নিকলীর হাওর জুড়ে ধান আর ধান

0
747

কিশোরগঞ্জ থেকে মোঃ আজিজুল হক: নিকলীর হাওরের বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতে এখন সবুজের সমারোহ। লালচে হতে শুরু করেছে ধানের শিষ। এবার পাকা সোনালি ধান গোলায় তোলার স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। করোনা থাকলেও হাওরে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় চাষাবাদের অবস্থা গত বছরের চেয়ে ভালো। ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা। আর কদিন পর বৈশাখ। বৈশাখ এলেই হাওরে হাওরে শুরু হবে ধান কাটার উত্সব। কৃষক কাবিল সর্দার (৭০) এখন প্রতিদিন এক চক্কর হাওরে যান। ধানের কী অবস্থা, আর কয় দিন লাগবে পাকতে, সেটা নিজের চোখে দেখে আসেন। বড় কষ্টে এবার জমিতে ধান লাগিয়েছেন তিনি। বুক জুড়ে আশা, এবার ধান তুলতে পারবেন। কাবিল সর্দারের বাড়ি উপজেলার সিংপুর গ্রামে। গ্রামের পাশের বড় হাওরে দুই একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। গত বছরও একইভাবে ধান লাগিয়েছিলেন। কিন্তু সব ধান তলিয়ে যায়, এবারও জমি আবাদ করতে গিয়ে ঋণ করতে হয়েছে। তবে ভালোয় ভালোয় ধান তুলতে পারলে সব ধারদেনা শোধ করা যাবে।

বৃহস্পতিবার সিংপুর গ্রামের কৃষক সুনামদ্দিন মাস্টার (৭০) বলেন, ‘ফসল গেলে কী যে কষ্ট এইটা বইলা বোঝাইতাম পারতাম না। এখন হাওরের দিকে ছাইয়া ছাইয়া দুই হাত তুইলা দোয়া করি, ইবার যেন ধানের কোনো ক্ষতি না হয়।’

এই আকাঙ্ক্ষা শুধু সুনামদ্দিন মাস্টারের নয়, পুরো হাওরবাসীর। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, এ বছর ৩৬ হাজার ৮৬৩ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।

ধানের উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এখন বিচ্ছিন্নভাবে কিছু হাওরে ধান কাটা হচ্ছে। পুরোদমে ধান কাটা শুরু হতে আরো এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে।

নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামছুদ্দিন মুন্না বলেন, আমরা হাওরের ফসল রক্ষায় প্রয়োজনীয় বাঁধের কাজ করেছি। নিকলীর হাওরে ধান পাকতে শুরু করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষক এবার হাসিমুখেই তাদের ধান গোলায় তুলতে পারবেন।

আমরা কৃষকদের সেই হাসির ঝিলিক দেখতে চাই। নিকলী-বাজিতপুরের স্থানীয় সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন বলেন, হাওরের ফসল রক্ষায় এবার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজও হয়েছে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। আমরা সবাই মিলে পরিশ্রম করেছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের পরিশ্রমের ফল দেবেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × 4 =