মাতৃস্নেহের কাছে সন্তানদের সহস্র অপরাধ অতিতুচ্ছ এর উজ্জল দৃষ্টান্ত রাখলেন ৭৫ বয়সী মোমেনা বেগমকে। পাঁচ ছেলের কেউই বৃদ্ধা মা মোমেনা বেগমকে (৭৫) খেতে দেন না। উল্টো স্বামীর রেখে যাওয়া জমি লিখে নিতে মাঝেমধ্যেই তাকে মারপিট করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দফতরে মা গিয়েছিলেন তার বিচার দাবি করতে। খবর পেয়ে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে মেজো ছেলে মাকে আরেক দফা মারপিট করে হাসপাতালে পাঠান। চার দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে মা মোমেনা আবারও বিচারের আশায় যান ইউএনওর দফতরে। ইউএনও লিউলা-উল জান্নাহ গত সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) তার দফতরে উভয়পক্ষের সব কিছু শুনে উপস্থিত মেজো ছেলে আয়েব আলীকে পুলিশে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশ সদস্যরা তার হাতে হাতকড়া পরান। এ সময় অভিযোগকারী মা কাঁদতে শুরু করেন। ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনিরা ভুল করেছে, আপনারা ক্ষমা করে দেন।
আমার কোনো অভিযোগ নেই, আমি ছেলেদের হাজতবাস সহ্য করতে পারবো না।’ এ দৃশ্য দেখে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সহকারী কমিশনার (ভূমি) শ্যামানন্দ কুন্ডুসহ উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তারা বলে ওঠেন- এই হচ্ছেন মা। যে মা এসেছিলেন বিচার চাইতে, সেই মাই আবার কাঁদছেন তাদের মাফ করে দেওয়ার জন্য। সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী মোমেনা বেগম উপজেলার হোগলডাঙা গ্রামের মৃত শফি উদ্দিন মোল্লার স্ত্রী। তাদের পাঁচ ছেলে আর তিন মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন, ছেলেরাও বিয়ে করে পৃথক সংসার করছেন। পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ের ভরা সংসার ছিল মোমেনার। মেয়েদের বিয়ে দেওয়া পর একা হয়ে যান তিনি। চার বছর আগে স্বামীকেও হারান তিনি। এরপর থেকেই ছেলেদের অত্যাচার শুরু হয় তার ওপর। জমি-জমা লিখে নেওয়ার জন্য ছেলেরা তাকে মারধরও করেন। হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয় তাকে।
একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে যান ইউএনওর কাছে।সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ছেলেদের মারধরের কারণে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান মা মোমেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চার ছেলে দাঁড়িয়ে আছেন। আর বেদনাভরা নয়নে বসে আছেন মা।ছেলেদের জেরা করছেন ইউএনও লিউলা-উল জান্নাহ। জিঙ্গাসাবাদ শেষে ইউএনও আদেশ দেন, প্রত্যেক ছেলেকে মাসে এক হাজার করে টাকা মায়ের ভরণপোষণের জন্য দিতে হবে।আর যে ছেলের মারধরে জখম হয়ে মোমোনা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, সেই ছেলের নামে নিয়মিত মামলা দিয়ে ধরে নিয়ে যেতে পুলিশকে নির্দেশ দেন।
পুলিশও কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলেকে ধরে হাতকড়া লাগিয়ে ফেলে। তখনই মায়ের মন ঘুরে যায়। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।মাকে কেন মেরেছেন, জানতে চাইলে মোমোনা বেগমের অভিযুক্ত ছেলে আয়েব আলী বলেন, ‘আমি যখন শুনলাম, মা আমার নামে ইউএনওর কাছে মামলা করেছে, তখন আর মাথা ঠিক ছিল না। এ রকম ভুল আর করব না।’শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিউলা-উল-জান্নাহ বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিতিত্তে বিচারের জন্য মোমেনা বেগমের পাঁচ ছেলেকে নোটিশ করা হয়েছিল।
এরমধ্যে চার ছেলে এসে হাজির হন।জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভরণপোষণের জন্য পাঁচ ছেলে মাসে এক হাজার করে টাকা মাকে দেবে মর্মে লিখিত মুচলেকা নেওয়া হয়। আর যে ছেলের মারধরের কারণে মোমেনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল, তার নামে নিয়মিত মামলা করার নির্দেশ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
কিন্তু পরে মায়ের কান্নাকাটির কারণে এবং মামলা করতে রাজি না হওয়ায় আমি বিষয়টি ওসি সাহেবের ওপর ছেড়ে দিই।শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকদেব রায় বলেন, বৃদ্ধা মায়ের আকুতি মিনতির কারণে এবারের মতো মুচলেকা নিয়ে তার চার ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।