ফ্রী-ফায়ার, পাবজী বন্ধের ঘোষণায় স্বস্তি; অভিভাবকসহ শিক্ষকরা দ্রুত বাস্তবায়ন চায়

0
660

সৈয়দ মোঃ রাসেলঃ করোনার কারনে প্রায় দেড় বছর যাবৎ বন্ধ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসময় বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সময় কাটাতে হচ্ছে বাসায়। দিনের বেশির ভাগ অলস সময়কে পুঁজি করে শিক্ষার্থীরা ঝুকছে মোবাইল ফোনের অনলাইন গেমসে। তাই ফ্রি-ফায়ার, পাবজি, কল অফ ডিউটি গেমস সহ মোবাইল লুডু, ইউটিউব, লাইকি, টিকটক করে সময় কাটাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তবে দেশে ফ্রি ফায়ার এবং পাবজিসহ সব ধরনের ক্ষতিকর গেমস বন্ধে গত ১৬ আগষ্ট আদেশ দেয় হাইকোর্ট। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ রায় কার্যকরে বিটিআরসিকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন অভিভাবকসহ শিক্ষকরা। ফ্রি ফায়ার এবং পাবজিসহ সকল ভয়ঙ্কর গেমসের অ্যাপ ও গেটওয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধে কার্যকরী উদ্যোগ নিবে বিটিআরসি এমন প্রত্যাশা সকলের।

উপজেলার ধানখালী ইউপির ৭২ নং দক্ষিণ চালিতাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাবিল আহমেদ। বাবা-মা উভয়েই শিক্ষক। স্কুল বন্ধ থাকায় যতক্ষণ জেগে থাকে মোবাইল ফোন নিয়েই সময় কাটান। বাবা-মায়ের শত প্রচেষ্টাও কোন কাজে আসছে না। তার মাতা কামরুন্নাহার পাপড়ি জানিয়েছেন, মোবাইল গেমসে আসক্তির কারণে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করেনা। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে সে। ক্ষতিকর এ ধরনের গেমসগুলো স্থায়ী নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানিয়েছেন এই শিক্ষিকা।

উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম মিরপুরের থানখোলা এলাকা। প্রতিদিন দুপুরের পর এখানে বসে অনলাইন গেমস খেলার আসর। উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীরা মোবাইল হাতে নিয়ে একসঙ্গে বসে খেলে পাবজি এবং ফ্রি ফায়ার । শুধু এই গ্রামই নয় জেলার অধিকাংশ গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের প্রতিটা পাড়া মহল্লার শিক্ষার্থীরা এই গেমসে আশক্ত। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে এসব দ্রুতগামী পাবজি এবং ফ্রি ফায়ার গেমস খেলে অলস সময় পার করছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

পৌর শহরের মঙ্গলসুখ সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসিন বলেন, স্কুল বন্ধ থাকায় কাজ নেই তাই ফ্রি-ফায়ার গেমস খেলে সময় কাটাই। তিনি আরও বলেন, ডিজে আলোক, উকং, সি আর সেভেন, স্কাইলার সহ জনপ্রিয় ক্যারেকটর কিনতে অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু বাসা থেকে টাকা না পাওয়ায় মন খারাপ থাকে। তিনি আরও বলেন, ফ্রী-ফায়ার বন্ধ হয়ে গেলে কল অব ডিউটি গেমস খেলা যাবে। কারণ সেটা একই ধরনের গেমস।

নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী গাজী জিদান জানান, আমি বেশিরভাগ সময় পাবজি গেমস খেলি। আমার আইডিটি বর্তমানে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এই গেমসের সারা, এনডি এবং কার্লো ক্যারেকটার আমার খুব পছন্দের। তিনি আরও জানান, শুনেছি ফ্রী ফায়ার এবং পাবজি বন্ধ হবে। কিন্তু আমি ভিপিএন ব্যাবহার করে এখনও ফ্রী-ফায়ার খেলতে পারছি। পৌর শহরের চিংগড়িয়া এলাকার অভিভাবক সুমাইয়া শিমু জানান, এসব গেমস খেলে অনেক শিক্ষার্থীই হয়ে পড়েছেন মেধা শূন্য।

এছাড়া তাদের আচরনগত সমস্যাও দিন দিন প্রকট হচ্ছে বলে দাবি এই অভিভাবকের। কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক চিন্ময় হালদার জানান, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার এবং গেমসে আশক্ত হলে চোখসহ শিক্ষার্থীদের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এতে করে তাদের মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।

ডালবুগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো.মাহমুদুল হাসান জানান, মোবাইল গেমস খেলা ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষকদের পাশাপাশি পরিবারের বড়দের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এ গেমস থেকে ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eight + 2 =