পিআইও’র দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ক্ষমতাশীন দলের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ২৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা গ্রেপ্তার-২

0
378

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: ঈদ উপলক্ষে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) প্রকল্পের টাকা বিতরণকালে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অনৈতিক কার্যকলাপে ক্ষেপে উঠে ক্ষুধার্ত জনগণরা। এরই ধারাবাহিকতায় নেতাকর্মীরা এগিয়ে গেলে হাজারো জনতার ভীড় ভেঙে উদ্ধার করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ উদ্ধার করাটাই যেন কাল হলো। তারই অনুদান হিসেবে ২৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করে মামলা। এ ঘটনায় ক্ষমতাশীন দলের(আ’লীগ) ২৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয় যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি সাধারন জনগনের। ঘটনাটি ঘটেছে ঈদের দু’দিন আগে (বুধবার) দুপুরে উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। ওই দিন সন্ধায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ বাদী হয়ে রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই সরকারসহ অজ্ঞাত আরও ২৫জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছাত্রলীগের দুই নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।

রোববার (১৬ মে) দুপুরে রাজীবপুর থানার ওসি নবিউল হাসান সাংবাদিকদের  নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় অজ্ঞাত ২০-২৫জনের নামে একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন-রাজীবপুর সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা ও একই ইউনিয়নের ছাত্রলীগকর্মী আব্দুর রহমান বিশ্বাস।

রাজীবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ সাংবাদিকদের বলেন, রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরোর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ঈদের দু’দিন আগে বুধবার দুপুরে তার ওপর হামলা চালায়। পরে কয়েকজন সহকর্মী ও গ্রাম পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন।

ওই রাতেই নিজে বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের ওপর পুরো দায়িত্ব না দিয়ে নিজে উপস্থিত থেকে নিয়ম-নীতি ও শৃঙ্খলার সাথে সুবিধাভোগীদের মাঝে টাকা বিতরণ করায় তার ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা ওই কর্মকর্তার ওপর ক্ষুধার্ত মানুষের ভির থেকে উদ্ধার করে নেতাকর্মিরা। তার উপরে কোন প্রকার হামলা চালানো হয়নি। তাকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মাত্র।

ওই কর্মকর্তা নিজের অপকর্ম ঢাকতেই দলীয় নেতাকর্মিদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। 

রাজীবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের সব টাকা ঈদের আগেই যাতে জনগণের মাঝে বিতরণ করা হয় তার জন্য ইউএনওসহ ওই কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু পিআইও দুপুর ১টার মধ্যে টাকা বিতরণ করতে তাড়াহুড়ো করলে স্থানীয় জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দেন।

পরে ওই কর্মকর্তাকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে দলীয় কোন্দলের সুযোগ নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে প্রশাসনের লোকজন আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।

রাজীবপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল আলম বাদল সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময় তিনি ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষের ভেতরে ছিলেন। জনগনের হৈ-চৈ শুনে বাইরে বের হয়ে শুনেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়েছে।

 রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবিরুল ইসলাম বলেন, সরকারি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়া খুবই দু:খজনক। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পুলিশ হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনবে।

রাজীবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা ও কর্মী আব্দুর রহমান বিশ্বাস এ ঘটনায় জড়িত না। তাদেরকে ফাঁসানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

8 − 7 =