হাসপাতাল-ক্লিনিকের বানিজ্য ও দালালচক্র বেড়েই চলেছে

0
709

কাজি আরিফ হাসানঃ বর্তমান দেশে অনেক সরকারি, বে-সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে।এ সব হাসপাতাল গুলোতে সেবার মান কতটুকু সঠিক ভাবে পাচ্ছে রোগীরা? বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক ঘুরে সরেজমিনে তথ্য মেলে, চিকিৎসার মান অত্যান্ত নাজুক। কেনো এমন হবে আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা? দেশে অনেক ভুক্তভোগী রোগীদের অভিভাবক ও স্বজনরা জানান, হাসপাতাল কতৃপক্ষরা টাকাও নেবে আবার সুচিকিৎসাও দেবে না এটাই বা কেমন? আর হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো পরিচালকরা কেনো বা সাঠিক ভাবে নিয়ম মানছে না বা কতটুকুই মানছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোশিয়েশনের(বিএমএ) নীতিমালা? তবে মাঝে মাঝে কোন কোন হাসপাতালে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করতে দেখা গেলেও এর অধিকাংশ(৮৫ ভাগ হাসপাতাল) থেকে যায় ধরা ছোয়ার বাহিরে এবং দালালদের আটক করলে অন্যান্য হাসপাতাল গুলোয় দালালদে দৌরাত্ম থেকেই যায়া ।

দেশের হাসপাতালে দালালরাই বা কেনো সম্পূর্ণ রূপে নির্মূলন হচ্ছে না কেনো? এই হাসপাতালের দালালরাই বা কাদের ছত্রছায়ায় থেকে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে? এমনও দেখা যায় বিশেষ করে সরকারি হাসপাতাল গুলোতে কোন মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন হলে তখন ব্লাড ব্যাংকে রক্তের অনুসন্ধান করলে সেখানেও পাওয়া যায় না ঠিকই ভাবে সেবা দালালদের কারনে, তবে দালালদের মাধ্যমে টাকার বিনিময় আবার নেশা আশক্তদের দূষিত ব্লাড ঠিকই মেলে।

এসব দূষিত রক্ত বা ব্লাড রোগীদের শরিরে প্রবেশ করানো হলে পরবর্তীতে রোগীদের শরিরে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়ারও তথ্য মেলে, হাসপাতাল গুলোর এমন ঘটন শুধু রাজধানী ঢাকাতে নয় ঢাকার বাহিরে এমন অবস্থা দেখা যায়। শুধু তাই নয় কোন কোন হাসপাতালে রোগীদের আধুনিক চিকিৎসার জন্য সবধরনের মেশিনারিজও(যন্ত্রাংশ) থাকে না আর যা থাকে তাও আবার অকেজো,আবার এমনও তথ্য মেলে সে মুহুত্বে অন্য ক্লিনিক বা হাসপাতাল থেকে ডাক্তারের দেয়া রোগীর জন্য পরিক্ষার প্রতিবেদন করে আনতে হয় রোগীর স্বজনদের। এ সমস্ত হাসপাতাল গুলোতে রোগী ভর্তি অবস্থায় কোন রোগীর যদি ইমারজেন্সি কোন সমস্যা হলে ডাক্তারকে ডাকতে ডাকতে হয়রানির শিকার হতে হয় রোগীর স্বজনদের।

