চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগ নেত্রীর লিপ্সার শিকার গৃহবধূ !

0
478

অপরাধ বিচিত্রা: চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গার একজন গৃহবধূ (ছদ্মনাম) ঝুমুর। তার অভিযোগ, রাজনীতি সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকলেও ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নাছিমা আক্তারের সাথে দলীয় অনেক প্রোগ্রামে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কখনো ভাবেন নি এই রাজনীতি তাকে ভয়াবহ কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি করবে। তার ভাষ্য মতে, শপিংয়ের কথা বলে নাছিমা তাকে আগ্রাবাদ নিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে আওয়ামীলীগের কথিত এক বড় ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সেখানে নাছিমা তাকে রেখে ফোনে কথা বলার নামে কৌশলে বাহিরে বের হয়ে চলে যায়। পরে ওই কথিত বড় ভাই তাকে সরাসরি কুপ্রস্তাব দেয় এবং টাকারি দিতে চায় তাকে। বহু কষ্টে নিজের সম্ভ্রম বাঁচিয়ে ওই নারী বাড়ি ফিরলেও রাজনীতির প্রতি জন্মেছে তার ঘৃণা। এবার আরেকজন নারীর অভিযোগের কথা শুনবো। রাজনীতির শুরুতেই ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন রিফাত আক্তার। রাজনীতির ময়দানে তিনিও এক ভিন্ন ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, সরলতাকে পুঁজি করে ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নাছিমা আক্তার তার ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছেন তাকে। তার নামে বিভিন্ন ফেইক আইডি খুলে অপপ্রচার চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সংসার বাঁচাতে রাজনীতি থেকে সরে এসেছেন এই নারীও। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন নাছিমা। তিনি বলেন, রাজনীতি থেকে সরে গেছেন রিফাত। আর রিফাতের সাথে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে নগর মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন তিনি। আওয়ামীলীগ নেত্রী নাছিমা কেন তার কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রিফাত আক্তারকে ব্ল্যাকমেইল করলো। এর উত্তর খুঁজতে অনুসন্ধান শুরু করে অপরাধ বিচিত্রা।

অনুসন্ধান বলছে, গত ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখ নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে আদালতে যৌতুকের মামলা করেন কাটগড় এলাকার বাসিন্দা স্বামী আব্দুল ওয়াদুদের নামে। এর দুদিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর স্বামী আব্দুল ওয়াদুদসহ তার পরিবারের ৭ জনের নাম উল্লেখ করে পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ এনে আরেকটি মামলা করেন নাছিমা। আর দুটো মামলাতেই স্বাক্ষী করা হয় ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক এই রিফাত আক্তারকে। এর মধ্যে যৌতুকের মামলার তদন্ত করেন পতেঙ্গা মডেল থানার এসআই মোতালেব হোসেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাদীনি তার স্বাক্ষী রিফাত আক্তারকে হাজির করতে পারেনি। ঘটনার বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা অনুরোধ জানালে রিফাত আক্তার স্বাক্ষী দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। রিফাতের ধারণা, একারণেই হয়তো নাছিমার ক্ষোভ জন্ম নেয় তার প্রতি। এদিকে মামলার পর ওই বছর নভেম্বরের ৬ তারিখ উশৃঙ্খল ও বেপরোয়া চলাফেরার অভিযোগ এনে নাছিমাকে তালাক দেন আব্দুল ওয়াদুদ। যৌতুকের মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বাদী নাছিমা আক্তারের অভিযোগও মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়।

আর নাছিমা আক্তারের পারিবারিক সহিংসতা মামলা থেকেও খালাস দেয়া হয় ওয়াদুদ পরিবারের সদস্যদের। এই মামলায় আব্দুল ওয়াদুদের প্রথম স্ত্রী পারভীন আক্তার ও ছেলেমেয়েসহ তার আপন দুই ভাইকে আসামী করা হয়। বাবার কৃতকর্মের জন্য সৎমায়ের রোষানলের শিকার হলেও দু:খ নেই সন্তানের। বুক ভরা কষ্ট সহ্য করেও কিশোর বয়স পাড়ি দেয়া ওয়াদুদের ছোট ছেলে জব্বার বলছেন, বাবা-মা’কে নিয়ে সুখী জীবন গড়তে চান তিনি।

