পল্লবীতে সুমন বাহিনীর তাণ্ডব : মায়ের জিডির জেরে ছেলেকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা

0
598

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: দেশে গুম, খুন ও নৃশংসতা চরম আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর পল্লবীতে সুমন বাহিনীর বিরুদ্ধে এমনই ঘটনার অভিযোগ ওঠছে। মায়ের শুধুমাত্র একটি জিডির পরই কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ছেলে সাহিনুদ্দিনকে। প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে তাকে কোপানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এ ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার করেছে । তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাবেক এমপি এমএ আওয়াল, সাবেক মেজর মোস্তফা কামাল, সুমন বাহিনীর সুমন, তাহের, মানিক, ন্যাটা সুমনসহ বেশ কয়েকজনকে যে কোনো সময় গ্রেফতার করতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এলাকাবাসীদের বক্তব্য অনুযায়ী সুমন বাহিনী দীর্ঘ দিন যাবত এমপি এমএ আওয়ালের মদদে এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এ বিষয়ে র‌্যাব ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, মামলাটি পুলিশ তদন্ত করলেও আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ছায়াতদন্ত করছি। সাবেক এমপি আওয়াল এবং সাবেক মেজর মোস্তফা কামালসহ বেশ কয়েকজনকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি। তারা যে কোনো সময় ধরা পড়বে। সাহিনুদ্দিন হত্যায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি। কিন্তু র‌্যাব বা পুলিশ এই ঘটনায় কতটুকু অন্তরিকতার সাথে তদন্ত করবে তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে।

ডিবির উপকমিশনার মানস কুমার পোদ্দার  বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমরা ছায়া তদন্ত করছিলাম। আজ (বুধবার) মামলাটি আমাদের হাতে এসেছে। আশা করছি দ্রুতই ভালো খবর দিতে পারব।

গত ৭ ডিসেম্বর যুগান্তরে ‘পল্লবীতে ভয়ংকর সুমন বাহিনী/প্রতিবাদ করলেই কুপিয়ে জখম’ শিরোনামে খবর প্রকাশ হয়েছিল। ওই সময় এক মাসের ব্যবধানে সুমন বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়। কিন্তু তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠে এই বাহিনী।

অন্যদিকে বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হতে থাকে। সর্বশেষ ১১ মে আকলিমা নামের এক নারী পল্লবী থানায় সুমন বাহিনীর সুমনসহ ছয়জনকে আসামি করে জিডি করেন। ভৃক্তভোগীদের প্রশ্ন এভাবে মামলা ও জিডি হওয়ার পরও পুলিশ বাহিনী কোন সক্রীয় ব্যবস্থানেয় নি কেন? তবে কি তাদের সাথে পুলিশের বিষেশ সখ্যতা ছিল?

জিডিতে সুমন ছাড়া আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে হ্যাভিলি প্রপার্টিজের স্বত্বাধিকারী ও সাবেক এমপি এমএ আওয়ালও আছেন। জিডিতে আকলিমা আশঙ্কা করেন, যে কোনো সময় তার ছেলে সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করা হতে পারে। এই আশঙ্কার পাঁচদিনের মাথায় রোববার প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মায়ের জিডির পর পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা তদন্ত করলে উক্ত জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। মায়ের জিডির পর পুলিশ নিয়ন্ত্রমূলক ব্যবস্থা নিলে এতবড় নৃশংস হত্যাকান্ড নাও হতে পারতো।এখানে পুলিশের গাফিলতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা নিহতের পরিবারের দাবি।

হত্যাকাণ্ডের পর মুরাদ ও টিটু নামের দুজনকে গ্রেফতার করে দুইদিনের রিমান্ডে নেয় পল্লবী থানা পুলিশ। রিমান্ড শেষে আজ তাদের আদালতে হাজির করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, জমিজমা দখলকে ঘিরে পল্লবীতে একাধিক গ্রুপ গড়ে উঠেছে। সাবেক এমপি এমএ আওয়াল এবং সাবেক মেজর মোস্তাফা কামাল বড় দুটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন।

এ দুই গ্রুপের সদস্যদের পারস্পরিক যোগসাজশে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের সমস্যা সমাধানের কথা বলে সাহিনুদ্দিনকে বাসা থেকে ডেকে আনে মুরাদ। মোটরসাইকেল চালিয়ে মুরাদ পল্লবী ‘ডি’ ব্লকের ২৩ নম্বর রোডের সিরামিক গলির উলটা পাশে এসে থামে। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল সুমন ও মনিরসহ অন্যরা। সাত বছরের ছেলের সামনেই ফিল্মি স্টাইলে মোটরসাইকেল থেকে টেনেহিঁচড়ে সাহিনুদ্দিনকে নামান সুমন। পরে তাকে উপর্যুপরি কোপানো হয়।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সুমন বাহিনীর সদস্য মনির ও মানিক রামদা দিয়ে সাহিনুদ্দিনকে একের পর এক কুপিয়ে যাচ্ছে। আশপাশ থেকে ভেসে আসছে চিৎকার-কান্না। মাটিতে লুটিয়ে ছটফট করতে করতে বাঁচার আকুতি জানান সাহিনুদ্দিন। সাহিনের হাত-পা, গলা, মুখ, পেট, ঊরু, মাথা, হাঁটুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলাপাতাড়ি কোপানো হয়।

কিছুক্ষণ কুপিয়ে মানিক চলে গেলেও মনির কুপিয়ে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে গলায় কুপিয়ে কুপিয়ে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করার পর স্থান ত্যাগ করে মনির।

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের পাশেই একটি বাড়িতে সাহিনুদ্দিনের মা বসবাস করেন। তাকে কোপানো শুরু করলে ছেলে মাশরাফি দৌড়ে ওই বাসায় গিয়ে তার দাদি আকলিমাকে বলে, ‘সুমন গুন্ডা আমার বাবাকে কোপাচ্ছে।’ পরে স্বজনরা এসে সাহিনুদ্দিনের বীভৎস লাশ দেখতে পান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two + 10 =