ইভ্যালি দিচ্ছে না টাকা, মিলছে না ভাউচারের পণ্য

0
631

ইভ্যালির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (মার্চেন্ট) কেউ কেউ গ্রাহকদের পণ্য দিচ্ছে না। ইভ্যালির দেওয়া ভাউচার দিলেও প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের বলছে ইভ্যালির কাছ থেকে পণ্য বুঝে নিতে। কারণ, ভাউচারের বিপরীতে ইভ্যালি তাদের পাওনা পরিশোধ করেনি। আবার চেক দিলেও ওই চেক ব্যাংকে জমা না দিতে বলছে ইভ্যালি। কারণ, তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে টাকা নেই। টাকা পাচ্ছে না বলে পণ্য সরবরাহকারীদের কেউ কেউ ইভ্যালির দেওয়া গিফট ভাউচারের বিপরীতে পণ্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এসব নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে কয়েক দিন ধরে। এত দিন মূল অভিযোগ ছিল, গ্রাহকদের একটা অংশ সময়মতো পণ্য পাচ্ছেন না। গত বুধবার দেশি পোশাকের ব্র্যান্ড ‘রঙ বাংলাদেশ’এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ইভ্যালি যে গিফট ভাউচারগুলো কিনেছিল, সেগুলো নিয়ে বিশেষ সমস্যায় পড়েছে তারা। গিফট ভাউচার নিলেও সিংহভাগ ক্ষেত্রেই টাকা পরিশোধ করেনি ইভ্যালি। অনেকবার যোগাযোগ করলেও ইভ্যালি এ ব্যাপারে সন্তোষজনক উত্তর দেয়নি। ফলে ইভ্যালির এই ভাউচার ব্যবহার করে তারা এখন কেনাকাটা করতে দিতে পারছে না।

‘ক্রেতাদের অসুবিধার জন্য দুঃখিত-লজ্জিত’—এ কথা উল্লেখ করে রঙ বাংলাদেশ আরও বলেছে, ইভ্যালির কাছ থেকে পাওয়া টাকার অনেক বেশি পণ্য গিফট ভাউচারের বিপরীতে ক্রেতাদের দেওয়া হয়েছে রঙ বাংলাদেশের সুনামের স্বার্থে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতা ও রঙ বাংলাদেশ উভয়ই এখন ভুক্তভোগী।

এখন বাধ্য হয়েই গিফট ভাউচার ব্যবহার করে কেনাকাটা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। টাকা পরিশোধের প্রক্রিয়া ইভ্যালি চলমান করামাত্রই গিফট ভাউচারগুলো সচল করা হবে।

রঙ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৌমিক দাস গতকাল বলেন, ‘অনেক টাকা ইভ্যালিতে আটকে রয়েছে। আমরা নিরুপায় হয়েই এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।’ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও একই ধরনের অসুবিধায় আছে বলে জানা গেছে।

এর আগে ব্র্যাক, সিটিসহ বেশ কটি ব্যাংক তাদের কার্ডের মাধ্যমে ইভ্যালিসহ আরও বেশ কয়েকটি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। আর ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মনীতির মধ্যে আনতে ৪ জুলাই দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই দিন থেকেই তা কার্যকর। এতে বলা হয়েছে, ক্রেতা-বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে ক্রয় আদেশ দেওয়ার ৫ দিনের মধ্যে, ভিন্ন শহরে থাকলে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে হবে। পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে, মূল্য পরিশোধের ১০ দিনের মধ্যে ক্রেতার পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে।

ওই নির্দেশিকা জারির পর এখন গ্রাহকের পণ্যের ক্রয়াদেশের বিপরীতে সরাসরি অর্থ পাচ্ছে না ইভ্যালি। অন্যদিকে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও পাওনা টাকা দিতে পারছে না। এ অবস্থায় কয়েক দিন ধরেই পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংকে চেক জমা না দিতে অনুরোধ করছে ইভ্যালি। মার্চেন্টদের পাঠানো খুদে বার্তায় তারা বলছে, ‘ইভ্যালির হিসাব বিভাগ থেকে বলছি। ইভ্যালি থেকে যে চেক দেওয়া হয়েছে, তা ব্যাংকে এখন জমা দেবেন না। কবে জমা দেবেন, কলসেন্টার থেকে কল দিয়ে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। ওই দিনই আপনার চেকের টাকা ব্যাংকে দেওয়া থাকবে।’

ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল গতকাল বলেন, ‘ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে, এর মধ্যে রঙ বাংলাদেশও একটি। অসুবিধার বিষয়টা সাময়িক। এখন যেহেতু একটা অস্থির সময় চলছে, ইভ্যালি নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে একজন ব্যবসায়ীর পাশে আরেকজন ব্যবসায়ীর বরং দাঁড়ানো উচিত ছিল।’

ব্যাংকে চেক জমা দিতে না বলার কারণ জানতে চাইলে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, দি সিটি ব্যাংকের চেক পাস হলেও অন্য ব্যাংকেরগুলো হচ্ছে না। গ্রাহকেরা তাঁদের হিসাব নম্বরগুলো ইভ্যালিকে দিয়ে রাখলে এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যাংক পরিবর্তন করে দেওয়া হবে। আর এখন তো নতুন নিয়মে চলছে সব। পুরোনো বিষয়গুলোর সমাধান করতে তিন থেকে চার মাস লেগে যাবে।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine + 8 =