রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়েই চলতো জীবন। থাকতেন রাজশাহী শহরে। রিকশার চাকা থামিয়ে শুরু করলেন বালুর ব্যবসা। বালুর পর একে একে করলেন পাথর, রড ও সিমেন্টের ব্যবসা। তারপর নাম লেখালেন ঠিকাদারীতে।
এ পর্যন্ত গল্পটা যেন সিনেমা’র হিরোর মতোই। কিন্তু এরপরই এরশাদ আলী খলনায়কের মতো শুরু করেন ব্যাংকের ঋণ জা’লিয়া’তি। এক সময়ের রিকশাচালক বনে যান শত শত কোটি টাকার মালিক।
কাগুজে প্রতিষ্ঠান এরশাদ গ্রুপের নামে আরব বাংলাদেশ ব্যাংকের (এবি ব্যাংক) একটি শাখা থেকেই তিনি নিলেন ১১৪ কোটি টাকা। যা সুদ-আ’সলে ১৫৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ওই ঋণ তিনি নেন পদ্মা রেলসেতু প্রকল্পে পাথর সরবরাহের ওয়ার্ক অর্ডারের ভু’য়া কাগজ দেখিয়ে। ধাপে ধাপে ওই টাকা আ’ত্মসাৎ করে লা’পাত্তা হয়ে গে’লেন তিনি। দু’র্নী’তি দমন কমি’শনের (দুদক) খাতায় ফেরারি এরশাদ আলীকে খুঁ’জছে সংস্থাটির অনুস’ন্ধান টিম। তার বি’’রুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকা আ’ত্মসাতের অ’ভিযো’গে এই অনুস’ন্ধান।
এরই মধ্যে দু’র্নী’তি ও আ’ত্মসাতের প্র’মাণ পাওয়ায় এবি ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ১৭ ক’র্মক’র্তার বি’রু’দ্ধে মা’ম’লার প্র’স্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে দুদক কমি’শনার (ত’দন্ত) এ এফ এম আমিনুল ই’সলাম বলেন,
এরশাদ আলীসহ পাঁচ সহযোগী মিলে পদ্মা ব্রিজে’র রেল সেতু প্রকল্পের ভু’য়া ওয়ার্ক অর্ডার দেখিয়ে এবি ব্যাংকের কাকরাইল শাখা থেকে ১১৪ কোটি টাকা উত্তোলন করে আ’ত্মসাৎ ক’রেছেন।
যা সুদ-আ’সলে ১৫৪ কোটি টাকায় দাঁ’ড়িয়েছে। অনুস’ন্ধান ক’র্মক’র্তা প্র’তিবেদন জমা দিয়েছেন। আম’রা তা যাচাই-বাছাই করে দেখে সিদ্ধা’ন্ত নিবো। অনুস’ন্ধান ক’র্মক’র্তা সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের সুপারিশে যাদের বি’রুদ্ধে অ’ভি’যোগ আনা হয়েছে
তারা হলেন- এরশাদ ব্রাদার্স কর্পোরেশনের মালিক এরশাদ আলী, এবি ব্যাংকের সাবেক এমডি মসিউর রহমান চৌধুরী ও শামীম আহমেদ চৌধুরী, ইভিপি এবং হেড অব সিআরএম ওয়াসিকা আফরোজী,
ভিপি এবং সিএমআর সদস্য মুফতি মুস্তাফিজুর রহমান (স্বপন), সাবেক এসইভিপি এবং হেড অব সিআরএম সালমা আক্তার, এভিপি ও সিআরএম সদস্য এমা’রত হোসেন ফরিক, সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার তৌহিদুল ই’সলাম,
এসভিপি ও সিআরএম সদস্য শামীম-এ-মোরশেদ, ভিপি ও সিআরএম সদস্য খন্দকার রাশেদ আনোয়ার, এভিপি ও সিআরএম সদস্য সিরাজুল ই’সলাম, সাবেক ভিপি ও ক্রেডিট কমিটির সদস্য মাহফুজ-উল-ই’সলাম।
আর এবি ব্যাংকের কাকরাইল শাখার ই’সলামী ব্যাংকিং বিভাগের সাবেক ইভিপি ও শাখা ম্যানেজার এ.বি.এম আব্দুস সাত্তার, সাবেক এভিপি ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার আব্দুর রহিম, বর্তমান এসভিপি ও সাবেক রিলেশনশিপ ম্যানেজার আনিসুর রহমান, ভিপি শহিদুল ই’সলাম ও এভিপি রুহুল আমিন।
দুদকের অনুস’ন্ধান প্র’তিবেদন বলছে, এরশাদ ব্রাদার্স পদ্মা রেলসেতু প্রকল্পে পাথর সরবরাহের ওয়ার্ক অর্ডার দেখিয়ে ১১৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়। কাকরাইলের এবি ব্যাংকের ই’সলামী ব্যাংকিং শাখা থেকে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৬ ধাপে এ ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এরশাদ আলীকে ওয়ার্ক অর্ডারসহ সংশ্লি’ষ্ট কাগজপত্র কোনো রকম যাচাই-বাচাই ছাড়াই এ ঋণ দেওয়া হয়। ঋণ দেন এবি ব্যাংকের কাকরাইল ই’সলামী ব্যাংকিং শাখার সাবেক ম্যানেজার এবিএম আব্দুস সাত্তারসহ ৫ ক’র্মক’র্তা।
প্র’তিবেদন বলছে, বিশাল অঙ্কের এ ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের তদারকি ঘা’ট’তি ছিল। ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করে যথাযথভাবে যাচাই না করে এর বিপরীতে কাকরাইল শাখা থেকে ৭টি ব্যাংক গ্যারান্টি প্র’স্তুত করা হয়। এরপর এবি ব্যাংক থেকে ধাপে
ধাপে ১১৪ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা হয়। যা বর্তমানে সুদ-আ’সলে দাঁ’ড়িয়েছে ১৫৪ কোটি টাকায়। রিকশাচালক থেকে ব্যবসায়ী বনে যাওয়া এরশাদ আলী চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লা’পাত্তা হয়েছেন বলে অ’ভিযো’গ।
অ’ভিযো’গ রয়েছে এরশাদ আলী এবি ব্যাংক ছাড়াও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমা’র্স ব্যাংকের ৮৭ কোটি, ফিনিক্স ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ২৯ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংকের ১৫ কোটি এবং সাউথইস্ট ব্যাংকের ৬ কোটি টাকা নিয়ে লা’পাত্তা হয়েছেন।
সামর্থ্য যাচাই না করেই তার এ ব্যবসায় কোটি কোটি টাকা ঋণ ঢেলেছে এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালে এরশাদ আলীর বি’রুদ্ধে অনুস’ন্ধানে নামে দুদক।
দুদক পরিচালক শেখ মোহাম্ম’দ ফানাফিল্লাহর নেতৃত্বে একটি টিমকে অনুস’ন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অনুস’ন্ধানের জন্য পাঁচ প্রতিষ্ঠানের ৫০ জনের বেশি ক’র্মক’র্তাকে জি’জ্ঞাসাবা’দ করেছে দু’দক। তথ্যসূত্র: ভিউয়ার বাংলাদেশ