চাঁদাবাজিতে অপ্রতিরোধ্য টিআই শামসুদ্দিন!

0
1532

রাশেদুল ইসলাম: দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশ পথ নগরীর শাহ আমানত সেতু।পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞাকে রীতিমত বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এই সেতু হয়ে প্রতিদিন নগরে প্রবেশ করছে শতশত অবৈধ সিএনজি ও ডকুমেন্ট বিহীন মাহেন্দ্র হিউম্যান হলার, মাইক্রো বাস, মিনিবাস সহ বিভিন্ন যানবাহন। অভিযোগ আছে, ট্রাফিক পুলিশ,কথিত সাংবাদিক ও ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ধারী নেতারা চাঁদা নিয়ে এসব যানবাহনকে শহরে প্রবেশের ব্যবস্থা করে  দিয়ে বছরে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।আর এসব যানবাহন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো শহরজুড়ে, সংগঠিত করছে নানা অপরাধকর্ম। জানা যায়, হিউম্যান হলার,গ্রা ম সিএনজি, মাহেন্দ্র, মিনি বাস,রাইডারসহ রুটপারমিটবিহীন বিভিন্ন অবৈধ গাড়ি চলাচল করে অনায়াসে।এসব গাড়ির মূল স্টেশন নতুন ব্রিজের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি।মাসোয়ারার বিনিময়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের ইন্সপেক্টর (টিআই) সামশুদ্দিন এ অবৈধ গাড়িগুলোর  বৈধতা দিয়েছেন। আর এর মাধ্যমে ঘুষ হিসেবে মাসে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা যায় টিআই সামশুদ্দিন ও তার কর্তাদের পকেটে। এছাড়া নতুন ব্রিজ এলাকার শাখা রোডগুলোকেও টিআই সামশুদ্দিন বানিয়েছেন অবৈধ অটোরিকশার স্বর্গরাজ্য।কিছু গাড়ি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শহরে ঢুকে,আবার কিছু গাড়ি নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে ছেড়ে যায় শহরের উদ্দেশ্যে।আর এসব কিছুরই নিয়ন্ত্রক টিআই সামশুদ্দিন। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিদিন কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, মগনামা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী এবং পটিয়া থেকে আনুমানিক ১০০টি গ্রাম নিবন্ধিত যানসহ মোট ৪৫০ টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা মহসড়ক দিয়ে শাহ আমানত সেতু পার হয়ে নগরে প্রবেশ করে।

এরমধ্যে অনিবন্ধিত ৩৫০টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা লাইন খরচ বাবদ দৈনিক ৩০ ও মাসিক ২৫০০ টাকা নেন। বাকী গ্রাম নাম্বারধারী ১০০ অটোরিকশা (সিএনজি) থেকে একই হারে দৈনিক ও মাসোহারা নেয় টিআই সামশুদ্দিন। এসব টাকা তোলার জন্য টেন্ডল হিসেবে জাহাঙ্গীর মিস্ত্রিসহ বেশ কয়েকজনকে ব্যবহার করেন ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকতার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি অটোরিকশা থেকে দৈনিক ৩০ টাকা করে মাসে প্রায় ৪ লক্ষ ৫ হাজার ও ২৫০০ টাকা মাসোহারায় প্রায় ১১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এ হিসেবে মাসে মোট চাঁদা আদায় করা হয় প্রায় ১৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।সে হিসেবে বছরে চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৮৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা।

এছাড়াও টিআই সামশুদ্দিনের নামে চলা আরো ১০০টি গ্রাম নাম্বারধারী অটোরিকশা থেকে নেয়া হয় যান প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা। যার পরিমাণ মাসে প্রায় ৯০ হাজার আর বছরে ১০ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। এসব যানবাহনগুলো নগরে প্রবেশের ব্যবস্থা করে টিআই ও স্থানীয় চাঁদাবাজরা বছরে চাঁদা আদায় করছেন প্রায় ১ কোটি ৯৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। অনুসন্ধান বলছে,পুলিশের প্রবিধানে একই স্থানে দায়িত্ব সীমা ২ বছর হলেও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের ইন্সপেক্টর (টিআই) সামশুদ্দিনের ক্ষেত্রে  যেন আইনের ঠিক উল্টো।

একই জোনের অন্যান্য কর্মকর্তারা বদলি হলেও দীর্ঘ ৩ বছরের অধিক সময় একই জায়গায় (বাকলিয়া থানা) বহাল তবিয়তে আছেন তিনি। ২০১৬ সালের শুরু থেকে অদ্যবধি বাকলিয়ায় ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) হিসেবে সামশুদ্দিন বহাল তবিয়তে আছেন। অথচ এ সময় ওই জোনের (ট্রাফিক দক্ষিণ) বাকী থানাগুলোর দায়িত্বরত টিআইদের বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। উর্ধ্বতন অফিসারদেরও (ডিসি,এডিসি,এসি) কয়েক ধাপে বদলি করা হয়েছে।

কিন্তু অদৃশ্য খুঁটির জোড়ে ৩ বছরের অধিক সময় একই এলাকায় টিআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সামশুদ্দিন। অথচ পুলিশ প্রবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, কোন পুলিশ সদস্য দুই বছরের বেশি সময় এক স্থানে থাকতে পারবেন না। তবে বিশেষ প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে কিছু সময় বাড়াতে পারে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাস্তুহারা সড়কের মুখে খালি জায়গায় শতাধিক সিএনজি চালিত অটোরিকশা পার্কিং অবস্থায় রয়েছে।

একটু ভেতরে খালি অন্য আরেকটি  জায়গায় আরো প্রায় দেড়’শ মতো সিএনজির পার্কিং। সিএনজি চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় জাহাঙ্গীর মিস্ত্রি নামের এক চাঁদাবাজ টিআই সামশুদ্দিনের যোগসাজশে প্রতিটি  অনিবন্ধিত সিএনজি থেকে মাসোহারা ও দৈনিক হিসেবে চাঁদা নেন। টাকা তোলেন জাহাঙ্গীরের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত দুই আলমগীর, অলী ও জামাই হিসেবে পরিচিত এক ব্যক্তিসহ ৪ জন।

এছাড়া, নিবন্ধিত প্রায় এক’শ সিএনজি চলে সরাসরি টিআই সামশুদ্দিনকে চাঁদা দিয়ে। এসব টাকা তুলেন টিআই’র টেন্ডল হারুন নামের এক যুবক। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, টেন্ডল খ্যাত হারুন টিআই সামশুদ্দিনের অবৈধ টাকা তোলার মূল কারিগর। তাকে দিয়ে প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা তুলেন বাকলিয়ার এই টিআই।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen − nine =