রাজউক পরিচালক শেখ শাহীনুল ইসলামের নামে দুদকে মামলা নামে বেনামে প্রচুর সম্পদ

0
827

মো: আবদুল আলীম: প্রায় তিন শত কোটি টাকার সম্পদের মালিকানার তথ্য পাওয়া গেছে রাজউক পরিচালক শেখ শাহীনুল ইসলামের নিজ নামে ও আত্মীয় স্বজনের নামে। এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকার নামি-দামি এলাকায় ফ্ল্যাট, সুপার শপ, বিশাল জমি, বরিশালে ভবন, ইটভাটা, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক ব্যালেন্স, প্রাইভেট কার, দেশের বাইরে রিয়েল এস্টে এর ব্যবসা ইত্যাদি। শেখ শাহীনুল ইসলামের অতি নিকটস্ত লোকদের কাছ থেকে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে। রাজউকের এস্টে ও ভ‚মি-২ এর পরিচালক এই শেখ শাহীনুল ইসলাম। তার নিজ কামরায় ব্যবসায়ীকে মারধর, সুদে বিশাল টাকা ব্যবসায় খাটানো ও আয় বহিভর্‚ত বিশালাকারের সম্পত্তি গড়ার অভিযোগ রয়েছে। একজন চাকুরিজীবি হয়েও রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ থানার অধীনে হেডরন কেমিক্যালস নামক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১ কোটি টাকা উচ্চ সুদে বিনিয়োগ করছেন। ১৫ জুলাই, ২০১৬ ইং ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন। ১ বছরে ১৫ লক্ষ টাকা সুদ দিতে হবে এমন র্শতে ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন। এরপর ১ লা জুন, ২০১৭ ইং আরও ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে। চলমান করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসা মন্দ থাকায় ব্যবসা প্রতষ্ঠিানের মালিক রায়হান আহমেদ সুদের টাকা পরিশোধ করতে পারেন নাই বলে তাকে লোক মারফত রাজউকে ডেকে পাঠান শেখ শাহীনুল ইসলাম। রাজউক এর এনেক্স ভবনের ৪ র্থ তলায় গেলে ব্যবসায়ীকে শেখ শাহীনুল ইসলাম তার কামরায় নিয়ে যান। তারপর তাকে আরও তিন-চারজন কর্মচারীর সহায় মারধর করে জখম করেন। এরপর চার তলা থেকে তাকে নিচ তলায় জোরর্পূবক নামিয়ে একটি গাড়িতে করে অপহরণ করেন। অপহরণের পর এক পর্যায়ে ছাড়া পেয়ে ভিকটিম ঢাকা মেডিকেল থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পর পুলিশ কেস সার্টিফিকেট নিয়ে মতিঝিল থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা না নিয়ে হয়রানি করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ কারণে উক্ত ব্যবাসায়ী আদালতে  মামলা দায়ের করতে বাধ্য হন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে  মামলা নম্বর ১৯৭৮/২০২০ ধারা ১০৯/৩২৩/ ৩২৭/৩৩০/৩৪৭/৩৬৩/৩৮৪/৩৮৬/৩০৭/ ৫০৬ দ:বি:। মামলাটি মতিঝিল থানায় তদন্তাধীন আছে। মামলার কপি এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

ভিকটিম ব্যবসায়ী শেখ শাহীনুল ইসলামের বিরদ্ধে মারধরের ঘটনার বিবরন উল্লেখ করে প্রতিকার চেয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান, গৃহায়ন ও গণর্পূত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীসহ পুলিশের র্উধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের কপি এ প্রতবিদেকের কাছে সরক্ষিত আছে। অভিযোগ রয়েছে রাজউক চেয়ারম্যান অদ্য পর্যন্ত উক্ত অভিযোগের কোন তদন্ত করেন নাই। শেখ শাহীনুল ইসলাম বহুল আলোচিত গোল্ডেন মনিরের সাথে যোগসাজসে ২০২ টি প্লট জালিয়াতি করেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে।

