আক্ষরিকতা নিয়ে অনেকেই অনেক সময় অনেক কথা বলে থাকেন। এটাকে সাধারণত অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা হয় এবং কিছুটা জ্ঞানহীনতা হিসাবে ধরা হয়। এজন্য দেখা যায় অনেকেই অনেক সময় অনেককে আক্ষরিকতাবাদী হিসাবে অভিযুক্ত করে থাকেন। প্রকৃত ব্যাপার হল কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে আক্ষরিকতাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে; আবার কিছু ক্ষেত্রে আক্ষরিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং এর পেছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত থাকতে হবে। গত শতাব্দীর শেষ দশক ও এই শতাব্দীর প্রথম দশক ছিল সালাফী-মাদখালিয়্যার উত্থানের যুগ। আর এটা হল আক্ষরিকতার নতুন সংস্করণ। আমাদের আগের উলামাদের মধ্যেও আক্ষরিকতাবাদী হিসাবে অনেকে অভিহিত হয়েছিলেন। যেমন ইমাম আলী ইবন হজ়ম আল-আন্দালুসীকে [ أبو محمد علي بن احمد بن سعيد بن حزم] – রহিমাহুল্লাহ – অনেকে আক্ষরিকতাবাদী হিসাবে গণ্য করে থাকেন। তবে বর্তমানের আক্ষরিকতাবাদী আক্ষরিকতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন।
নমাজ়ে পাদ দেয়া সংক্রান্ত একটা হাদীসের বর্ণনায় রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন যে যতক্ষণ আওয়াজ না হবে এবং গন্ধ পাওয়া না যাবে ততক্ষণ কোন সমস্যা নেই। আমার এক মাদখালী ছাত্র একবার আমাকে বলল, “উস্তাজ় নমাজ়ে পাদ দিলে যদি গন্ধ পাওয়া না যায় এবং আওয়াজ না হয় তাহলেতো ওজ়ু ভাঙবে না এবং নমাজ় শুদ্ধ হবে, তাই না? কারণ রসূলুল্লাহ (ﷺ) এমন বলেছেন।” আমি পরে আরো বেশ কিছু নব্য সালাফী ভাইদের সাথে আলাপ করে দেখলাম যে তাঁরা সবাই এমন মত পোষণ করেন।
লা-হাওলা ওয়ালা-কুওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ। আমি আমার ছাত্রটাকে বললাম, “রসূলুল্লাহ (ﷺ) এই হাদীস কোন প্রসঙ্গে বলেছিলেন? এটা কি তিনি সে সময় বলেন নি, যখন একজন সাহাবী নমাজ়ে বায়ূ বেরিয়ে গেল কিনা এরকম সন্দেহ হলে কী করবেন এমন প্রশ্ন করেছিলেন?” সে বলল, হ্যাঁ বোধক জবাব দিলে আমি বললাম, “এই শব্দ এবং গন্ধের ব্যাপারটা শুধু কারো যখন সন্দেহ হবে তখনকার জন্য প্রযোজ্য, কিন্তু তুমি যখন নিশ্চিত জানো যে তুমি বায়ূ ত্যাগ করেছো তখন আওয়াজ আর গন্ধের কোন দরকার নেই। তোমার ওজ়ু তখন ভেঙে গিয়েছে।”
আজকে একজন ভাই বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য(!) মুফতি সাহেবের এক ভিডিও পাঠালেন। তাতে দেখলাম তিনি এক হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে জানাচ্ছেন যে কুরবানী দাতা যদি কুরবানীর পশুর চামড়া নিজে বিক্রি করেন তবে তাঁর কুরবানী হবে না। অথচ হাদীসের উদ্দেশ্য ছিল কুরবানী দাতা যদি চামড়া বিক্রি করে তা নিজে ভোগ করেন তবে কুরবানী থেকে তিনি কুরবানী দেয়া মাল আবার ফিরিয়ে নিলেন।
অর্থাৎ তিনি কুরবানী দিলেন না। একইভাবে কুরবানীর পশুর গোশ্ত দিয়ে কসাইয়ের পারিশ্রমিক দেয়াও নিষিদ্ধ। কিন্তু কুরবানী দাতা যখন চামড়া বিক্রি করে তার মূল্য মিসকীন বা অন্য কোন ন্যায্য খাতে দান করে দিচ্ছেন তখন এটা কুরবানীর ভেতরেই থাকছে। কিন্তু মুফতি সাহেব এটাকেও কুরবানী বাতিলের কারণ বানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহুল মুস্তা‘আন।