মাদার তেরেসা হেলেনার ঢাল “জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন”

0
1480

আরিফুল ইসলাম:বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বিতর্কিত হেলেনা জাহাঙ্গীর অপকৌশলের মাধ্যমে নিজেকে “মাদার তেরেসা”, “পল্লী মাতা”, “প্রবাসী মাতা” হিসেবে পরিচিতি পেতে “জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন”কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘবদ্ধ চক্র ভূয়া খেতাব এর অপপ্রচার চালাতেন। 
শুক্রবার (৩০ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 


আল মঈন বলেন,ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানিসহ বিভিন্ন  অভিযোগে গ্রেফতার হেলেনা জাহাঙ্গীরবিভিন্ন দেশি/বিদেশী সংস্থা ব্যক্তিবর্গ হতে “জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন” নামে অর্থ সংগ্রহ করতেন। যা মানবিক সহায়তায় ব্যবহারের চেয়ে তার খেতাব প্রচার / প্রচারণায় বেশি ব্যবহার করা হতো । তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা রেখে নিজের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেন। তার প্রায় ১২ ক্লাবের সদস্যপদ রয়েছে। 


র‌্যাব জানায়,গ্রেফতারকৃত হেলেনা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের মানহানি ও সুনাম নষ্ট করেছেন। এছাড়া তিনি মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন। তিনি খ্যাতি লাভের আশায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে ছবি তোলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সম্মানিত ব্যক্তিবর্গদের বিব্রত করতেন। অনৈতিক পন্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে খ্যাতনামা হিসেবে উপস্থাপন করতে চতুরতার আশ্রয় গ্রহণ করতেন। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তিনি একটি সংঘবদ্ধ চক্র তৈরী করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে “ফেসবুক লাইভ” এ এসে অযাচিত ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করতেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন সম্মানিত ব্যক্তিদের কটাক্ষ ও উত্তক্ত করতেন। পরবর্তীতে ফোন করে তাদেরকে হেয় করতেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তার অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেন। 


প্রবাসী (আলোচিত সেফুদা) যিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে দেশবাসীর নজর কাড়তে চেষ্টা করেন। সেই সফুদার সাথে  নিয়মিত যোগাযোগ ও লেনদেন রয়েছে বলে র‌্যাবকে জানান হেলেনা  । সেই আলোচিত সেফুদা তাকে “নাতনি” হিসেবে সম্বোধন করে থাকে বলেও  জানান তিনি।

 
র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান , তার একটি উচ্চবিলাসী উদ্দেশ্য রয়েছে। যা বাস্তবায়ন করতে তিনি নানাবিধ অবৈধ পন্থা, অপকৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। যারা অর্থের বিনিময়ে বা অবৈধ সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে এহেন অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত রয়েছে। এই সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত রয়েছে। যারা বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় রয়েছে। 


এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই)  দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান-২ এর ৩৬নং রোডের ৫নং বাড়ী ‘জেনেটিক রিচমন্ড’ এ অভিযান পরিচালনা করে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে (৪৯) গ্রেফতার করে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১ এর আভিধানিক দল।

দীর্ঘ চার ঘণ্টার অভিযানে ১৯ বোতল বিদেশী মদ, ০১টি ক্যাঙ্গারুর চামড়া, ০১টি হরিণের চামড়া, ০২টি মোবাইল ফোন, ১৯টি চেক বই ও বিদেশী মুদ্রা, ০২টি ওয়াকিটকি সেট এবং জুয়া (ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জামাদি ৪৫৬টি চিপস উদ্ধার করে র‍্যাব। এরপর রাত ১২টার দিকে তাকে আটক করা হয় এবং পরে র‍্যাব সদরদফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। 
পরবর্তীতে মধ্যরাতে তার জয়যাত্রা টেলিভিশন ষ্টেশনে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব-৪ বিটিআরসিকে নিয়ে  অনুমোদনবিহীন “জয়যাত্রা টেলিভিশন” ষ্টেশন সিলগালা করে এবং অবৈধ মালামাল জব্দ করে।

 জানা যায়,হেলেনা জাহাঙ্গীর টেলিভিশনের কর্মী/সাংবাদিক নিয়োগের নামে চাঁদাবাজি ও প্রতারনা করতেন। এ ধরণের একটি চাদাবাজি সংক্রান্ত ফোনালাপ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বর্ণিত অভিযানে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত নথিপত্রও জব্দ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারকতের একজন জেলা প্রতিনিধি চাঁদাবাজি সংক্রান্ত অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে মর্মে তিনি জানান।

শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলায় পুলিশের চাওয়া পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। 


হেলেনা জাহাঙ্গীরের  বাসায় ক্যাঙ্গারুর চামড়া, মাদক ও ক্যাসিনো সামগ্রী পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে র‍্যাব-১ রাজধানীর গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/৩১ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছে। এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ  আইনের ৩৬(১) ও ২৪(খ); ততসহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ B এর ১(B);ততসহ ২০০১ সালের বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধনী/২০১০) এর ৩৪ (খ); ততসহ ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষন ও নিরাপত্তা) আইন এর ৩৪(খ) ধারায় অপর একটি মামলা দায়ের করেছেপাশাপাশি বিটিআরসি ও তথ্য মন্ত্রণালয়েঅনুমোদন ছাড়া জয়যাত্রা নামে টেলিভিশন চ্যানেল পরিচালনার কারণে তার বিরুদ্ধে র‍্যাব-৪ রাজধানীর পল্লবী থানায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন এর ৩৫, ৫৫, ৭৩ ধারায় একটি মামলা রুজু করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × four =