কেরাণীগঞ্জে প্রতারিত ব্যক্তির নামেই প্রতারকের মামলা!

0
548

তৌহিদুর রহমানঃ
ঢাকার কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার সোনাকান্দা গ্রামে এক মহিলা প্রতারক ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারিত ব্যক্তির নামেই মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে উল্টো হয়রানী করছে। বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী (কেরাণীগঞ্জ) আদালতে সি.আর মামলা নং-৭৫/২০২০। তবে আদালত ২১জানুয়ারী-২০২১ বিবাদীকে স্ব-শরীরে হাজির থাকতে ২২নভেম্বর-২০২০ তারিখে সমন জারি করে। যার স্মরক নং-১৪৮৪। মামলার আরজিতে ওই প্রতারকের নাম মারুফা আক্তার সোনিয়া। তবে জাতীয় পরিচয় পত্রে তার নাম মারুফা আক্তার। সে সোনাকান্দা গ্রামের ডি এম আলী আজগরের স্ত্রী। প্রতারিত ব্যক্তি হলেন একই গ্রামের আয়নাল আবেদীনের স্ত্রী মাকসুদা বেগম।

প্রাপ্তসূত্রে জানা গেছে, উভয়েই পরস্পরের প্রতিবেশী। অসৎ উদ্দেশ্যে সফল করতে সম্পর্কের বন্ধন শক্ত করে ধুরন্দর সোনিয়া। ২০১৬সালের ফেব্রæয়ারীতে সাদা-মাঠা, সোজা সরল মাকসুদাকে টার্গেট করে। প্রথমত ৩ দিনের প্রতিশ্রæতিতে ধার হিসেবে ৫০ হাজার টাকা নেয় সোনিয়া। এপর সোনিয়া মাকসুদাকে প্রতারণার নতুন-নতুন ফাঁদে ফেলতে শুরু করে। কখনও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১ কোটি টাকা তুলে সমান ভাগ করে নিবে, কখনও ওই ব্যাংকে সোনিয়ার ঋনের দলীল তার নামে এভিডেভিট করে দিবে, আবার কখনোও তার জ্বাল-জ্বালিয়াতি ডিবি পুলিশের কাছে ধরা পড়ে গেছে, এখন ২জনই পুলিশের কাছে ধরা পড়বেন এমন ভয়-ভীতি দেখিয়ে, এছাড়া ১ কোটি টাকা মূল্যের ফ্লাট নামমাত্র ১৫ লাখ টাকায় কিনে দিচ্ছেন বলে মিথ্যা প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে পর্যায়ক্রমে সোনিয়া তার থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। এসব টাকা মাকসুদা তার বড় ভাই বিল্লালের নিকট থেকে ২ লাখ, তার মেঝ ভাবী (আওয়ালের স্ত্রী) থেকে ১ লাখ, বড় মেয়ে শারমিন থেকে ২ লাখ, ছোট মেয়ে রেশমার গয়না বন্ধক রেখে ১ লাখ, ছোট বোন ডলী থেকে ২ লাখ, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি ভাইদের কাছে বিক্রি করে ৩ লাখ, খালাত ভাই ফোরকান থেকে ৫০ হাজার, ভাগ্নে রোস্তম থেকে ৫০ হাজার। এভাবে ধার-দেনা করিয়ে ৪ মাসে সুচতুর সোনিয়া সরল বিশ্বাসী মাকসুদার থেকে সর্বমোট ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ৩০ জানুয়ারী-২০২০ সন্ধ্যায় এভাবে প্রতারণার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মাকসুদা। ২০১৬ সালের জুন মাসে দেনাদারদের চাপে দিশেহারা হয় মাকসুদা। মাকসুদা এবার পাওনা টাকা তুলতে সোনিয়ার বাড়ীতে দৌড়-ঝাপ শুরু করে। একদিকে বোনের সংসার আর একদিকে মেয়ের সংসার এই টাকার জন্য ভাঙ্গতে বসেছে। তাদের স্বামী-সংসার বাঁচাতে পাওনা ১২ লাখ টাকার মধ্যে মাত্র ৪ লাখ টাকা নিতে শত চেষ্টা করেও তাদের মন গলাতে পারেনি। প্রাচীন লোকের মত সহজ সরল মাকসুদার হাতে দালিলীক কোন প্রমান না থাকায় এক পর্যায়ে সোনিয়া ও তার স্বামী কোন টাকাই দিতে পারবে না বলে সাব জানিয়ে দেয়। এরপর টাকার শোকে চোখের জ্বলে ভাসতে থাকে মাকসুদা। এর মধ্যে স্বামী, সন্তান ও নিকট আত্মীয়রা অনেকেই জেনে যায় এ ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাকসুদার অভিযোগের ভিত্তিতে রুহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদে বিচারও বসেছে। কিন্তু তাতেও কোন সুরাহা হয়নি। ওই বিচারে সুচতুর সোনিয়া ও তার পরিবারবর্গ মাকসুদা থেকে ১২ লাখ টাকা প্রতারনার কথা অস্বীকার করে এবং উল্টা পাওনা ৪ লাখ টাকা তার কাছে পাবেন বলে দাবী করে। তবে এসব দাবীর স্বপক্ষে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ না থাকায় স্থানীয় বিচারকগনও কোন রায় দিতে পারেননি। ওই বিচারকদের মধ্যে রুহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলী, ওই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ এর সভাপতি সোলাইমান, ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মতিন, ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার এম এ মতি, হাজী গফুর মেম্বারের ছেলে মুজিবর, জলিল ব্যাপারীর ছেলে বাদশাসহ অনেকে ছিলেন। এ বিচারিক বিষয়ে মেম্বার মতিন জানান, আমরা উভয়ের অভিযোগ শুনেছি, তবে উপর্যুক্ত স্বাক্ষ্য প্রমানের অভাবে আমরা কোন সমাধান দিতে পারিনি। আয়নাল এর স্ত্রী থেকে সোনিয়া টাকা নিযেছে সত্য কিন্তু স্বপক্ষে কোন দালিলীক প্রমান নেই। তাছাড়া সোনিয়া মাকসুদার কাছে যে ৪ লাখ টাকা পাওনা দাবী করছে তারও কোন সুনির্দিষ্ট প্রমান নেই। এর স্বপক্ষে একটি মোবাইল অডিও রেকর্ড উপস্থাপন করলেও মাকসুদা তার পাওনা টাকা চাইছে না, ঋন হিসেবে চাইছে তা সুনির্দিষ্ট নয়। স্থানীয় হাজী গফুর মেম্বার এর ছেলে মুজিবর জানান, আয়নাল ডাক্তারের স্ত্রী মাকসুদা’র সম্পর্কে কখনোও কোন বদনাম শুনিনি। তবে আজগর আলী’র পরিবারের অনেক কুর্কীতি শুনেছি। তারা এলাকায় টিকে থাকার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী লোক টার্গেট করে আত্মীয় পাতায়। অপরদিকে জলিল বেপারীর ছেলে বাদশাহ বলেন, আজগর ও তার স্ত্রীর অতীত কর্মফল ভালো না। তাদের সম্পর্কে অনেক দুর্নাম-বদনাম আছে। আজগর নিজেই একটি মোবাইল চুরি করে ধরা পড়ে জরিমানাও দিয়েছে। মোবারক মাষ্টারের ছেলে নুরুল হুদা মাষ্টারও একই কথা জানান। ভুক্তভোগী আলফাজ উদ্দিনের ছেলে জামাল জানায়, কুয়েত থেকে তার নিকট আত্মীয়ের পাঠানো একটি দামী স্যামসাং মোবাইল আজগর আলী চুরি করে ধরা পড়ে শালিস বৈঠকের পর তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছে। তিনি আরোও জানান, তার স্ত্রী সোনিয়া টাকাওয়ালা মানুষের সাথে সম্পর্ক করে অর্থ হাতিয়ে নেয়।

সূত্রে জানা যায়, মাকসুদা এঘটনায় কেরাণীগঞ্জ দক্ষিণ থানায় ৫মে-২০১৯ তারিখে প্রতারক সোনিয়ার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেন। এছাড়া তিনি ১৮সেপ্টেম্বর-২০১৯ তারিখে একটি জিডিও করেছেন। তবে এ অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এনায়েত জানান, মাকসুদা প্রতারিত হয়েছে বিষয়টি সত্য। কিন্তু দালিলীক প্রমাণ না থাকায় এবং তার সাথে বাদীনির যোগাযোগ কম থাকায় তদন্ত কার্যক্রম সমাপ্ত হয়নি। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে সোনিয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি। তবে তার স্বামী আজগর আলী অপরাধ বিচিত্রার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং তাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × 2 =