এসব প্লট জালিয়াতি করে তিনি শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে রাজউক সূত্রে জানা গেছে। তিনি গোল্ডেন মনিরের জন্য রাজউকের ভেতর একটি কামরা অনৈতিকভাবে বরাদ্দ দিয়ে  দপ্তর খুলে দেন বলে রাজউকের একাধিক কর্মচারীর কাছ থেকে জানা গেছে। তবে কর্মচারীরা কেউ নাম প্রকাশ করেন নাই। এই নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে রাজউক উক্ত অবৈধ অফিস উচ্ছেদ করে। একজন চাকুরিজীবি হয়ে তিনি কিভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করনে তা প্রশ্নবিদ্ধ।

তার নামে উত্তরায় ১০ তলা ফ্ল্যাট রয়েছে। সুফিয়া ভবন, বাড়ি নং ২২, রোড নং ৯, উত্তরা ৪ ঠিকানায় ৫ কাঠা জমির ওপর তিনি ১০ তলা আলীশান বাড়ি নির্মান করেছেন। উক্ত এলাকায় কোন ভবন দশ তলা পর্যন্ত নির্মানের অনুমোদন রাজউক থেকে দেওয়া হয় নাই বলে এলাকা সূত্রে জানা গেছে। এলাকার একাধিক ভবন মালিকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে উক্ত এলাকায় ৬ তলার ওপর কোন ভবনের অনুমতি দেওয়া হয় নাই।

রাজউকের পরিচালক শেখ শাহীনুল ইসলাম কিভাবে দশ তলার অনুমোদন নিয়েছেন নাকি ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে ১০ তলা নির্মান করেছেন তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া নিকটস্ত এলাকাবাসীদের দাবি। সূত্রে জানা গেছে তিনি তার ভাইজি মোহসেনা খাতুন মলির নামে ঢাকার মৌচাক মার্কেটের অপর পাড়ে ৮ ম তলায় প্রপার্টি প্রাইম নামে ১৩০০ বর্গফুটের অ্যাপার্টম্যান্ট নিয়েছেন।

বোন শেখ সানজিদা নাইলন এর নামে বাড়ি নং ২২, রোড নং ৯, সেক্টর, উত্তরাতে বিশাল ভবন রয়েছে যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ভাইপো রকিবুল হাসানের নামে প্রাইভেট কার ও টয়োটা প্রেমিও ২০১২ মডেল রয়েছে। গোরস্তান রোড, করিম কুটির, নবগাম রোড, বরিশালে ৫ তলা বিলাশবহুল ভবন রয়েছে। স্ত্রী সারমিন যুথির নামে ও তার পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রে ৩০ কোটি টাকার মত বিনিয়োগ রয়েছে।

গুলান-১ ও এলিফ্যান্ট রোডে বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্টানে বিশাল টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। দেশের বাইরেও রিয়েল এস্টেট ব্যবসা রয়েছে। তার এসব সম্পদের বিবরন তারই অতি নিকটবর্তী লোকের কাছ থেকে পাওয়া। অবশেষে সম্পদের প্রকৃত তথ্য গোপন করার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। দুদকের উপ পরিচালক এস এম সাহিদুর রহমান এই মামলার বাদি। গত মার্চ, ২০২১ এর প্রথম দিকে এই মামলা রজু করা হয়। মামলার কপি এ প্রতিবেদেকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

বহুল আলোচিত গোল্ডেন মনিরের সাথে প্লট জালিয়াতির ব্যপারে দুদক তাকে হাজির হওয়ার জন্য নোটিস দিলে তিনি হাজির না হয়ে শুধু জবাব পঠিয়ে দিয়েছেন বলে প্রকাশ। এ ব্যপারে শেখ শাহীনুল ইসলামের বক্তব্য নেওয়ার জন্য রেজিস্টার্ড ডাকযোগে পত্র প্রেরন করেও তার কোন জবাব পাওয়া যায় নাই। অবশেষে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নাই। এই ব্যপারে এই  প্রতিবেদকের তদন্ত অব্যহত আছে। আগামি সংখ্যায় থাকছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × five =