মতিঝিলে কাউন্সিলর মোজাম্মেল ও টোকাই নুরুর ময়লা বানিজ্য

0
619

স্টাফ রিপোর্টার: দুর্নীতি দমন কমিশন সহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট অভিযোগ দিয়েও বন্ধ করা যাচ্ছে না মতিঝিলের গডফাদারখ্যাত কাউন্সিলর মোজাম্মেল সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজি। অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগে কোন স্থান পাবে না এমন কথা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েক হাজার বারে বললেও ক্যাসিনো খালেদের শিষ্য মতিঝিল এলাকায় এক সময়ের টোকাই, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম চৌধুরী নুরু ওরফে টোকাই নুরু ঠিকই যুবলীগে স্থান করে নিয়েছেন। যুবলীগের কমিটি হলে নুরু হবেন দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এমনটা শোনা যাচ্ছে জোড়েশোড়ে। ক্যাসিনো খালেদের হাত ধরে টোকাই নুরুর বিএনপির রাজনীতিতে আর্বিভাব, সেই সুবাধে ৯নং ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি। কিন্তু সময়ে বিবর্তনে খোলস পাল্টিয়ে গুরু-শিষ্য দুজনেই হয়েছেন লেবাসধারী আওয়ামীলীগার। খালেদ-মমিনুল হক সাঈদ-জিকে শামীমদের নিয়ন্ত্রনে মতিঝিলে রামরাজত্ব তৈরি করেন নুরু বাহিনী। ক্যাসিনোকান্ডে খালেদ-মমিনুল হক সাঈদ-জিকে শামীমরা ধসে গেলেও নুরু থেকে যান অধরা। ২০২০ সালের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বহিস্কৃত কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ এর স্ত্রীকে ভোট না দিয়ে, নুরু ভোট দেন দেওয়ানবাগীর ভক্ত মোজাম্মেল হককে। শুধু ভোটই নয়, মোজাম্মেলকে কাউন্সিলর বানাতে কোটি টাকা ডোনেট করেন টোকাই নুরু এমনটাই শোনা গেছে ভোটাদের মুখে। কারন একটাই হালুয়া রুটির ভাগাভাগি নিয়ন্ত্রনে রাখা। আর এখন মোজাম্মেলের নিয়ন্ত্রনেই ছুটে চলছে নুরুর অপকর্মের পাগলা ঘোড়া। ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়, সরকারী বেসরকারী জায়গা দখল করে দোকান বসিয়ে অন্যের কাছে বিক্রি ও ভাড়া প্রদান, ময়লা বানিজ্য, নিরাপত্তা বানিজ্য, পানি ও বিদ্যুতের মতো সরকারী সম্পদ চুরি করে বিক্রি,

মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার প্রদান সহ সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমে মাসে কোটি টাকার উপরে চাঁদা আদায় করেন নুরু বাহিনী। তবে এই টাকা নুরু একা ভোগ করতে পারেনা। এই টাকার ভাগ স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় লোকজন সহ নুরুর অধিনস্ত লাইনম্যান থেকে শুরু করে শেল্টারদাতা কাউন্সিলর মোজাম্মেল হয়ে আরো উপর লেভেল পর্যন্ত পৌছায় বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

তবে গুরু-শিষ্য, আওয়ামীলীগ-বিএনপি, যে যাই বলুক না কেন, মুলত টাকার ভাগবাটোয়ারা হাতিয়ে নিতেই একজন আরেকজনকে দাবারগুটি হিসেবে ব্যবহার করেন মাত্র। কাউন্সিলর সিন্ডিকেটের এসব চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য দুদক চেয়ারম্যান সহ স্বরাষ্টমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। এরমধ্যে ময়লা বানিজ্য অন্যতম। ফুটপাতের দোকনগুলো থেকে ময়লার বিল বাবদ মাসিক ৬শ টাকা হারে চাঁদা আদায় অতীতের সব চাঁদাবাজীর রেকর্ডই ভঙ্গ করেছে মোজা-নুরু সিন্ডিকেট।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাসা-বাড়ী/ফ্ল্যাট প্রতি মাসিক ১শ টাকা আর মার্কেটের দোকান প্রতি মাসিক ৩০ টাকা হারে আদায় করার শর্তে দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের কোষাগারে ১২ লাখ টাকা জমা দিয়ে এসডি মিশনের নামে ঠিকাদার মান্নান হাওলাদার ৯নং ওয়ার্ডের বর্জ্য পরিষ্কারের অনুমোদন পায়।

