চৈতী নীট কম্পোজিটের বিষাক্ত বর্জ্য থেকে বাঁচার দাবীতে মানববন্ধন

0
782

এম.এ.হাসান: বিএনপি-জামায়তের অর্থের যোগানদাতা চৈতী নীট কম্পোজিট লি: নামে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্য থেকে বাঁচার দাবীতে মানববন্ধন করেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌরবাসী। প্রতিষ্ঠানটি সরকারি খাল দখল নিয়ে গোপন ড্রেন নির্মান করে বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যরে মাধ্যমে দীর্ঘদিন  ধরে খালের পানি সহ পরিবেশের মারাত্মক দুষণ ঘটিয়ে আসছে। এতে পাশর্^বতী ফসলের মাঠে কোন ফসল হচ্ছে না। এই অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে এলাকাবাসী ২৬ জানুয়ারী-২০২১ তারিখে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে অংশগ্রহন করে বোতলে ভর্তি দূষিত পানির নমুনা সহ স্মারকলিপি প্রদান করেন ডিসির কাছে। পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির ব্যানারে আয়োজিত এই মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, শিল্প কারাখানার বর্জ্য পরিশোধন করার আইন থাকলেও সোনারগাঁয়ের চৈতী কম্পোজিট তা না করে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত কালো পানি টিপুরদী এলাকার খালে ফেলছে। খাল হয়ে এই পানি মারীখালী নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে গিয়ে মিশছে। এই দুই নদী সহ আশেপাশের এলাকার পানিও দূষিত হচ্ছে। ফলে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। নদীর মাছ সহ খামারের চাষের মাছও মরে যাচ্ছে। বক্তারা আরো বলেন, পানি পরিশোধনের পরিবর্তে গার্মেন্টের মালিক আবুল কালাম, জিএম মিজানুর রহমান, ডি.জি এম বদরুল এলাকার প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে জোরপূর্বক সরকারি খাল ও প্রবাসীর জমিও দখল করে নিয়েছে। মানববন্ধনে টিপুরদী ও আশেপাশের অন্তত ৩০টি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ নারী পুরুষেরা অংশ নেয়। মানববন্ধন শেষে এই অবস্থার প্রতিকারের দাবীতে জেলা প্রশাসক এর কাছে টিপুরদী এলাকার খালের পানির নমুনা ও স্মারকলিপি দেয়া হয়।

এ সময় বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী শাকিল রানা, বাংলাদেশ পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদ, সহ-সভাপতি বোরহান উদ্দিন খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নূরে আলম জান্নাত ও সাংবাদিক শাহজালাল মিয়া প্রমূখ।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ন ও পরিবেশ নষ্টকারী চৈতী কম্পোজিটের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েও কোন ব্যবস্থা নেয়নি সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নারায়নগঞ্জ ডিসি। সোনারগাঁ উপজেলার টিপরদী এলাকায় অন্যের জমিতে জোরপূর্বক ড্রেন নির্মাণের সত্যতা পেয়ে চৈতি কম্পোজিটের ড্রেন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে বদলি হয়ে যান তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম।

কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তি ও স্থানীয় ক্যাডার বাহিনীর ক্ষমতা বলে স্থানীয় প্রশাসনের ওই নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় চৈতি কম্পোজিট। পরবর্তীতে যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলামের নিকট চৈতী কম্পোজিট লি: এর বিরুদ্ধে জরুরীভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ২৮ জুলাই-২০২০ জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশন নারায়ানগঞ্জ জেলা কমিটি তাদের প্যাডে লিখিত আবেদন করেন।

অত:পর ইউএনও আতিকুল ইসলাম স্বচ্ছতার সাথে চৈতী কম্পোজীটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন, জেল জরিমানাসহ প্রয়োজনে ফ্যাক্টরি সিলাগালা করে দিবেন বলে আশ্বাস দিয়ে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

সুত্রমতে, দীর্ঘদিন যাবত চৈতী কম্পোজিটের বিরুদ্ধে অনিয়ম, জবর-দখল, পরিবেশ নষ্ট করা নিয়ে অভিযোগ ও মানববন্ধন চলছে। বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।  কিন্তু এলাকাবাসী কোন সুফল পাচ্ছে না বিধায় জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশন নারায়ানগঞ্জ জেলা কমিটি চৈতী কম্পোজিট লি: এর বিরুদ্ধে জরুরীভাবে আইনত ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানান।

চৈতী কম্পোজিটের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত শিরোনাম ছিলো এমন-“সোনারগাঁয়ের জমি জবর-দখল করে ময়লা পানি নিস্কাশনের পাইপ স্থাপন, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে জোরপুর্বক ড্রেন নির্মানের কাজ অব্যাহত, সোনারগাঁয়ে চৈতী গ্রুপের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ও জোড়পূর্বক নীরিহ কৃষকের জমি দখলের অভিযোগ, বিষাক্ত বর্জ্য ও দুষিত পানি দিয়ে পরিবেশ নষ্ট,