জব্বারের মা পারভীন আক্তারের দাবি, ওয়াদুদের দ্বিতীয় স্ত্রী নাছিমার কারণে তার মেয়ের সংসার ভেঙেছে। কান্না জড়িত কন্ঠে নাছিমার কঠিন শাস্তি দাবি করেন তিনি। স্বামী ওয়াদুদ দ্বিতীয় বিয়ে করলেও তাকে দোষারোপ করতে নারাজ পারভীন। সন্তানদের নিয়ে শেষ জীবনেও স্বামীর পাশে থাকতে চান তিনি। মামলার অন্য আসামি ওয়াদুদের ভাই আব্দুল হালিম বলেন, ভাই হওয়ার অপরাধে প্রতিনিয়ত হেনস্তার শিকার হচ্ছেন তিনি।

হয়েছেন মামলার আসামিও। আব্দুল হালিমের সাথে কথা বলে আরও কিছু তথ্য মেলে আমাদের। নাছিমার বড় বোন ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সুলতানা রাজিয়ার স্বামী আব্দুল গফুর আর নাছিমার স্বামী আব্দুল ওয়াদুদ আপন দুই ভাই। বিভিন্ন সময় বেড়াতে আসার সুবাদে নাছিমার সম্পর্ক তৈরী হয় বড় বোনের দেবর ওয়াদুদের সাথে। স্ত্রী সন্তান থাকার পরও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা।

আব্দুল ওয়াদুদের সাথে নাছিমার বিয়ের হলফনামার কাগজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৯৫ সালের জানুয়ারির ২৬ তারিখ পঞ্চাশ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন তারা। পরবর্তীতে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হলে নাছিমা স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে দ্বারস্থ হয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল বারেকের। দুপক্ষের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে ভরা মজলিশে আব্দুল বারেক নিরপেক্ষভাবে সমাধানের সিদ্ধান্ত দেন। সেই সময় ভাই-ভাবীর সালিশে পরিবারের সদস্যদের সাথে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল হালিম।

তিনি জানান, হলফনামায় ৫০ হাজার টাকা লেখা থাকলেও বর্তমান সময়ের কথা চিন্তা করে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল বারেক দেনমোহর হিসেবে ২ লক্ষ টাকা দেয়ার অনুরোধ করেন। সালিশে উপস্থিত সবাই এই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মতি প্রকাশ করলেও মানতে নারাজ ছিল নাছিমা। তিনি দেনমোহর হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু আব্দুল বারেক নাছিমার এই অন্যায় আবদারকে সমর্থন না করায় তাকে নিয়েও ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে দাবি করেন হালিম।

এসকল অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই নাছিমার কাছে। নাছিমার দাবি, তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে সবাই। এদিকে নাছিমার আপন দুলাভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও জানালেন তার বেপরোয়া জীবনের কথা। নাছিমার দুলাভাই আব্দুল গফুর বলেন, ‘চেষ্টা করছি ওরে লাইনে আনার জন্য, ভালো করার জন্য চেষ্টা করছি কিন্তু আমি ফেল মারছি বারবার’।

নাছিমার চাচা আব্দুল আজিজ জানান, মেয়েটার (নাছিমা) চরিত্র ভালো নয় বিধায় বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। চাচাতো ভাই পরিচয় দেয়া নাছিমার আত্মীয় মামুন বলেন, ‘প্রায় ৯৮ সালের দিকে উনাকে (নাছিমা) বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এর আগে থেকে উনি (নাছিমা) অনেক উশৃঙ্খল আচরণ করতো, বাড়িতে ড্রিংকস (মদ) করে আসতো।

তারপর বিভিন্ন পোলাপাইন আসতো। উনার আব্বা থাকা অবস্থাতেই উনাকে বের করে দিছে বাড়ি থেকে।’ শুধু পরিবারই নয়,ওয়ার্ডের নারীরাও ক্ষুব্ধ এই নাছিমার প্রতি। তাদের দাবি, রাতের আঁধারে স্বজন প্রীতির মাধ্যমে ৪০ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর এ ধরণের বিতর্কিত কমিটি গঠনে সহযোগিতা করেছে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজাদ।

এদিকে নাছিমা আক্তারের বিচার চেয়ে ও মহিলা আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ওয়ার্ডের নারীরাসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ। এসকল বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, অন্যায় করে কেউই ছাড় পাবে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 + fifteen =