তেঁতুলিয়ায় জোরপূূর্বক জমি দখলের পাঁয়তারা অত: পর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

0
467

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম: পঞ্চগড় জেলাধীন তেঁতুলিয়া উপজেলায় জোরপূর্বক জমি দখলের পাঁয়তারা অতঃপর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির উভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার (৬এপ্রিল ২০২১) দুপুরে উপজেলার আতমাগছ গ্রামের তিন কৃষকের আবাদি প্রায় এক একর জমিতে জোরপূর্বক জমি দখলের পাঁয়তারার ঘটনাটি ঘটেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখতে ও জানতে পারা যায়, উপজেলার দেবনগড় ইউপি’র ঝাড়বাড়ী মৌজার জে.এল.নং ৩১ এর এস.এ ১০৭ নং খতিয়ানে পৈতৃকসূত্রে তিন কৃষক মৃত মজির উদ্দিনের ছেলে সকিন আলী, বাচ্চামদ্দীনের ছেলে আমিনার রহমান ও আফিজ উদ্দিনের ছেলে নুর ইসলাম ৩ একর ২৫ শতক জমি প্রায় ৫০ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছিলেন। ওই খতিয়ানের ওই জমির মধ্যে ৩৫৫২ নং দাগের পশ্চিমাংশে ৭১ শতক জমি জোরপূর্বক পাওয়ার টিলার দ্বারা হালচাষ করে দখলের পাঁয়তারা করেন একই গ্রামের মৃত বসির উদ্দীনের ছেলে রুহুল আমিনসহ পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০জন। তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্রসহ লাঠি বল্লম দেখতে পাওয়া যায়। এতে জমিতে হাজেরা নামে এক বৃদ্ধা মহিলাকে শুয়ে রেখে হাতে লাঠি-সোঠা নিয়ে হালচাষ করার চিত্র দেখা যায়। এ বিষয়ে জানার জন্য সংবাদকর্মী তাদের নিকট এগিয়ে যাইতেই হুমকি দেখিয়ে পিছিয়ে দেন রুহুল আমিনগংরা। তাঁরা কৃষক সকিন, আমিনার ও নুর ইসলামসহ খতিয়ানের রেকর্ডীয় ১-৩নং ক্রমিকের সকল অংশীদার জমিতে গেলেই জানে মেরে ফেলার কথা বলে জমি জবর দখলের পাঁয়তারা করেন এবং ৯ এপ্রিল মসলেম উদ্দিন বাদী হয়ে থানায় অভিনব কায়দায় একটি মিথ্যা মামলা করেন অভিযোগ উঠেছে।  

জমির কৃষকরা জানান, উপজেলার দেবনগড় ইউপি’র ঝাড়বাড়ী মৌজার জে.এল.নং ৩১ এর ১০৭ নং খতিয়ানে পৈতৃকসূত্রে ৩ একর ২৫ শতক জমি মালিক প্রাপ্ত হয়ে ৩৫৫২ নং দাগটির পশ্চিমাংশে ৭১ শতক জমি প্রায় ৫০ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছিলেন।

অপরদিকে একই দাগের ৯৬ খতিয়ানের পূর্বাংশের উত্তরে সুলতান আলীগং ও দক্ষিণে মোহাম্মদ আলী চাষাবাদ করেন। হঠাৎ ৬ এপ্রিল পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সকিন আলী, আমিনার ও নুর ইসলামের ভোগদখলীয় ৩৫৫২ নং দাগের পশ্চিমাংশের জমিতে রুহুল আমিনগংরা হালচাষ করা পাওয়ার টিলার ও দেশীয় অস্ত্রসহ লাঠি-সোঠা নিয়ে জমি জবরদখলের পাঁয়তারা করেন।

বিষয়টি বিপদজনক ভেবে সকিন আলীরা ইউপি ওয়ার্ড সদস্য শাহিদুল ইসলাম ও ইউপি চেয়ারম্যান এবং তেঁতুলিয়া মডেল থানায় মুঠোফোনে ফোন দেয়। পরে ঘটনাস্থলে থানার এএসআই রেজাউল করিমসহ চার জন এলে কোন প্রকার মারাপিট হননি জেনে ওসিকে অবগত করেন।

কৃষক আমিনার রহমান জানান, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ রাতে তাদের ১একর ১৫শতক জমির সরিষা খেতে আগাছানাশক ছিটিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পুরো ক্ষেতের সরিষা আগাছানাশকে ঝলসে যায় এতে তাদের প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে একই গ্রামের মৃত বশির উদ্দিনের ছেলে রহুল আমিন, এরশাদ আলী, আব্দুল জব্বার, আব্দুস সাত্তার ও চাঁন মিয়া রাতের আঁধারে আগাছানাশক ছিটিয়ে সরিষা ক্ষেত ধ্বংস করেছেন।

কৃষক সকিন আলী বলেন, আমরা ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে জমিগুলো চাষাবাদ করে আসছি। এসব জমি  আমরা পৈতৃক সূত্রে পেয়েছি। এসএ রেকর্ডেও আমাদের নামে রয়েছে।

কিন্তু কয়েক বছর আগে রহুল আমিন ও তার ভাইয়েরা জমিটি তাদের বলে দাবি করে আদালতে মামলা করে। মামলার রায়ের আগ মুহুর্তে তারা নিজেদের পরাজয় বুঝতে পেরে জরিমানা দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়।

তারপরও বিভিন্নভাবে আমাদের হুমকি দিতে থাকে ও হয়রানি করতে থাকেন। গত জানুয়ারি মাসে আমরা ইউনিয়ন পরিষদে বিচার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে রহুল আমিনরা তাদের স্বপক্ষে কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। আইনগতভাবে না পেরে আমাদের সরিষা ক্ষেত আগাছানাশক ছিটিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন।

এতে সকিন আলী গত ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলে অপরাধ হয়েছে মর্মে ইউএনও থানায় অভিযোগ করতে বলেন অতঃপর সকিল আলী বাদী হয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখে বিজ্ঞ আমলী আদালত-৪, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়ে ২০জনকে আসামী করে সি.আর-১১২/২১ নং একটি মামলা আনায়ন করেন। যা মামলাটি চলমান রয়েছে।

রুহুল আমীনগংদের মধ্যে সুলতান আলীর ছেলে মসলেম উদ্দিনের কাছ থেকে জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই জমিটি ৯৬ খতিয়ানের এই দাগে সকিন আলীদের কোন স্বত্ত্ব নেই তারা যে জমি হালচাষ করেছে তা তাদের ক্রয়কৃত জমি।

দেবনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহসিন-উল- হক (মহসিন) বলেন, জমিটি পৈতৃক সূত্রে সকিন, আমিনার ও নুর ইসলাম ভোগ করে আসছে। গত জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই পক্ষকে নিয়ে আমরা বসেছিলাম। কিন্তু রহুল আমিনরা তাদের পক্ষে জমির কোনো কাগজ উপস্থাপন করতে পারেনি। এ ব্যাপারে একটি আদেশও দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ছায়েম মিয়া জানান, হাসপাতালে তিনটি রোগী ভর্তি রয়েছে এর প্রেক্ষিতে থানায় মামলা করতে গেলে তিনি মামলাটি গ্রহন করেন। পরে তদন্ত সাপেক্ষে দেখবেন জানান তিনি। 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

9 − four =