সমাজের বিকাশ ঘটাতে গণমাধ্যমে নৈতিকতার চর্চা গুরুত্বপূর্ণ: তথ্যমন্ত্রী

0
581

সমাজ ও রাষ্ট্রের বহুমাত্রিক বিকাশে গণমাধ্যমের প্রসারের পাশাপাশি এক্ষেত্রে নৈতিকতার চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘সাংবাদিকতায় বঙ্গবন্ধু’ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও সমাজের বহুমাত্রিক বিকাশের স্বার্থে গণমাধ্যমের প্রসার ও স্বাধীনতা যেমন প্রয়োজন, একইসাথে সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যমের নীতি-নৈতিকতাও আবশ্যক। তা না হলে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রসারের সাথে নীতি-নৈতিকতা থাকলেই কেবল গণমাধ্যমের উদ্দেশ্য সফল হবে। আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যে সমস্ত পত্রপত্রিকা প্রকাশ হয় না, সেগুলোর ডিক্লারেশন রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন দেখা দেয়। এগুলো ভূতুড়ে পত্রিকা। এখানে নিয়োগকৃতদের বেতন দেয়া হয় না, এরা চাঁদাবাজিসহ নানা কিছুতে লিপ্ত হয় এবং সেই বদনামটা সাংবাদিক সমাজের ওপর বর্তায়, যা কখনোই সমীচীন নয়। এজন্য আমরা ভূতুড়ে পত্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছি।

অনলাইন গণমাধ্যমকে আজকের পৃথিবীর বাস্তবতা হিসেবে বর্ণনা করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যথেচ্ছভাবে নয়, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তবেই অনলাইন গণমাধ্যমের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে। একইসাথে যেসমস্ত অনলাইন পোর্টাল সংবাদ ছাড়া ভিন্ন উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়, এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একইসাথে আইপি টিভির জন্য ছয়শ’ আবেদন পড়েছে।

একটি মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একজন বিচারপতিও মন্তব্য করেছেন, যা রায়ের অংশ। এক্ষেত্রটিও আমরা সর্তকতার সাথে দেখছি। মন্ত্রিসভায় পাস করা নীতিমালা অনুযায়ী আইপি টিভি কোনো সংবাদ প্রচার করতে পারবে না। খুব সহসা আইপি টিভি’র রেজিস্ট্রেশন দেয়ার পাশাপাশি ব্যবস্থাও নেয়া হবে।’

‘সাংবাদিকতায় বঙ্গবন্ধু’ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন সাংবাদিকবান্ধব নেতা ছিলেন। তখন যারা সাংবাদিক ছিলেন তারা বঙ্গবন্ধুকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন। সেই কারণে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও বাঙালির জন্য তার চিন্তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া সহজ হয়েছিল। স্বাধীন হওয়ার পর দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল।

বাসন্তী নামের একজন নারীকে শাড়ির চেয়ে বেশি দামের জাল পরিয়ে ছবি ছাপানোসহ কিছু পত্রপত্রিকায় ক্রমাগত অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে আসার পর সেই বাসন্তীর সাথে দেখে করেছেন, তার ঘরও পাকা করে দিয়েছেন। স্বাধীনতা উত্তর সে অবস্থায় বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর পত্রপত্রিকার সংখ্যা নির্ধারণের জন্য বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের নিয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন যেখানে ছিলেন মিজানুর রহমান, অধ্যাপক খালেদ, আনিসুজ্জামান খান, গিয়াস কামাল চৌধুরী, আমানুল্লাহ খান, আব্দুল গণি হাজারী, শুধুমাত্র সলিমুজ্জামান ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব। এর বাইরেও সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খানের পরামর্শ নেয়া হয়েছিল।

তাদের পরামর্শেই পত্রিকার সংখ্যা সীমিত করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সাংবাদিক বেকার হননি, বেশিরভাগ চাকুরিচ্যুতদের অন্যত্র চাকুরি দেয়া হয়েছিল। বাকিরা তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ভাতা নিয়ে আসতেন।’

হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সাংবাদিক সমাজের জন্য যা করেছেন তা অতীতে কেউ করে নি। করোনার মধ্যে এদেশে তিনি সাংবাদিকদের সহায়তায় যে উদ্যোগ নিয়েছেন, আশেপাশের দেশে তা করা হয়নি।

সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদের তমন কোনো জোরালো দাবি ছিল না, প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই স্থায়ী ব্যবস্থা করেছেন। আজ কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে হাজার হাজার সাংবাদিক উপকৃত হচ্ছে এবং এটি সাংবাদিকদের একটি ভরসাস্থল।

কেউ মৃত্যুবরণ করলে পরিবার ৩ লাখ টাকা পায়। সাংবাদিকদের পরিবারকে সহায়তার জন্যও নীতিমালার খসড়া হয়েছে।

ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানী সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খানের সঞ্চালনায় সভায় ডিবিসি২৪ চ্যানেলের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি এম শফিকুল করিম ও সাইফুল ইসলাম সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ও রাজু আহমেদ, যুগ্মসম্পাদক আরাফাত দাড়িয়া, নারী বিষয়ক সম্পাদক রীতা নাহার ও সদস্য মোতাহার হোসেন, মানিক লাল ঘোষ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

18 + 10 =