দালালের দৌরাত্ম বন্ধে র‌্যাবের অভিযান:৫০০ দালালকে জরিমানা ও শাস্তি,জনমনে স্বস্তি

0
1078

আরিফুল ইসলাম : র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গি, মাদক, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, জাল নোট ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, বিভিন্ন মামলার আসামী, অপহরণকারী এবং প্রতারক চক্র গ্রেফতার করে সাধারন জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। র‌্যাব শুরু থেকে যে কোন ধরনের প্রতারণামূলক অপরাধ প্রতিরোধ, প্রতারক ও দালাল চক্রকে সনাক্ত এবং গ্রেফতারের জন্য নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। 
সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাত, পরিবহণখাত, বিআরটিএ,পাসপোর্ট অফিসে দালাল চক্রের সক্রিয়তা ও আধিপত্য নিয়ে বেশ কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসব দালাল চক্রের অত্যাচারে জনগণ প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক সময় প্রত্যাশিত সেবা পেতে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশী অর্থ গুনতে হচ্ছে। আবার অনেকেই অধিক অর্থ ব্যয় করেও প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না। এরই প্রেক্ষিতে, দেশব্যাপী বিভিন্ন সেক্টরে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) । 


রবিবার ( ০৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সারাদেশে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে  র‌্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন একযোগে অভিযান পরিচালনা করে  প্রায় ৫০০ দালালকে জরিমানা ও বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করেছে। এ বিষয়ে রবিবার বিকেলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক  কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।বক্তব্যে খন্দকার আল মঈন বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর র‌্যাবের  নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং অন্যান্য সংস্থার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণের সমন্বয়ে সারাদেশব্যাপী বিভিন্ন ধরণের দালাল চক্রের বিরুদ্ধে র‌্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন একযোগে অভিযান পরিচালনা করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস এলাকাসহ সারাদেশব্যাপী পরিচালিত ৬৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ২৪৮ জন দালালকে ০৯ লক্ষাধিক টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন। এছাড়াও ২৪৯ জন দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা/কারাদন্ড প্রদান করা হয়।দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতেও র‌্যাবের নজরদারি ও জোড়ালো অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা। 
সারাদেশে দালালের দৌরাত্ম বন্ধে র‌্যাবের এ অভিযানের বিষয়ে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান এর পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়,গত ০৫ সেপ্টেম্বরে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় দালাল চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৩০ জন দালালকে আটক করে । দালালচক্রের এসকল সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রতারণার মাধ্যমে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের আত্মীয় স্বজনকে হয়রানির শিকারে পরিণত করে এবং তাদের নিকট হতে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়। ফলশ্রুতিতে সাধারণ মানুষজন প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হত। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু ভ্রাম্যমান আদালতে দালাল চক্রের প্রত্যেককে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। 
এছাড়াও, একইদিনে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ১৪ জন দালালকে আটক করা হয়। দালালচক্রের সদস্যরা মিথ্যা তথ্য ও অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিত। এ অভিযানে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাজহারুল ইসলাম ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ০৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করেন।এছাড়াও ০৭ জন দালাল চক্রের সদস্যকে সর্বমোট ৩০ হাজার ১শত টাকা অর্থদন্ড দেয়া হয়। 
ইমরান খান এর পাঠানো  প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানা যায়, রবিবার র‌্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস  এলাকায় দালাল চক্রের  বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে ৩১ জন দালালকে আটক করা হয়। দীর্ঘদিন যাবত দালাল চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষদেরকে আর্জেন্ট পাসপোর্ট তৈরী ও মেয়াদ বৃদ্ধি ইত্যাদি সংক্রান্ত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এসব দালালদের খপ্পরে পড়ে সাধারন মানুষজন প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে এম রফিকুল ইসলাম ভ্রাম্যমান আদালতে ০৮ জন দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করে। এছাড়াও ২২ জন দালাল চক্রের সদস্যকে সর্বমোট ৩৯,৭০০/- টাকা অর্থদন্ড দেয়া হয়। এছাড়াও, ০১ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়। 
দালাল বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে একইদিনে  র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল মিরপুর বিআরটিএ অফিস এলাকায় দালাল চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ১৩ জন দালালকে আটক করে। দালাল চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষদেরকে দ্রুত ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন ও অবৈধ পন্থায় ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি সংক্রান্ত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে প্রতরণামূলকভাবে তাদের নিকট হতে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আনিছুর রহমান ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ০৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করে। এছাড়াও, ০৫ জন দালাল চক্রের সদস্যকে সর্বমোট ৩৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়।

স্বাস্থ্যখাত, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিসসহ অন্যান্য সেক্টরের দালালরা প্রতারনামুলকভাবে সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষদের থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত করত। সারাদেশে দালালচক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযানে দেশের সাধারণ মানুষজন স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × two =