আবার, ঢাকা শহরের কিছু হাসপাতাল ঘুরে আরো দেখা যায় প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা হাসপাতাল গুলোতে আধুনিকায়ন ও চিকিৎসার যন্ত্রাংশ ক্রয়ের জন্য সরকারি বাজেটে বরাদ্দ হলেও তা যেনো লুটপাটে পরিনত হয়।স্বাস্থ্য বিভাগ,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়,স্বাস্থ্য সচিব,স্বাস্থ্য মন্ত্রী,বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোশিয়েশন এতো বিভাগ থাকতেও চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের দেশে কেনো এমন হবে? অনেক ভুক্তভোগীরা জানান, হাসপাতালে তো একটা মানুষ অসহায় হয়েই যায়,আর টাকা দিয়েই চিকিৎসা নেয় তারপরও কেনো সু-চিকিৎসা ব্যবস্থা পাচ্ছে না এটা কেনো? এটা কি কোন স্বাধীন দেশে স্বাধীন মানুষের প্রাপ্য, আর হাসপাতাল গুলোতে বিশেষ করে সরকারি হাসপাতাল গুলো কেনো দালালদের কবলে থাকবে ? টাকা না হলে হাসপাতালে সিট পাওয়া যাবেনা,ভালো চিকিৎসাও মেলবে না এটা কেমন কথা? তাহলে গরীব অসহায়রা টাকাও দেবে আবার সুচিকিৎসা না পেয়ে ধুকে ধুকে মারা যাবে এটাই কি কাম্য? একটা দেশের মানুষের ৫টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে চিকিৎসা একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক চাহিদা।

এদিকে সমাজে অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের জন্য সরকারি হাসপাতাল থাকলেও সে সব হাসপাতাল গুলো চিকিৎসা সেবা নিয়ে দূর্নীতিতে দেশে শীর্ষে অবস্থান করছে, এটা কেমন কথা? এদিকে দেখা যায় রাজধানীতে ধনী শ্রেনিদের জন্য গড়ে উঠেছে স্কয়ার হাসপাতাল,শামরিতা হাসপাতাল, এ্যাপলো, এভার কেয়ার হাসপাতালসহ নামিদামি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক সেখানেও চলে রোগীদের চিকিৎসা সেবার নামে মোটা অংকের টাকার হাতিয়ে নেয়ার খেলা। আছে ঢাকা উত্তর সিটিতে আছে আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাপাতাল,মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,উত্তরা ৭ নং সেক্টরে আরএমসি হাসপাতাল লিঃ, ক্রীসেন্ট হাসপাতাল, আর এমসি হাসপাতাল লিঃ, দক্ষিণখান কে.সি. হাসপাতাল, তারেক মেডিকেল এন্ড ডায়াগনস্টিক, পারিবারিক স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক, চাঁদের হাসি ক্লিনিক, আর্ক মেডিকেল হাসপাতালসহ প্রাইভেট চিকিৎসা কেন্দ্র, এ চিকিৎসা কেন্দ্র গুলো ঘুরে দেখা যায় রোগীদের জন্য কেবিন ভাড়া অতিরিক্ত এবং হাসপাতালের সাইনবোডে যে সকল সনামধন্য ডাক্তারদের নাম লেখা আছে তারাও ঠিক ভাবে আসেনও না। এমনকি এসব হাসপাতাল গুলোর ইনডোর ও আউটডোরে ডাক্তারদের ভিজিটও তুলনা মুলক অনেক বেশি যা মধ্য বিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য অতি কষ্টসাধ্য।

এবার একটু ঘুরে দেখা যাক ওষুধ বানিজ্য,এ যেনো অন্য জগৎ, হাসপাতাল রোগী দেখানোর পর হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে রোগী নিয়ে বের হলেই হুমড়ি খেয়ে বসে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিরা এবং রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ডাক্তারের লেখা প্রেসক্রিপশনে তাদের কোম্পানির ওষুধ চিকিৎসক লিখেছেন কিনা তার ছবি তোলার জন্য। এছাড়া হাসপাতাল গুলোর ভিতরে ও বাহিরে গড়ে উঠতে দেখা যায় কিছু ফার্মাসি যেখানে বিক্রি হয় ডাক্তারে প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধ চড়া দামে তখন রোগী স্বজনেরা বাধ্য হয়ে সে সব ওষুধ কিনতে বাধ্য হন। এমনকি এ দেশে দেখা যায় অনেক মানবাধিকার সংস্থা আর হাসপাতাল গুলোতে সু চিকিৎসার অভাবে মানুষ অসহায় হয়ে কষ্ট পাচ্ছে আর তখন সে সব মানবাধিকার সংস্থাও অসহায় রোগীদের পাশে এগিয়ে আসতেও দেখা যায় না।

