বিষাক্ত পলিথিনে বিষিয়ে উঠছে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ

0
557

অতিমাত্রায় পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহারের কারণে ক্যান্সারসহ নানা রোগ-ব্যাধি বাসা বাঁধছে মানুষের শরীরে। এ জন্য চিকিৎসায় ব্যয় হচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। চিকিৎসায়ও মিলছে না প্রতিকার। সবশেষ পরিণতি অকাল মৃত্যু। অন্যদিকে মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশকে রক্ষা করতে পলিথিন ও ওয়ান টাইম প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন পরিবেশবাদীরা।

বিশ্বব্যাপী পলিথিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। অনেক দেশ আইন করে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে স্থলের পর এবার সাগর-মহাসাগরকে বিষিয়ে তোলা হচ্ছে বিষাক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহার করে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত কিংবা সেন্টমার্টিন সৈকতে দেখা মিলছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল।

যদিও পলিথিন-প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সৈকতে প্রচারপত্র রয়েছে, কিন্তু এতে ভ্রূক্ষেপ নেই কারও। যত্রতত্র যেখানে সেখানে ফেলে রাখা হয় পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল। এতে পানি দূষিত হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে পরিবেশ। স্থানীয় কিংবা পর্যটকদের কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে কুড়িয়ে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনেও ফেলছেন। অল্প কয়েকজনের ভালো উদ্যোগের চেয়ে পরিবেশের ক্ষতি করে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) প্রকাশিত তথ্যমতে, শুধু রাজধানী ঢাকায়ই দিনে প্রায় ২ কোটি পলিথিন ব্যাগ জমা হচ্ছে। বিশ্বে প্রতি বছর ব্যবহার হচ্ছে পাঁচ লাখ কোটি পলিথিন। এর ক্ষতির কথা ভেবে দেশে ২০০২ সালে প্রথম পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়। প্রাণ ও পরিবেশ বাঁচাতে শাস্তির বিধান রেখে আইন করা হয়। বিকল্প হিসেবে ব্যবহার শুরু হয় কাগজের ঠোঙা। আইনের প্রয়োগ না থাকায় পলিথিনের উৎপাদন ও বিক্রি থামানো যায়নি, কিছুদিন পর ফের বাজার ছেয়ে যায় পলিথিনে।

স্থলভাগে পলিথিনের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়ার পর এখন পানি বিষাক্ত করছে একশ্রেণির মানুষ। সাগরে ফেলা তাদের পলিথিন গিলে নিচ্ছে অনেক সামুদ্রিক প্রাণী। এতে হুমকিতে পড়ছে সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গেলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে পানির বোতল ও পলিথিন। এটি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় সেন্টমার্টিনে। প্রতিদিনের জোয়ারের পানি থেকে ভেসে আসা পলিথিন ক্ষতি করছে মাছের পাশাপাশি বৃক্ষেরও। জোয়ারের পর ভাটার সাথে সাগরের পানি নেমে গেলেও পলিথিন ও বোতলগুলো আটকে যায় কেয়া বনের মাঝে। প্রতিদিনই এভাবে জমা হচ্ছে পলিথিন, ক্ষতি করছে পরিবেশের।

এখানে আগত অনেক পর্যটককে কেয়া বন থেকে পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে দেখা যায়। তাদের একজন কলেজছাত্র হাবিব। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন আমাদের প্রকৃতি থেকে পাওয়া উপহার। এটাকে আমরা নষ্ট হতে দিতে পারি না। আমি যতটা পারছি এগুলো কুড়িয়ে একটা স্থানে ফেলছি। এটা হয়তো অন্যরা দেখে আর যত্রতত্র ফেলে রাখবে না, সচেতন হবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিথিন ব্যবহারের ফলে সাগরে থাকা প্রাণ বা পরিবেশকে শুধু হুমকিতে ফেলছে না, এটা মানবদেহের হরমোন বাধাগ্রস্ত করে। বন্ধ্যাত্বসহ গর্ভবতী মায়ের ভ্রণ নষ্ট এবং কিডনি বিকল করে দিতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিক সাগর-নদীর তলদেশে জমা হওয়ায় মাটি, পানি, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও সামুদ্রিক প্রাণীর ক্ষতি করছে। যেসব প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহারের অনুপযোগী তা মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ করে। পলিথিন-প্লাস্টিক বিসফেনল-এ তৈরি করে, এটা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। হোটেলগুলোতে দেদারছে পলিথিনের ব্যবহার হচ্ছে এবং ব্যবহারের পর সেগুলো যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়ছে পরিবেশ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × 3 =