নকল ও ভেজাল ওষুধ : হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

0
587

মো. এনামুল হক লিটনঃ অধিক মুনাফালোভী একটি অসাধুচক্র নকল-ভেজাল ও নিন্মমানের ওষুধ তৈরী করে বাজারে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে মানুষের জীবন বিপন্ন করার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে জনস্বাস্থ্যকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। রাজধানী ঢাকা এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের গ্রাম-গঞ্জের ফার্মেসীগুলো ক্রেতাদের কাছে আসল ও কার্যকর ওষুধ বিক্রি করছে কিনা, তা এখন একটি বড় প্রশ্ন হয়ে ওঠেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) চলতি বছরের ১৫ আগস্ট রাজধানী ঢাকা, সাভার ও পিরোজপুরে পৃথক অভিযান পরিচালনা করে এ চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় পুলিশ চারটি নকল ওষুধ তৈরীর কারখানারও সন্ধান পেয়েছে। অভিযানে এ চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন নামি-দামী ব্র্যান্ডের জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ বহুল প্রচলিত ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ২০১৩ সালের ২০ এপ্রিল রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) অভিযান চালিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকার ভেজাল ওষুধ জব্দ করেছে। এ সময় নকল ওষুধ বিক্রি, অবৈধভাবে দোকানে সরকারি ওষুধ রাখা ও লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ বিক্রির সাথে জড়িত ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া একই বছরের ৯ জুন ওষুধ প্রশাসন ও র‌্যাব একইভাবে অভিযান চালিয়ে নামী-দামী ব্র্যান্ডের মোড়কে জীবন রক্ষাকারী নকল ওষুধ ও ওরস্যালাইন তৈরীর কারখানার সন্ধান পেয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নকল, নিষিদ্ধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ বিপুল পরিমান ওষুধ পাওয়ার অভিযোগে ২৮টি দোকান সিলগালা করে দেয়। গ্রেপ্তার করা হয় জড়িত ২০ জনকে।

ওই সময়ে বিভিন্ন পত্রিকা-পল্লবে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, শুধু রাজধানীতেই অন্তত দেড় শতাধিক ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠান ভেজাল ওষুধের সাথে জড়িত। ভেজাল ও নিন্মমানের ওষুধ ব্যবহার করলে, ব্যবহারকারির পরিণতি কি হবে, তা আর উল্লেখের প্রয়োজন পড়ে না। ওষুধের কাজ হচ্ছে, মানুষের রোগের উপশম ঘটানো। কিন্তু ওষুধ যদি নকল ও ভেজাল হয়, তাহলে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে মানুষ আরও অসুস্থ হবে, এমনকি সেটা তার মৃত্যুর কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে।

অর্থ-সম্পদ খরচ করে যে মৃত্যুকে ঠেকানোর জন্য রোগাক্রান্ত মানুষের আকুল প্রচেষ্টা, সেই মৃত্যুকেই যে আহবান করা হচ্ছে ওইসব বিপজ্জনক ওষুধ সেবন করে তা অনেক হতভাগ্য রোগীর ও তাদের অভিভাবকদের অজানা থেকে যায়। অভিভাবকরা বুঝতেও পারেন না এসব নকল-ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কিনে রোগমুক্তির জন্য প্রিয়জনের মুখে তুলে দিয়ে তাকে তারা কিভাবে ধীরে-ধীরে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিচ্ছেন।

জাতীয় নীতি-নৈতিকতাবহির্ভূত অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে অতীতে অনেক লেখালেখি হয়েছে। এখনো হচ্ছে। আটকও হয়েছে অনেকে। নিয়োজিত টিম অনেক অভিযান পরিচালনা করেছে। হয়েছে অপরাধিদের জেল-জরিমানাও। কিন্তু দূঃখজনক সত্য যে, জনঅকল্যাণকর এ হীন ব্যবসা আজও বন্ধ হয়নি। এ যেন চলছে এবং চলতেই থাকবে। মানুষের জীবন বিপন্ন করার এমন প্রতিযোগীতা যেন কেউ নেই বন্ধ করার। এসব নকল-ভেজাল ও নিন্মমানের ওষুধ ব্যবহারকারি জনগণের স্বাস্থ্য নাশ ও প্রাণহানির কাজটিই সর্বাগ্রে করে। কথিত ওষুধ নামের এই বিষগুলো রোগ নিরাময়ে মোটেও সহায়ক নয়। বরং এসব সেবনে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ মৃত্যুই ত্বরান্বিত হয়।

সূতারাং যে কোনো মূল্যে রোধ করতে হবে দেশের ভেতর ছড়িয়ে পড়া এসব ঘাতক ভেজাল ওষুধের। এই দুষ্টচক্রের নকল ও ভেজাল ওষুধ বাণিজ্য নির্মূল করতে হবে। ‘চোখ অন্ধ করলেই প্রলয় বন্ধ হয় না’। এ মূহুর্ত্ব থেকেই ভেজাল ওষুধের উৎপাদন বন্ধে সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে, চরম হুমকির মুখে পড়বে জনস্বাস্থ্য।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seventeen + thirteen =