নেই কোন কেমিস্ট,নেই কোন ল্যাব তৈরি হয় দেশী-বিদেশী কসমেটিকস

0
8793

আরিফুল ইসলাম (স্টাফ রিপোর্টার):বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর আইন অনুযায়ী প্রসাধনী তৈরির কারখানায় কেমিষ্ট ও মানসম্পন্ন ল্যাব থাকা আবশ্যক হলেও কেমিস্ট ও ল্যাব বিহীন আবাসিক ভবনে অননুমোদিত কারখাতেই তৈরি হচ্ছিল দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনী। ক্ষতিকর ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমসহ নানা ধরনের কসমেটিকস তৈরির এমনই এক কারখানায় অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পুরান ঢাকার চকবাজার মডেল থানাধীন রহমতগঞ্জের ৩১/৬ হাজী বাল্লু রোডে নিধি কসমেটিকস নামীয় ত্বক ফর্সাকারী নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানায়  অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও র‌্যাব-৩ এর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং বিএসটিআই’র সহযোগিতায় পরিচালিত এই ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, র‌্যাব ও এনএসআই এর গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি ‘মেসার্স নিধি কসমেটিকস্ কোং’ নামীয় প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম,আলতা সহ বিভিন্ন নকল কসমেটিকস উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাত করছে। উৎপাদিত এসব ভেজাল পণ্য একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চকবাজার সহ সারাদেশে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি।

তিনি বলেন, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির আদলে নিধি অ্যান্ড লাভলি,তিব্বত,নোভা,এমনকি ভারতীয় স্কীন শাইনসহ বিভিন্ন নামিদামি ত্বক ফর্সাকারী ব্র্যান্ডের নকল ক্রিম তৈরি হতো এখানে। কেমিস্ট ও ল্যাব বিহীন এ কারখানায় সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হতো এসব কসমেটিকস।

 এসকল মানহীন নকল প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহার করা হতো হাইড্রোকুইনোন ও মার্কারি ছাড়াও অন্যান্য ক্ষতিকারক কেমিক্যাল । এসব কেমিক্যাল মানবদেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে ব্যবহৃত মার্কারি এতটা হেভি মেটাল যা ব্যবহারে কিছুদিনের মধ্যেই রং ফর্সা হয়ে গেলেও পরবর্তীতে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ত্বকের মারাত্মক ক্ষতিসাধন হয়।

এসব ভেজাল পণ্য দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে ত্বকের প্রদাহ, এলার্জি,ত্বক পুড়ে যাওয়াসহ ত্বকের নানা সমস্যা এমনকি  ত্বকের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ভেজাল কসমেটিকস তৈরিতে যে সকল কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে তার কোনটির গায়ে কোন প্রকার লেভেল নেই। অর্থাৎ এগুলোর নাম, উৎপাদনের তারিখ,মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ ও ব্যাচ নং কিংবা

কোম্পানির নাম কোনটিই নেই। নকল প্রসাধনী গুলোর মোড়কে বিএসটিআইয়ের লোগো থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির বিএসটিআইয়ের কোন অনুমতি নেই। যা বিএসটিআই আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।

 পলাশ কুমার আরো বলেন, দেশি-বিদেশি  নামিদামি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন প্রকারের নকল প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদন করায়  কারখানাটির প্রধান কারিগর আলিনুর হোসেন (২৫) ও তার সহকারী জাহিদুল ইসলামকে (২২) গ্রেফতার করা হয়। নকল বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস তৈরি করার অপরাধে প্রত্যেককে বিএসটিআই আইন-২০১৮ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর সর্বমোট ৬ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ অর্থদণ্ড আরোপ করা হয়েছে এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে প্রত্যেককে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কারখানাটি সিলগালা করেছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এছাড়াও কারখানাটি থেকে ভেজাল কেমিক্যাল সহ উৎপাদিত নকল কসমেটিকস  সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। কারিগরদের বক্তব্য অনুযায়ী এসবের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩০ লক্ষ্য  টাকা।

কারখানাটির মালিক মো: নাসের পলিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি তবে তাকেও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

12 + five =