চৈতী কম্পোজিটের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, চৈতী কম্পোজিট থেকে নির্গত বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন, প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে জোরপুর্বক ড্রেন নির্মান ও পরিবেশ দুষন করছে চোইতী কম্পোজিট, চৈতি কম্পোজিটের বর্জ্যে পরিবেশ বিপর্যয়, সোনারগাঁয়ের জমি জবর-দখল করে ময়লা পানি নিস্কাশনের পাইপ লাইন স্থাপন, সোনারগাঁয়ে চাকুরীচুত্যের ভয় দেখিয়ে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করছে চৈতি কম্পোজিট, সোনারগাঁওয়ের চৈতী কম্পোজিটের বর্জ্যে মাছের খামারীর কোটি টাকার ক্ষতি, চৈতী কম্পোজিটের বিষাক্ত বর্জ্যে ভাসছে মাছ,

চৈতী কম্পোজিটের বিষাক্ত বর্জ্যের পানিতে ভাসছে খামারীদের মাছ, সোনারগায়ে কৃষকের জমি দখলের অভিযোগ চৈতী কম্পোজিটের বিরুদ্ধে, সোনারগাঁয়ে চৈতী কম্পোজিটের নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে লড়াই, চৈতী কম্পোজিটে হাজার শ্রমিকের বাধ্যতামুলক ছুটি প্রদান, সোনারগাওয়ে চৈতি কম্পোজিটের বিষাক্ত বর্জ্যে ৫০ হাজার মানুষের জীবন ঝুঁকিতে, ফের এলাকাবাসীর জমি দখলের অভিযোগ চৈতী গ্রুপের বিরুদ্ধে,

সোনারগাঁয়ে চৈতী গ্রুপের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে ৫ জন গুলিবিদ্ধ, অবৈধভাবে অন্যের জমির উপর ডাইংয়ের দুষিত পানি নিষ্কাশনের পাইপ বসিয়েছে চৈতী গ্রুপ, চৈতি কম্পোজিটের বর্জ্যে পরিবেশ বিপর্যস্ত, এমপি খোকার নিকট ইটালী প্রবাসীর আহবান; চৈতি কম্পোজিট বন্ধ করুন।”

ভুক্তভোগী সাদিয়া নাসরিন বলে, “চৈতী গ্রুপের অনিয়মের ঘটনাগুলো সোনারগাঁবাসী সহ দেশবাসী জানে। এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাও এসে দেখেছেন গভীর সুড়ঙ্গ দিয়ে বিষাক্ত বর্জ্য ও দুষিত পানি খালে ফেলেছে চৈতী কম্পোজিট। আমরা স্বচ্ছ বিচার চাই। স্বাস্থ্য বান্ধব পরিবেশ চাই, অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই”।

নারায়ণগঞ্জ জেলার পরিবেশ ইন্সপেক্টর মইনুল ইসলাম বলেন,“করোনার মধ্যে আমরা বাহিরে খুব কম অভিযান চালাচ্ছি, আর চৈতীর  ইটিভি প্ল্যান্ট আছে কিন্তু পানির কালার ঠিক মত পরিস্কার করা হয়না। আমরা তাদেরকে ইটিভির প্যারা মটার ঠিক না থাকায় কয়েকবারে ৫০/৬০ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। আপনার কাছ থেকে যেহেতু জানলাম পারলাম, তাই আবার অভিযান পরিচালনা করব। আউটডোর থেকে পানি এনে পরীক্ষা করব। প্রয়োজনে আপনারা অভিযোগ করলে অভিযানে আপনারাও সাথে যেতে পারবেন। তবে বাস্তবতা হল, তারা দিনে কাজ বন্ধ রাখে কিন্তু রাতের আঁধারে কাজ করে।”

সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন,“আমি বিষয়টি শুনেছি, তবে ফ্যাক্টরি বন্ধ করলে হাজার হাজার স্থানীয় শ্রমিক না খেয়ে মরবে।” “তবে পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের একটি ইটিভি প্ল্যান্ট আছে, মাঝে মাঝে তারা এটা বন্ধ রাখে বলেই দুষিত পানি দিয়ে পরিবেশ নষ্ট হয়। আমি বিষয়টা দেখব।”

স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে চৈতী কম্পোজিটের আমন্ত্রনে তার ভোজন বিলাশের খবর পাওয়া গেছে। এটা নিয়েও ভুক্তভোগিদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।

জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবেদন করলেও সোনারগাঁ ইউএনও আতিকুল ইসলাম কোন ব্যবস্থা নেয়নি। নারায়ণগঞ্জ ডিসিকে অনুলিপি দেয়া হয়েছে, হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ দেয়া হয়েছে চৈতীর বিরুদ্ধে। ইউএনও আইনগত কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ডিসি জসিম উদ্দীন মেসেজের কোন জবাব দেয়নি। কোন অদৃশ্য কারনে সোনারগাঁ ইউএনও ও ডিসি জসিম উদ্দীন চৈতীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? তাই এলাকাবাসী উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

এ ব্যাপারে চৈতী কম্পোজিট লি: এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty + 9 =