ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় হুন্ডিব্যবসায়ী ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন গ্রেপ্তার

0
547

স্টাফ রিপোর্টার: ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় নবীনগর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অন্তত ৭ কোটি টাকার অবৈধ হুন্ডি লেনদেন করার কারনে গ্রেপ্তারপূর্বক আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। মামুন দীর্ঘ দিন ধরে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে হুন্ডির ব্যবসা চালিয়ে আসছিলো। নিজের পারসোনাল বিকাশ নাম্বার থেকে অস্বাভাবিক হারে হুন্ডি ক্যাশইন করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের সুত্রধরে সিআইডির একটি টিম ১৯ নভেম্বর-২০২০ তাকে গ্রেপ্তার করে নবীনগর থানায় মামলা দায়ে করে। তথ্যসুত্রে জানা গেছে, নবীনগর থানাধীন বগডগর গ্রামের মো: জহিরুদ্দিনের পুত্র, থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন তার পারসোনাল বিকাশ নাম্বার-০১৯১০০৬২২৯ এর মাধ্যমে ১৮আগষ্ট-২০১৫ হতে ৩০ নভেম্বর-২০১৬ তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার অন্তত ৭ কোটি টাকা ক্যাশইন করে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এলে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ০৩,০৫.০০১.১৭. ০১২৬/২০১৭-২৫৬৯, তাং-১৪/০৯/২০১৭ তারিখের স্মারকমূলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট হতে অর্গানাইজড ক্রাইম, সিআইডি, ঢাকাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। সিআইডির উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো: আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি টিম দীর্ঘদিন অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষে ২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর হুন্ডি ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।

সিআইডির উপ পুলিশ পরিদর্শক মো: আসাদুজ্জামান জানান, নবীনগর বাজারের চিশতিয়া ট্রেডার্সের মালিক, থানা ছাত্রলীগের সভাপতি অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ মোতাবেক অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করি।

অনুসন্ধানকালে বিএফআইইউ ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রেরিত উল্লিখিত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখতে পাই, ১৮আগষ্ট-২০১৫ হতে ২৯ নভেম্বর-২০১৬ তারিখ পর্যন্ত আলোচ্য বিকাশ নাম্বার ০১৯১০০৯৬২২৯ এর মাধ্যমে প্রায় ৯৯.৮৪ % ক্যাশইন হয়েছে। অর্থাৎ উক্ত এজেন্ট নাম্বারের এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে মোট ৬কোটি ১৯ লক্ষ ৭১হাজার ৪শ ৫৬ টাকা ক্যাশইন করা হয়েছে।

কিন্তু তৎসময়ে মাত্র ২৩বারে ক্যাশআউট করা হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭শ টাকা। যা ক্যাশইনের তুলনায় খুবই নগন্য। বিকাশ হতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। বেশীর ভাগ পার্সোনাল বিকাশ নম্বরে ক্যাশইন হওয়ার অল্প সময়ের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন জেলার দুরবর্তী স্থানে ক্যাশ আউট হতে দেখা যায়, যা স্বাভাবিকভাবে সম্ভব নয়।

অনুসন্ধানকালে অভিযুক্তের বিকাশ এজেন্ট নম্বর-০১৯১০০৯৬২২৯ এর (কেওয়াইসি) ফরম, লেনদেনের তথ্য ও উক্ত নম্বর হতে ক্যাশইন করা হয়েছে এমন কিছু নম্বরের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর পর্যবেক্ষণও করা হয়। কেওয়াইসি ফরমটি আব্দুল্লাহ আল মামুন, এনআইডি- ১৯৮৯১২১৮৫৬২৮৮৮০৯৮, পিতা-মো: জহির উদ্দিন, মাতা-হোসনে আরা বেগম, গ্রাম-বগডহর ডাকঘর- নবীনগর-৩৪১০, থানা-নবীনগর, জেলা-ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা-মেসার্স চিশতীয়া ট্রেডার্স, গ্রাম-বগডহর, ডাকঘর-নবীনগর-৩৪১০, থানা-নবীনগর, জেলা-ব্রাক্ষণবাড়িয়া  নামে পাওয়া যায়।

ক্যাশইন হওয়া পার্সোনাল বিকাশ নম্বরের কয়েকজন মালিকের সাথে  যোগাযোগ করে ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় যে, তাদের অনেক আত্মীয়স্বজন সৌদি আরবে বসবাস করেন। সেখান থেকে তারা বাংলাদেশে তাদের পরিবারের খরচের জন্য সৌদি আরবের রিয়াদের কয়েকজন বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায়ীকে সৌদি রিয়াল দিতেন। পরে তারা বাংলাদেশে তাদের বিকাশ এজেন্ট নম্বর-০১৯১০৯৬২২৯ হতে তাদের পারসোনাল বিকাশ একাউন্ট নম্বরে উক্ত টাকা ক্যাশইন করতেন।

পারসোনাল বিকাশ নম্বরের মালিকদের তাদের ক্যাশইন করা বিকাশ এজেন্ট  নম্বর ০১৯১০১৯৬২২৯ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা উক্ত এজেন্টকে চেনেনা বলে জানায়। উক্ত নম্বরটির মালিক বা ব্যবহারকারী কে, তাও তারা জানেনা বলে জানায়। সিআইডি কর্মকর্তা আরো বলেন, অনুসন্ধানে প্রাপ্ত সকল তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমান বিশ্লেষন করে দেখা যায়, বিকাশ লি: তথা বিকাশের কোন এজেন্টের সরাসরি রেমিট্যান্স এর টাকা দেশে আনার কোন বৈধতা নেই ।

সুতরাং উল্লেখিত এজেন্ট নম্বর ০১৯১০০৯৬২২৯ এর ব্যবহারকারী আব্দল্লাহ আল মামুন হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে রেমিটেন্সের টাকা দেশে স্থানান্তর করেছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই তাহার এরূপ অবৈধ আর্থিক কার্যক্রম মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ২ (শ) (১৪) ধারা অনুযায়ী “দেশী ও বিদেশী মদ্রা পাচার” এর পর্যায়ভূক্ত যা উল্লিখিত আইনের ৪ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 4 =