মেঘনা নদী দখলে মেতেছে আল মোস্তফা গ্রুপ ও জামাই মোস্তফা

0
716

 সুলতান মাহমুদ ঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে বালু ভরাট করে মেঘনা নদী দখলে মেতেছে আল মোস্তফা গ্রুপ ও জামাই মোস্তফা। বৈদ্যেরবাজার মাছ ঘাট এলাকায় মেঘনা নদী দখল করে জামাই মোস্তফা গড়ে তুলেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বালু ভরাট ও বাউন্ডারি দিয়ে মেনীখালী নদীর মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সাতভাইয়াপাড়া ও চর লাউয়াদী মৌজার মেঘনা নদী, নদীর তীরবর্তী খাস ভূমি, সরকারি দুইটি খাল এবং ফোরশোর ল্যান্ডভুক্ত ভূমিতে বালু ভরাট করে জামাই মোস্তফার মালিকানাধীন ইউরো মেরিন শিপ বিল্ডার্স ও হেরিটেজ পলিমার এন্ড ভেজিটেবলস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটি প্রাচীর নির্মাণ করছে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তিদের সহায়তায় বৈদ্যেরবাজার এলাকায় নদীর পশ্চিম দিকে ২ হাজার ফুট দীর্ঘ বাই ৭শ প্রস্থ্য বর্গফুট পরিমাণ মেঘনা নদীর তীরভূমি ভরাট করে বিশালাকার এ প্রতিষ্ঠিান নির্মাণ করা হচ্ছে। বালু ভরাটের কারণে মেনীখালী নদীর মুখ শুকিয়ে যাওয়ায় রতনপুর, ভাটি বন্দর, পিরোজপুর, দুধঘাটা ও নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষকরা চলতি ইরি মৌসুমে পানি সংকটে পরে। পর্যাপ্ত সেচ দিতে না পারায় কয়েকশ একর কৃষি জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশংকা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ এবং এলাকাবাসী।

নদী দখলের কারণে সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী কাইকারটেক হাট থেকে বৈদ্যেরবাজার ঘাটে নৌ-চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পরেছে। জানা গেছে, নদী দখলের পাশাপাশি ইউরো মেরিন শিপ বিল্ডার্স ও হেরিটেজ পলিমার এন্ড ভেজিটেবলস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটি মালিক জানাই মোস্তফা সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমিও দখল করেছে। ইতিমধ্যে সড়ক ও জনপদ বিভাগ দখলকৃত রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ করলেও তা আমলে নেয়নি আল মোস্তফা গ্রুপ।

নদী দখলের জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে এসে বৈদ্যেরবাজার এলাকায় মেঘনা নদীর পশ্চিম দিকে ২ হাজার বাই ৭শ বর্গফুট পরিমান মেঘনা নদীর তীরভূমি দখল ও ভরাটের সত্যতার প্রমাণ পায়। এ দিকে জানা গেছে, মেঘনা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আল মোস্তফার গ্রুপের থাবায় যেন হারাতে বসেছে সেই বহমান স্রোতধারার মেঘনা নদী। দিনে দিনে ‘ভয়াল দানব’ হয়ে উঠেছে আল মোস্তফা। গ্রুপটির চোখের সামনে যা পড়ছে তা-ই গিলে খাচ্ছে। ফসলি জমি, ভিটেমাটি,

খাসজমি, খাল, নদী কোনো কিছুই বাদ পড়ছে না। সবই তার বিশাল বপুর পেটে ঢুকে যাচ্ছে অনায়াসে। নিজের শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে এরই মধ্যে কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম নিশ্চিহ্ন করেও ক্ষান্ত হয়নি আল মোস্তফা গ্রুপ। শুধু তাই নয় মেঘনার প্রবেশ দ্বার বন্ধ করে দিচ্ছে। মেঘনা নদী গিলে ফেলা নিয়ে আলোচনায় আল মোস্তফা গ্রুপ। আরও জানা গেছে, আলাদিনের চেরাগে ভর করে মেঘনা নদী দখল ও ভরাটের উৎসবে যেনো মাতোয়ারা আল মোস্তফা গ্রুপ। একের পর এক কারখানা স্থাপনের নামে চলছে নদী দখল ও ভরাট। চোখের সামনে যা দেখছে তাই গিলে হজম করে ফেলছে আল মোস্তফা গ্রুপ। দখলের এই প্রতিযোগিতায় বাদ যাচ্ছে না কৃষকের ফসলি জমি, ভিটে মাটি, সরকারি খাল, সওজের জমি। এলাকার কিছু বালু খেকোদের সহযোগিতায় জোড়পূর্বক চলছে দখলের কাজ।

শুধু জমি দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি প্রতিষ্ঠানটি শিল্প-কারখানার দূষিত বর্জ্যে নদীটিকে মেরে ফেলার খেলায়ও মেতেছে। এতে অস্তিত্ব সংকটে আছে মেঘনা নদী। প্রাচীন বাংলার এই রাজধানীর প্রায় চারদিকেই আল মোস্তফা গ্রুপের দখল থাবা। যা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মেঘনা নদীর সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন শাখা নদীগুলো। নদী সহ অবৈধভাবে দখল করছে পরিবেশের জন্য অপরিহার্য খাল-বিল, ফসলি জমি। তাদের অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নদী ও খালের পানিতে মিশে নষ্ট হচ্ছে পানির ভারসাম্যতা। ফলস্বরূপ বিলুপ্ত প্রায় মৎস্য প্রাণী।

আল মোস্তফার দখলে থাকা নদীর জায়গা দখলমুক্ত করতে একাধিকবার অভিযান শুরু হলেও মাঝপথে তা আটকে গেছে। এরপর আর সেখানে অভিযান পরিচালিত হয়নি। এতে করে অন্যান্য দখলদাররাও ছাড় পেয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। সোনারগাঁও উপজেলা ভূমি অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আল মোস্তফা গ্রুপটি অবৈধভাবে নদী দখল ও ভরাট করে স্থাপনা গড়ে তুলেছে। আমরা অভিযানে গেলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের নদীর পাড় ব্যবহারের বিআইডব্লিউটিএর অনুমতিপত্র দেখানো হয়।

যেহেতু শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিআইডব্লিউটিএ থেকে নদী তীরবর্তী ভূমি ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে কাজ করে। সেক্ষেত্রে আমাদের আইনগত কিছু করার থাকে না। ঐই কর্মকর্তা বলেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশাল টাকার ঘুষের বিনিময়ে নদী তীর ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে নদী তীরভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার পূর্বে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা। স্থানীয়রা জানায়, বিআইডব্লিউটিএ

-এর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে প্রভাবশালী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা প্রকাশ্যে একের পর এক স্থানে মেঘনা নদী ও শাখা নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছেন স্থাপনা। আল মোস্তফা গ্রুপটি পাইলিং, বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ ও বালু ফেলে প্রতিনিয়ত নদীর গভীরে দখল করে চলেছে। এ বিষয়ে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন,

শুধু আল মোস্তফা গ্রুপের দখলে থাকাই নয়, অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের দখলের তালিকা করেও জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে নদীর জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এব্যাপারে জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশন নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি সাংবাদিক সুলতান মাহমুদ সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলামকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন, পরে তালিকা করে ব্যবস্থা নিবেন,

এখন নিচ্ছেন না কেন?” প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ব্যবস্থা নিতেছি।” এব্যপারে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বল্লাহকে জানালে তিনি বলেন, “আমি দেখতেছি।” এব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ-এর জয়েন্ট ডাইরেক্টর মাসুদ কামালকে কল করলে, তিনি কল ধরেননি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − fifteen =