এ সকল বিষয় গুলো হাসপাতাল কতৃপক্ষের বেহাল্লাপান ও দালালদের দৌরাত্ম বিরুদ্ধে, তখন দেশে গড়ে ওঠা মানবাধিকার সংস্থা গুলোও বা কোথায় থাকে? সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারাই বা কেনো তাদের প্রাইভেট ক্লিনিক ও চেম্বার নিয়ে ব্যস্থ থাকবেন আর মোটা অংকের টাকা আয়ের জন্য একজন রোগীকে তার ভিজিটিং কার্ড দিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে আসার পরামর্শ দেবেন? ধরা যাক এধরনে অসাধু চিকিৎসকদের কাছে যদি রুগী তাদের হাতে ব্যাথার জন্য গেলে তারা মনে করেন কমিশনের আশায় ৮/১০ টা টেস্টই দেয় এবং প্রেসক্রিপশনে আবার সংকেতও দিয়ে দেন এধরনে অসাধু চিকিৎসকরা কারন ঐ ল্যাব থেকে যে প্রতিমাসে মোটা অংকের কমিশনে জন্য ।

সাধারন মানুষরে একটাই আশা মানুষ অসহায় হয়ে শেষ ভরসায় যখন কোন হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে স্বরনাপন্ন হয় তখন চিকিৎসকরা বা হাসপাতাল কতৃপক্ষ কেনো এমন সুযোগটা নিয়ে রোগীর ওপর নিরবে নির্যাতন করবেন তা শিক্ষিত সমাজের বধগম্য নয়। এমনও তথ্য মেলে চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারনে অনেক রোগীরকে মৃত্যু কোলেও ঢুলে পড়তে হয় এটাই বা কেনো হবে? এছাড়া সরকারি হাসপাতালে কোন রোগী চিকিৎসাধীন থাকাবস্থা তার মৃত্যু হলে তার হাসপাতাল খরচ পরিশোধ করার পরও মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে বাহিরে বের করতে হলেও (ডের্থ সার্টিফিকেটের জন্য) টাকা দিতে হয় বলে জানা যায়। তাহলে কি বাংলাদেশে চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থা কি অনুন্নত? এছাড়া দেখা যায় দেশে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা তাদের শারিরীক কোন সমস্যা হলেই তাঁরা আমেরিকা, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রে যে চিকিৎসা নেন, তাহলে কি তারা আমাদেশে চিকিৎসক ও চিকিৎসার ভালো না বা এদেশের চিকিৎসকদের ওপর ভরসা রাখতে পারেন না বলেই সেই সব রাষ্ট্রে যেয়ে চিকিৎসা নেন আর তারাই যদি দেশে চিকিৎসক দের সেবা ওপর ভরসা না রাখতে পারেন তাহলে সাধারন মানুষ কি করবে? বর্তমান করোনা সংক্রামণ একটা জাতীয় সমস্যা আর এদিকে কোন রোগী যদি কোরনায় আক্রান্ত নাও হয় অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তাদেরকেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সেই সাথে।

সঠিক চিকিৎসার পাচ্ছে না বেড,স্থান হচ্ছে হাসপাতালের বারান্দায় আবার অনেক হাসপাতালে দালালদের টাকা দিলে সেবা মেলে রোগীদের এ অভিযোগেরও তথ্য মেলে। সাধারন মানুষে একটা জোরালো দাবি এ ধরনে চিকিৎসা সেবা দূর্নীতি থেকে অবশ্যই পরিত্রা পেতে হবে দেশের মানুষের। চিকিৎসা একটা সমাজের সেবা মুলক পেশা আর এটাকে ভিত্তি করে যেনো কোন অসাধু চিকিৎসক বা হাসপাতাল গুলো রোগীদের অসহায়ত্বে সুযোগ নিয়ে লুটতে না পারে।

সরকার ও বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোশিয়েশ কর্তৃপক্ষ যথাযথ গুরুত্বের সাথে দেখে অসাধু ডাক্তার ও হাসপাতাল সেবা প্রতিষ্ঠানের নামে যে সব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেই সে সব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষদের চিহ্নত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দেখতে চায় বর্তমান বিবেকবান সমাজ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 + 20 =