থামছে না জনতা ব্যাংকের খেলাপি অনিয়ম দুর্নীতি

0
616

মো: আবদুল আলীম: সংসদের অধিবেশনে খেলাপি ঋন নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করার জন্য জাতীয় সংসদে জোড় তাগিদ দেওয়া হয়। জনতা ব্যাংকে খেলাপির পরিমান আশংকাজনক হারে বাড়ছে। ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের সাথে যোগসাজসে অনিয়ম করে ঋন প্রাদনের কারণে জনতার খেলাপি বাড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও এর তরফ থেকে কোন উৎকন্ঠা দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে জনতার একাধিক কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। খোদ জনতার ডিজিএম পদের একাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা গেছে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ঋন দিয়ে রাষ্ট্রায়াত্ব এই ব্যাংকটিকে ফোকলা করে ফেলা হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে হলমার্কের সারে চার হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়ার সময় জনতা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন জনতার বর্তমান এমডি এবং সিইও আবদুস সালাম আজাদ যাকে পুণরায় একই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জোষ্ঠ্য ব্যাংকারগণ বলছেন জনতার এমডি দ্বিতীয়বার একই পদে বহাল হয়েছেন যা রহস্যের আবর্তে ঢাকা। তিনি চলতি মেয়াদের পূর্বের মেয়াদে উক্ত পদে থাকা অবস্থায় ব্যাংকটির সার্বিক উন্নয়নে কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেন নাই বলে অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের মত। আনন্দ শিপইয়ার্ড ও রমনা কর্পোরেট শাখার গ্রাহক রানাকা গ্রুপের সহযোগি প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ শ কোটি টাকা বের করে নেয়। বর্তমানে এই ঋন খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত।যথাযথ নিয়ম মেনে শতর্কতার সাথে ঋন দিলে এই টাকা ব্যাংকের পক্ষে আদায় করা কঠিন ছিল না।  ম্যানেজমেন্টকে ম্যানেজ করে এত বৃহৎ টাকা বের করে নিয়েছে যা আর আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংক নিজের দায় এড়াতে ও দুদকের তদন্ত এড়াতে তড়িঘড়ি করে মামলা ঠুকে দিয়েছে।

মামলার খরচ বাবত স্ট্যাম্প ও আইনী খরচ চালাতে ব্যাংককে প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে যা আদায় না হলে ব্যাংক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নারায়নগঞ্জ এর বিআর স্পিনিং মিলস এর ৩০০ কোটি টাকার ওপর ঋন পূনর্গঠন করে জনতা ব্যাংক।

কী কী শর্তে  এত বড় টাকার ঋন পুণর্গঠন করে তা তদন্ত করলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসতে পারে। বিআর স্পিনিং মিলস এর ঋন পূনর্গঠনে বোর্ড সভায় যারা ছিলেন তাদের ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন খোঁজ নিলে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যেত। রতনপুর গ্রুপের ৪০০ কোটি টাকার ওপর ঋন পূনর্গঠন করে জনতা ব্যাংক। চামড়া খাতে ১ হাজার কোটি টাকার ওপর ঋন দিয়ে জনতা ব্যাংক হায় হায় করছে।

৭৮ টি গ্রাহকের কাছে রয়েছে এই টাকা। এসব খাত থেকে আদায় না হওয়াতে ব্যাংক অবলোপন করে। বেঙ্গল লেদার্স ৩০ কোটি টাকা ঋন নেয় যা সুদসহ বর্তমান পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ৪০ কোটি টাকা। দায়িত্ব এড়াতে জনতা ব্যাংক দ্রুত মামলা করে। আবার ঋন অবলোপনও করে অথচ আদায়ের উদ্যোগ নেই। বিক্রমপুর ট্যানারি, স্বাধীন ট্যানারি, ইউসুফ ট্যানারি, এশিয়া ট্যানারি, জামিলা ট্যানারি জনতা ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে আর ফেরত দেয় নি বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

ইউসুফ লেদার, সমতা লেদার, মোনানী লেদার, নিশাদ ট্যানারি, গ্রীন অ্যারা বিশালাকারের টাকা  জনতা ব্যাংক থেকে বের করে নেয় এবং তা আর ফেরত দিচ্ছে না বলে সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘদিন টাকা না পেয়ে আদায় অযোগ্য হিসেবে তা অবলোপন করে। কী কী শর্তে অবলোপন করা হয়েছে এবং এই ক্ষেত্রে ব্যাংকের বোর্ড সভায় যেসব কর্মকর্তা ছিলেন তাদেরকে তলব করে তদন্ত করলে বের বয়ে আসবে অনিয়মের প্রকৃত চেহারা।

ব্যাংকটির এমডি এবং সিইও আবদুস সালাম আজাদ এসব অনাদায়ী ঋনের টাকা আদায়ে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের জিজ্ঞাসা। এসব অনাদায়ী খাতে ঋন প্রদানের সময় যেসব কর্মকর্তা বোর্ড সভায় ছিলেন তাদের ব্যাপারে কোন তদন্ত করে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া সংশ্লিষ্টদের দাবি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়  বছরের পর বছর অনিয়ম ও দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তাদের বাড়ি-গাড়ি ও সম্পদের অভাব নেই। এক সময় পিয়ন ছিলেন। সুযোগ বুঝে এক পর্যায়ে সিবিএ নিতা বনে গিয়ে পাহাড় সম সম্পদের মালিক হয়েছেন জনতা ব্যাংকের সিবিএ নিতা রফিকুল ইসলাম। বহুল আলোচিত এননটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনুস বাদলকে মোটা অংকের টাকা ঋন পেতে সহায়তা করেন এই সিবিএ নেতা রফিকুল ইসলাম। বিনিময়ে ইউনুস বাদল তাকে দিয়েছেন ঋনের অনুপাতে উপটৌকন। জনতা ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।

এভাবে কত বাদলকে কত টাকা ঋন পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছেন তা সুষ্ঠু তদন্ত করলে আয়নার মত পরিস্কার হবে। এই সিবিএ নেতা কত টাকার মালিক হলে নিজ গ্রামে একটি মসজিদ নির্মানে শ কোটি টাকা ব্যয় করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলে তার সম্পদের পরিমাণ নির্ধারন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।

একজন কৃষক মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ঋন পরিশোধ করতে না পারার কারণে তার নামে মামলা করে হয়রানি করে অনেক ব্যাংক। অথচ হাজার কোটি টাকার খেলাপি গ্রাহকের সাথে কিছু কিছু ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডি মর্যাদার কর্মকর্তাগণ পাঁচ তারা হোটেলে ভোজ বিলাশ করছেন। জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋনের অবস্থা ক্রমশ: ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

অনিয়ম দুর্নীতি রোধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে। জনতা ব্যাংকের খেলাপি ও অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে এমডি এবং সিইও আবদুস সালাম আজাদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার বরাবর রেজিষ্টার্ড ডাকযোগে পত্র প্রেরন করে অদ্য পর্যন্ত কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি। এই ব্যাপারে এই প্রতিবেদকের তদন্ত অব্যহত আছে। আগামি সংখ্যায় থাকছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

sixteen − seven =