স্টাফ রিপোর্টারঃ
ময়মনসিংহের ভালুকা থানাধীন উথুরা গ্রামের যুবক মোঃ আহাদের বাম হাতের কবজি কেটে দিয়েছে সন্ত্রাসী গফুর বাহিনী। গফুর বাহিনীর অন্যতম সদস্য হত্যা মামলার আসামী নজরুল চেংগু। এরা এলাকার ভয়ংকর সন্ত্রাসী। স্থানীয় থানা পুলিশের শেল্টারে এরা বহুমুখী অপকর্মে লিপ্ত। এরা মানুষের হাতের কবজি কেটে নেয়া পরেও মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। বরং অভিযোগকারীকে অপেক্ষায় রেখে ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে থানার ওসি মাহামুদুল হাসান ও এসআই আব্দুল লতিফ। এঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শক সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছে আহাদের মা সেলিনা বেগম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভালুকা থানাধীন উথুরা পশ্চিম পাড়া গ্রামের মাহাবুল আলমের ছেলে আহাদ(১৮)। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ১৩মার্চ-২০২১ তারিখ সন্ধ্যায় তার নানা আব্দুল গফুর ওরফে গফু, নানী ফাতেমা, খালা ফরিদা ইয়াসমিন নিলুফা, খালু নজরুল চেঙ্গু, খালাতো বোন নওশিন গংরা সমম্মিলিতভাবে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে বাম হাতের কবজি কেটে নেয়। গুরুত্বর আহত আহাদকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঐ রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। অতপর ১৪ তারিখ সকালে আহাদের মা সেলিনা বেগম বাদী হয়ে ভালুকা মডেল থানায় এসব আসামীদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ভালুকা থানার ওসি অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এসআই আব্দুল লতিফকে নিযুক্ত করেন। এসআই আব্দুল লতিফের নির্দেশে সেলিনা বেগম এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে আহাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়ী নিয়ে আসেন। অত:পর ওই দিন বেলা আড়াইটার দিকে এসআই লতিফ সেলিনার নিকট থেকে ৬ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান। ঘটনাস্থলে গিয়ে এসআই লতিফ প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষীদের সাথে কথা বলেন। পরের দিন সকালে গফুর গংরা সেলিনা বেগমের ওই বাড়ীর নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়ে নির্মান শ্রমিকদের তাড়িয়ে দেন। সেলিনা বেগম এঘটনা মোবাইল ফোনে এসআই আব্দুল লতিফকে জানালে তিনি তাকে থানায় আসতে বলেন। সেলিনা থানায় আসলে এসআই লতিফ ওসিকে দেয়ার কথা বলে তার কাছে আবারো ১৫ হাজার টাকা দাবী করেন। কিন্তু সেলিনা অনেক দরকষাকষি করে তাকে আবারো ৭ হাজার টাকা দেন। তারপরে এসএই লতিফ সেলিনাকে সাথে তার বাড়ী আসেন। সেই সাথে এসআই তার মোবাইল ফোনে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সামছুল হক চৌধুরীকে সেলিনার বাড়ীতে ডেকে আনেন। সামছুল হক চৌধুরীকে সাথে নিয়ে এসআই লতিফ প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী জলি চৌধুরীর বাসায় গিয়ে বসে কর্থাবার্তা শেষে সেলিনাকে জানান, আসামী নজরুল চেংগুকে বাদ দিয়ে মামলা করতে হবে এবং ওসি স্যারের সাথে এব্যাপারে কোন কথা বলা লাগবে না, যা করার তিনি নিজেই করবেন, এসব বলে আরো ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন এবং বাড়ীর নির্মান কাজ করার নির্দেশ দিয়ে আসেন। কিন্তু পরের দিন সকালে সেলিনা তার নির্মান শ্রমিকদের কাজে আসার জন্য ফোন করলে শ্রমিকরা জানান, তারা কাজে আসবেন না। কারন আওয়ামীলীগ নেতা সামছুল হক চৌধুরী তাদেরকে কাজ করতে নিষেধ করেছেন। পরক্ষনে সেলিনা সামছুল হক চৌধুরীর বাসা গিয়ে তার কাছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। অত:পর সেলিনা মোবাইলে বিষয়টি এসআই লতিফকে জানালে তিনি মোটসাইকেলযোগে তার বাসা চলে আসেন এবং মোবাইলে উক্ত নির্মান শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন। কথা শেষে এসআই লতিফ ওসিকে দেয়ার কথা বলে সেলিনার কাছে আবারো ১৫ হাজার টাকা দাবী করেন। এসময় সেলিনা বিরক্ত হয়ে টাকা দেয়ার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানান। এঘটনায় এসআই লতিফ সেলিনার সামনেই আসামীদের সাথে দীর্ঘক্ষন কথাবার্তা শেষে চলে যাওয়ার সময় সেলিনাকে বলেন, টাকা তো দিলেন না, দেখি আপনার কাজ কিভাবে হয়। সেই থেকে অদ্যবদি সেলিনার মামলাটি ভালুকা মডেল থানায় রুজু হয়নি, এমনকি আসামীরা প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়ালেও কাউকে গ্রেপ্তার করছে না। পাশাপাশি পুলিশের সহযোগিতায় আসামীরা সেলিনার বাড়ীর নির্মান কাজও বন্ধ করে রেখেছে।
সুত্র জানায়, কোথাও মারামারির ঘটনা জানা মাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার বিধান রয়েছে বা লিখিত অভিযোগ পাওয়ার আগেও অপরাধীকে আটক করার বিধান রয়েছে। অথচ সন্ত্রাসী গফুর গংরা কুপিয়ে সেলিনার ছেলের বাম হাতের কবজি কেটে আলাদা করে দিয়েছে এবং সেলিনা থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি ধাপে ধাপে তদন্তের নামে এসআই লতিফ ওসিকে দেয়ার কথা বলে সেলিনার নিকট থেকে ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিলেও এখন পর্যন্ত মামলাটিও রুজু করেনি। তবে শোনা যাচ্ছে হত্যা মামলার আসামী নজরুল চেংগু এর নিকট থেকে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে মামলা করা থেকে বিরত রয়েছে ওসি ও এসআই আব্দুল লতিফ।
ভুক্তভোগি সেলিনা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে ওরা পঙ্গু করে দিয়েছে। আমাকেও মারধরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দারোগা লতিফ আমার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে, একটা আসামীও গ্রেপ্তার করে নাই।
এব্যাপারে এসআই আব্দুল লতিফ বলেন, মামলা নেয়ার কাজ হচ্ছে ওসি স্যারের। আমি ঘটনার তদন্ত করে ওসি স্যারকে রিপোর্ট দিয়েছি। তবে টাকা নিয়েছেন কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোন কথা বলেনি।