৮ হাফেজের গর্বিত পিতা ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষের ইন্তেকাল

0
470

আট হাফেজের গর্বিত পিতা ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. নুরুল হক মিয়া ইন্তেকাল করেছেন। আজ শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এক ফেসবুক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে তাঁর শ্যালক মাওলানা মামুনুল হক। আজ রাত ৮টায় মোহাম্মাদপুর সাতমসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।

বিবৃতিতে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রসায়নের কিংবদন্তি শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল হক মিয়া ইন্তেকাল করেছেন।’

তিনি আরো জানান, ‘সম্পর্কে ভগ্নিপতি হলেও বন্ধনটা অনেক গভীর আমাদের। শাইখুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হকের মৃত্যুর পর পরিবারের একজন অভিভাবক ছিলেন তিনি। তাঁর রুহের মাগফিরাত ও জান্নাতে উঁচু মর্যাদার জন্য সবার দোয়া চাই।’

অধ্যাপক নুরুল হকের আট সন্তানের সবাই পবিত্র কোরআনের হাফেজ ও আলেম। বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.)-এর জামাতা ছিলেন তিনি। আর মাওলানা মামুনুক হক ও মাওলানা মাহফুজুল হক তাঁর শ্যালক।

১৮০ বছরের পুরনো ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক নুরুল হক অনেক সুনামের অধিকারী ছিলেন। একবার তিনি বলেন, ‘ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপালের চেয়ারে যেদিন বসি, তখন সবাই বলেছিল, ঢাকা কলেজের দেড় শ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম দাড়ি-টুপিওয়ালা কেউ প্রিন্সিপালের চেয়ারে বসল।’

ঢাকা কলেজের একজন অধ্যক্ষ ও আধুনিক শিক্ষিত পিতার আট সন্তানই হাফেজে কোরআন হওয়ায় অধ্যাপক নুরুল হককে নানাজনের নানা কথা শুনতে হয়। অধ্যাপক হক তাঁর সন্তানদের প্রসঙ্গে বলেন, ‘ঢাকা কলেজের সহকর্মীরা বলতেন, স্যার সবাইকে মাদরাসায় পড়াচ্ছেন, ওরা খাবে কী? বলতাম আল্লাহ ভরসা।’ মহান আল্লাহ তাঁর সন্তানদের খারাপ রাখেননি।

অধ্যাপক নুরুল হক ছিলেন নির্লোভ, সহজ-সরল, ধার্মিক, প্রখর মেধাবী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোক। সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পিএইচডি ডিগ্রির জন্য আমেরিকা যাননি।

১৯৪৪ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে জন্মগ্রহণ করেন অধ্যাপক নুরুল হক মিয়া। ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে স্নাতক পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আওয়ামী লীগের সাবেক শীর্ষনেতা আব্দুর রাজ্জাক, ইকবাল হলের (সার্জেন্ট জহুরুল হক) ভিপি তোফায়েল আহমেদ, রাজনীতির রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খান, রাশেদ খান মেনন, মতিয়া চৌধুরী, ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীসহ অনেকের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

১৯৬৯ সালে জনাব নুরুল হক অধ্যাপনা শুরু করেন। অধ্যাপনার জীবনে দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকতা করেন তিনি। চার বছর রসায়ন বিভাগের প্রধানসহ দীর্ঘ এক যুগ কাটিয়েছেন ঢাকা কলেজে। ২০০১ সালে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক নুরুল হক রচিত রসায়ন বিষয়ক সাতটি বই উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরে পাঠ্যসূচিভুক্ত হওয়ার পর তিনি ‘কেমিস্ট্রির প্রফেসরে’র সুখ্যাতি পান। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তাঁর বইগুলো ছিল অদ্বিতীয় ও অনন্য। বইগুলো এখন আর বাজারে নেই। তবে অভিজাত পুস্তকবিতানে ‘ঢাকা কলেজ কেমিস্ট্রি নুরুল হক’ নামে পুরনো বই অনেক সময় পাওয়া যায়।

অধ্যাপনা, লেখালেখির পাশাপাশি জনাব হক তাবলিগি কাজে দেশ-বিদেশে সময় লাগিয়েছেন। তিনি একজন প্রবীণ দায়ি বা মুবাল্লিগ। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাবলিগে গেলে অসংখ্য ছাত্র তাঁর সাক্ষাৎ, ক্লাস ও অটোগ্রাফ পাওয়ার জন্য ছুটে আসত।

অধ্যাপক নুরুল হকের ছোট ছেলে হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পিতার কনিষ্ঠ সন্তান হিসেবে তাঁর সোনালি অধ্যায়গুলো দেখার সুযোগ হয়নি তাঁর। তবে ঢাকা কলেজে অধ্যক্ষের অনারবোর্ডে আব্বার নাম দেখলে আনন্দ ও গর্বে বুক ভরে যায় তাঁর। সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা, বড় বড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অধ্যাপক নুরুল হকের ছাত্র ও তাঁর বই পড়েছেন শুনলে অনেক ভাগ্যবান মনে করেন তিনি।

দীর্ঘ দিন ধরে অধ্যাপক নুরুল হক ডায়াবেটিস, প্রেসারসহ অন্যান্য বার্ধক্যজনিত সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। অবশেষে ৭৬ বছর বয়সে বর্ণাঢ্য এ জীবনের সমাপ্তি ঘটে। পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে একজন সন্তান হিসেবে হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক মরহুমের জন্য দোয়া কামনা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × 2 =