নোয়াখালীতে ইউপি নির্বাচন পূর্ব সহিংসতায় নিহত ২, আহত ৪

0
351

ইয়াকুব নবী ইমন, নোয়াখালী প্রতিনিধি: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগেই নোয়াখালীতে সহিংসতা শুরু হয়েছে। মাত্র ১২ ঘন্টার ব্যবধানে জেলার হাতিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার ও সুবর্নচরে প্রবাসীকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পৃথক এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪ জন, আর পুলিশ গ্রেফতার করেছে ২ জনকে। সুত্র জানায়, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চরঈশ্বর ইউনিয়নে রবিন্দ্র চন্দ্র দাস (৪৮) নামের এক ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করেছে দূর্বত্তরা। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, দলীয় কোন্দল ও পূর্ব বিরোধের জেরে এ হত্যাকান্ড হয়েছে বলে দাবী নিহতের স্বজনদের। বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে খাসেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ইউপি  চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম আজাদের বাড়ীর সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রবিন্দ্র চন্দ্র্র দাস চরঈশ্বর ৩নং ওয়ার্ডের স্বতিষ চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি ওই ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য (মেম্বার) ও উপজেলা আ.লীগের সদস্য। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি আল আমিনসহ  মোটরসাইকেল যোগে চরঈশ্বর থেকে ওছখালী নিজের বাসায় আসতেছিল রবিন্দ্র চন্দ্র দাস। পথে তাদের মোটরসাইকেলটি চরঈশ্বর প্রধান সড়কের খাসেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম আজাদের বাড়ীর সামনে আসলে একদল দূর্বৃত্ত তাদের লক্ষ্য কর কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে গতিরোধ করে। এসময় মোটরসাইকেলের পিছনে থাকা আল আমিন পিছন দিকে দৌঁড়ে পালিয়ে  গেলেও হামলাকারীদের হাতে আটকা পড়ে রবিন্দ্র। হামলাকারীরা প্রথমে রবিন্দ্রকে গুলি ও পরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে এবং তার হাতের কব্জি ও রগ কেটে  ফেলে যায়। পরে একদল টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রবিন্দ্রের লাশ উদ্ধার করে।

রবিন্দ্রের সাথে থাকা শ্রমিকলীগ নেতা আল আমিন অভিযোগ করে বলেন, আমরা  মোটরসাইকেল নিয়ে আসার পথে আজাদ চেয়ারম্যানের বাড়ীর সামনে আসার সাথে সাথে চেয়ারম্যানের ভাতিজা সোহেল, ছেলে অমি, রহিম ডাকাত ও নাজিমসহ কয়েকজন আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। এসময় আমরা মোটরসাইকেল রেখে পালানো চেষ্টা করলে তারা রবিন্দ্রকে ধরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।

নিহতের পিতা স্বতিষ চন্দ্র দাস বলেন, রাতে বাংলা বাজার থেকে ওছখালি যাচ্ছিল রবিন্দ্র। রাতে তার মোবাইল বন্ধ পেয়ে ওছখালি বাসায় কল দিয়ে জানতে পারি সে বাসায় যায়নি। এর কিছুক্ষণ পর একজন মোবাইলে জানায় রবিন্দ্রকে কেটে ফেলছে।  

চরঈশ্বর ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাশেদ উদ্দিন জানান, আব্দুল হালিম আজাদ  চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার একক স্বেচ্ছাচারিতার কারণে রবিন্দ্র মেম্বারসহ আমাদের সাথে তার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। এরপর ১১জন মেম্বার একসাথে লিখিতভাবে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেয়। এনিয়ে আজাদ চেয়ারম্যান আমাদের হত্যার হুমকি দেয়। এর জের ধরে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবী করেন তিনি।

নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম আজাদ বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকা রয়েছি। এ হত্যাকান্ডের সাথে আমি, আমার পরিবারের ও দলের কোন লোকজন জড়িত নেই। একটি চক্র তাকে ফাঁসানোর  চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

হাতিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, রাতে রবিন্দ্র চন্দ্র দাস ও আল আমিনসহ আরও দুইজন তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে ওছখালি আসার পথে এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে সুবর্ণচরে পূর্ব শত্রুতা ও ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে  প্রবাস ফেরত কামাল উদ্দিনকে(৩৪) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। নিহত কামাল উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের চরকাজী মোখলেস গ্রামের ওবায়দুল হকের ছেলে এবং ২ সন্তানের জনক।

বুধবার দুপুরে উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের চরকাজী মোখলেস গ্রামের মালেকের চা দোকানের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানায়, বুধবার দুপুরে চরওয়াপদা ইউনিয়নের চরকাজী মোখলেস গ্রামের মালেকের দোকানে বসে কামাল উদ্দিন চা খাচ্ছিল।  ওই সময় একই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী একাধিক মামলার আসামী  মাইন উদ্দিন, রফিক, ইসমাইল, আব্দুর রহীম, জসিম, জসিম উদ্দিন তুষার, আহসান উল্লাহ, আবুল কালাম ও মাসুদের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একদল সন্ত্রাসী কামালের ওপর অতর্কিত হামলা করে।

এ সময় হামলাকারীরা কামাল উদ্দিনের মাথায় উপর্যুপরি রামদা দিয়ে আঘাত করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কামালকে বাঁচাতে দোকানদার মালেক, স্থানীয় রফিক ও কালু মিয়া এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তাদেরকেও পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। ঘটনাস্থলে থাকা কামালের একটি মোটর সাইকেলকেও ভাঙচুর করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

পরে কামালসহ আহতদের উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতল ভর্তি করা হয়। সেখানে কামালের অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লায় তার মৃত্যু হয়। 

নিহতের  ছোট ভাই বেলাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, তার ভাই ওমান প্রবাসী কামাল গত ২ মাস ৯ দিন আগে দেশে আসে। আগামী ২১ জুন উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে নিহত কামাল চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী জয়নাল আবেদীনের পক্ষে ভ্যানগাড়ী মার্কায় এলাকায় ভোট চায়। এতে সে অপর তিন ইউপি সদস্য প্রার্থীদের রোষানলে পড়ে।

ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী আব্দুর রহীমের ভাই কবির পুলিশে চাকরি করে। সে তার ভাইয়ের মদদে, প্রভাবে এলাকায় অনিয়ম করে। গত মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় কাজী নূরনবী দরবেশের বাজারে ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী আব্দুর রহীম ও তার সমর্থকরা কামালকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়। এই নির্বাচন নিয়ে এর আগে কামালের সাথে তাদের কথা কাটাকাটি ও মারামারির ঘটনা ঘটে।

প্রতিপক্ষের একটি মামলায় নিহত কামাল ২৪ দিন কারাগারে ছিল। গত কিছু দিন আগে সে জামিনে মুক্তি পায়। ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী আব্দুর রহীম, সেলিম মেম্বার, মাসুদের নির্দেশে আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

চরজব্বার থানার ওসি জিয়াউল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তাৎক্ষণিক এ ঘটনায় ইসমাইল ও আবুল কালাম নামে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × two =