স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতের দুর্নীতি রোধে ৩০ সুপারিশ

0
863

স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতের দুর্নীতি এবং অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে এসব বন্ধে ৩০টি সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্বাস্থ্য খাতে ২৫, আর ওষুধ খাতের জন্য ৫ দফা সুপারিশ করা হয়। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয়া বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব সুপারিশের কথা জানায় সংস্থাটি।

দুদকের প্রতিবেদন ২০১৯-এ বলা হয়, স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে দুর্নীতি বিদ্যমান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কিছু কর্মচারী একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে স্থানীয় দালালদের সমন্বয়ে সংঘবদ্ধ একটি চক্র তৈরি করে।

এরা সাধারণ রোগী বা তাদের স্বজনদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বেআইনিভাবে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করে থাকে। টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে অপ্রয়োজনীয় ও নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ক্রয় করে থাকে। নজরদারি না থাকায় হাসপাতালগুলোতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ওষুধ থাকা সত্ত্বেও রোগীদের প্রদান করা হয় না। এ সকল ওষুধ কালোবাজারে বিক্রি করা হয়; কিন্তু রেজিস্টারে হিসাব মিলিয়ে রাখা হয়। কিছু ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি নকল ও নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুত করে থাকে।

এছাড়া, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে মেধা যাচাই না করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানো হয়।

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি রোধে ২৫ সুপারিশ :

সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- একজন নির্দিষ্ট চিকিৎসক দৈনিক কতজন রোগী দেখবেন এবং তার ফি কত হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, চিকিৎসকগণের (সরকারি/বেসরকারি) পদোন্নতির জন্য সরকারি চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে পিএসসি এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য) এবং পিএসসির প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে সুপারিশ প্রদান করার সুপারিশ দুদকের।

এছাড়া চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের ট্রেড নাম না লিখে জেনেরিক নাম লেখা, ইন্টার্নশিপ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করা এবং বর্ধিত এক বছর উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে থাকা বাধ্যতামূলক করা, উপজেলা পর্যায়ে কাজ না করলে উচ্চ শিক্ষার অনুমতি না দেয়া; চিকিৎসকদের প্রতি তিন মাস অন্তর নৈতিকতা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা ও চিকিত্সা সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে চিকিত্সকদের একটি সুনির্দিষ্ট বদলি নীতিমালা করার সুপারিশ করেছে দুদক। এছাড়া নকল ওষুধ কারখানা বন্ধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সারভিল্যান্স টিম গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করে দুদক।

এছাড়া সরকারি হাসপাতালে জনসাধারণের দৃষ্টিগোচর হয় এমন উন্মুক্ত স্থানে সিটিজেন চার্টার প্রদর্শনের বিধান রাখা, প্রতিদিন কী কী ওষুধ স্টকে আছে তা প্রদর্শন করা ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ক্রয়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং অনিয়ম বন্ধ করার জন্য ক্রয় কমিটিতে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা, জনবল না থাকলে সরঞ্জাম না কেনার বিধান করার পরামর্শ দুদকের।

চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন ও অধিকার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য বিমা চালুকরণ, প্রশাসনিক সুবিধার্থে স্বাস্থ্য অধিদফতর ভেঙে স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর নামে পৃথক দুটো অধিদফতর চালু করার প্রস্তাব দেয় দুদক।

ওষুধ খাতের দুর্নীতি রোধে ৫ সুপারিশ :

স্বাস্থ্য খাতের মতো ওষুধ খাতের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি হয় জানিয়ে তা রোধে ৫টি সুপারিশ দিয়েছে দুদক।

এসবের মধ্যে রয়েছে, মানহীন ওষুধ যেনো কোনভাবেই বাজারে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ল্যাবরেটরির সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমেও বিকল্প পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ওষুধ কারখানা নিয়মিত পরিদর্শন করার ব্যবস্থা, ফার্মেসিসমূহ মনিটরিংয়ের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পাশাপাশি জেলা, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা, খোলাবাজারে ওষুধের কাঁচামাল বিক্রি নিষিদ্ধ করা ও চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ফার্মেসি এন্টিবায়োটিক, ঘুমের ওষুধ বা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদনবিহীন কোনো ওষুধ বিক্রি করতে না পারে সে ব্যবস্থা করা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

18 + eleven =