কিন্তু কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক এই কাজটি নিজের দখলে রাখার জন্য তার সিন্ডিকেটের সদস্য আওয়ামীলীগের অনুপ্রবেশকারী মতিঝিল ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম চৌধুরী নুরু ওরফে টোকাই নুরুর নামে আনার জন্য জোড় তদ্বির চালায় মেয়র তাপস সাহেবের কার্যালয়ে। কিন্তু টোকাই নুরু বিএনপি থেকে যুবলীগে অনুপ্রবেশকারী হওয়া কাউন্সিলরের সেই চেষ্টা চরমভাবে ব্যর্থ হয়।

অত:পর কৌশল পরিবর্তন করে মোজাম্মেল ৬০ লাখ টাকার বিনিময়ে ঠিকাদার মান্নানের নিকট থেকে নুরু, খোকন ও সালাউদ্দিন রতনের কাছে এটাকে সাব-ক্রয় করায়। বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারী এই খোকনের নাম ১০%, বিএনপি সর্মথক রতন মেটালের মালিক সালাউদ্দিন রতনের নামে ১০% এবং বাকী ৮০% থাকে নুরু ও মোজাম্মেলের নিয়ন্ত্রনে। যদিও বর্জ্য পরিষ্কারের কাজ যেই ঠিকাদার পাবে, তাকেই সেই কাজ করতে হবে, তানাহলে চুক্তি বাতিল বলে গন্য হওয়ার বিধান রয়েছে।

কিন্তু বর্জ্য বানিজ্য থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আদায় করা হবে বলেই কাউন্সিলর মোজাম্মেল এটা হাত ছাড়া করেননি। কারন ৯নং ওয়ার্ডে সব মিলিয়ে ২০ হাজারের অধিক পরিবার বা পয়েন্টে রয়েছে। যারা কমপক্ষে ১শ টাকার বিনিময়ে তা নুরু বাহিনীর মাধ্যমে তাদের বর্জ্য-ময়লা পরিষ্কার করে থাকেন। সুতরাং এই খাত থেকে নুর বাহিনী সিটি কর্পোরেশনের নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র জোড়জবস্তি, দাঙ্গা-হাঙ্গমা চালিয়ে বছরে অন্তত সাড়ে ৩ কোটি টাকা উপরে আদায় করবে এমনটাই শোনা যাচ্ছে। কারন ফ্ল্যাট প্রতি বর্জ্যরে রেট ১শ থেকে ৫শ আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রেট ৫শ থেকে ১হাজার টাকা পর্যন্ত।

এখন আবার নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। ৯নং ওয়ার্ডের জুড়ে ফুটপাতের অন্তত ১৫ হাজার মতো হকারের দোকান রয়েছে। প্রতি দোকান থেকে বর্জ্য বিল বাবদ আদায় করা হচ্ছে দৈনিক ২০ টাকা হারে মাসে ৫শ। কিন্তু এই ২০ টাকার জন্য কোন রশিদ দেয়া হয় না। জানতে চাইলে নুরুর লোকেরা বলেন, তারা সিটি কর্পোরেশন থেকে বর্জ্য পরিষ্কারের টেন্ডার পেয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জিজ্ঞেস করলে জানায়, বর্জ্যব্যবস্থাপনার নামে ফুটপাত থেকে টাকা উঠানোর কোন টেন্ডার হয় নাই। চলবে…..।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three + 11 =