৬ সাল থেকে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পওযার বিষয়টি প্রমাণিত। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ শিক্ষার্থী বৃদ্ধির কোন উদ্যোগ অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ গ্রহণ করেন নাই।

অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদের নিয়োগ অবৈধ। তদন্তে প্রকাশ, তিনি ০৮-১১-১৯৯৩ খ্রি: মাধ্যমিক স্তরের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন ও ঐ তারিখেই যোগদান করেন। তিনি উক্ত পদে এমপিওভুক্ত ছিলেন না। অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের পর নিয়োগ সংক্রান্ত রেকর্ড পত্রে স্বাক্ষর ব্যতিত প্রতিষ্ঠানের সকল দৈনন্দিন কাজ, বেতন বিলে স্বাক্ষর, ব্যাংক হিসাব পরিচালনা ইত্যাদি সকল প্রশাসনিক কাজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ফাতেমা রশিদ করেছেন।

প্রকৃতপক্ষে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত থেকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়েছেন যা বিধিসন্মত হয়নি। অর্থাৎ অধ্যক্ষ হিসেবে তার নিয়োগই অবৈধ। ফাতেমা রশিদ ০১-০৬-২০০৭ খ্রি: হতে ৩১-১২-২০১০ খ্রি; পর্যন্ত মাসিক ৫০০ টাকা এবং ০১-০৮-২০১০ খ্রি: হতে অধ্যক্ষ পদে যোগদান পর্যন্ত (২৫-১১-২০১৬)  ২০,০০০ টাকা চার্জ ভাতা গ্রহণ করেছেন।  ২০,০০০ হারে মাসিক চার্জভাতা গ্রহণ গভর্ণিং বডির পক্ষাতিত্ব বলে তদন্তে প্রকাশ। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি একটি বড় ধরনের আর্থিক অনিয়ম।

শিক্ষা প্রতিষ্টানের নামে মাইক্রোবাস ক্রয় নিয়ে রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতি। অভিযোগ রয়েছে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বাসটি কিনে ফাতেমা রশিদ ১৬ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন এবং বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন। তদন্তে প্রকাশ, গাড়ি ক্রয় সংক্রান্ত কোন কাগজ ফাতেমা রশিদ তদন্ত দলকে দেখাতে পারেন নাই। মাইক্রোবাস ক্রয়ে কোন দরপত্র আহবান করা হয় নাই। অধিকন্ত ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ১,১০,৬২৫ টাকা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করা হয় নাই যাএকটি বড় ধরনের অনিয়ম। 

অভিযোগ রয়েছে প্রাইমারী শাখার বেতন ভর্তি ফি, পরীক্ষা ফি ফান্ড জমা না দিয়ে ফাতেমা রশিদ আত্মসাৎ করেন। তদন্তে প্রকাশ প্রাইমারী শাখার জন্য আলাদা রেজিস্টার বহি নাই। সকল আদায়কৃত টাকা একত্রে হিসাবভুক্ত করে উক্ত টাকা হতে ব্যয় এবং ব্যাংকে জমা করা হয়। এক্ষেত্রে সম্পুর্ন টাকা ব্যাংকে জমা করা হয় নাই। ২০১৭ সাল থেকে স্কুল শিক্ষরা অভ্যন্তরীন বেতন পাচ্ছে না বলে যে অভিযোগ রযেছে তার সত্যতা পাওযা গেছে।

অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ ২০১৭ সালের মার্চ মাস হতে অভ্যন্তরীন বেতন থেকে শিক্ষকদেরকে বঞ্চিত করছেন। এর প্রতিবাদ করলে শিক্ষদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও বরখাস্ত করেন। অন্যায়ভাবে শিক্ষক বহিষ্কারের অভযোগটি তদন্তে প্রমাণিত। গভর্নিং বডির সভাপতি মো: নজরুল ইসলামের সহায়তায় অন্যায়ভাবে ৯ জন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেন ফাতেমা রশিদ। 

বিধি ানুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার ০২ মাসের বেশি হবে না। গার্হস্থ্য অর্থিনীতির প্রভাষক শামছুন নাহার সকল উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে চাকুরি পুণ:বহালের সিদ্ধান্ত পান কিন্তু ফাতেমা রশিদ নিজের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তাকে চাকুরিতে বহাল করেন নাই। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন ১৫-১২-২০১৪ তারিখের রায়ে উক্ত শিক্ষককে পুন:বহালের আদেশ দিলেও ফাতেমা রশিদ উচ্চ আদালতের রায়কেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়াল ঘেঁষে দোকান নির্মান নিয়েও বিশাল অনিয়ম করেন ফাতেমা রশিদ।

অধ্যক্ষ হিসেবে তার নিয়োগে অনিয়ম, ঘুষের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ, এমপিওভুক্তির ব্যপারে অনৈতিক লেনদেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ, কথায় কথায় শিক্ষক বরখাস্ত, উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন সহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতিবাজ এই অধক্ষের বিরুদ্ধে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডোর চেয়ারম্যানের নির্দেশ ও মানছে না ফাতেমা রশিদ।

চেয়ারম্যান উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্টানের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি আকবর আলীকে নির্ধারন করে বিষয়টি ফাতেমা রশিদকে লিখিতভাবে জানায়। কিন্তু ফাতেমা রশিদ আকবর আলীকে সভাপতি হিসেবে মানছে না এবং তাকে শিক্ষা প্রতিষ্টানে বসা তো দুরের কথা ঢুকতেই দিচ্ছে না।

নব নির্বাচিত সভাপতি সভাপতি আকবর আলী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গেলে অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ তার সাথে আপত্তিকর আচরন করে ও এক পর্যায়ে হুমকি ধমকি দেয়। এ কারণে আকবর আলী ফাতেমা রশিদের বিরুদ্ধে যাত্রবাড়ি থানায় জেনারেল ডাইরি অন্তর্ভক্ত করেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান  মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ফাতেমা রশিদের সাথে আর্থিক লেনদনের কারণে একের পর এক অভিযোগ থাকা সত্যেও সর্বদাই নিরবতা পালন করে আসছে।

এই সুযোগে ফাতেমা রশিদ ক্রমশ: দুর্নীতির শাখা বিস্তার করে চলছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদনে ফাতেমা রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা বেরিয়ে আসে।

এ ব্যপারে তার বক্তব্য নেয়ার জন্য মুঠোফোনে তার সাথে অত্র পত্রিকার সম্পাদক যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদন মিথ্যা ও ভূয়া”। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রফেসর অলিউল্লাহ মো: আজমতগীর স্বাক্ষর করেছেন একথা বললে ফাতেমা রশিদ বলেন,“তিনি মিথ্যা প্রতিবেদন করেছেন”।

দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ শিক্ষা প্রতিষ্টানের টাকা আত্মসাৎ করে বিশালাকারের সম্পদ গড়েছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যপারে অপরাধ বিচিত্রার তদন্ত অব্যহত আছে। আগামি সংখ্যায় বিস্তারিত থাকছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 + sixteen =