ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, রেলওয়ের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্র

0
807

আর কত পাথর নিক্ষেপ ও ট্রেন দূর্ঘটনা ঘটলে রেল কতৃর্পক্ষ কঠোর অবস্থানে যাবে বলে প্রশ্ন তুলে অবিলম্বে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি।রবিবার (৩ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানান বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান মনির।মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, গত ২ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপে সহকারি ট্রেন চালক কাওছার আহম্মেদ চোখে মারাত্মক ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হন। ১৫ আগষ্ট খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সীমান্ত এক্সপ্রেস—এ পাথর নিক্ষেপে আজমীর নামে একটি শিশুর চোখ নষ্ট হয়ে যায়। চলন্ত ট্রেনে পাথরের আঘাতে রেলকমীর্দের মৃত্যু ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে প্রীতি দাস নামে এক প্রকৌশলী পাথরের আঘাতে নিহত হন। গত বছর স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী উত্তরাঞ্চলে ভ্রমণের সময় তাকে বহনকারী ট্রেনে পাথর নিক্ষেপে ঘটনা ঘটে। গত ৭ জানুয়ারি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুবর্ণা এক্সপ্রেসে কুমিল্লায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ৪ জন যাত্রী আহত হয়। ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সুবর্না এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ হয়। ১৮ ডিসেম্বর রাত ৭ টার দিকে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ঢাকা গামী আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথ নিক্ষেপে ২ জন আহত হয়। ২৪ ডিসেম্বর জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরে ঢাকাগামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে পাথর নিক্ষেপে জহুরুল ইসলাম নামে এক যাত্রী আহত হন। একই দিনে খুলনাগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনেও পাথর নিক্ষেপের শিকার হয় আক্কেলপুর।

২০১৭ সালে সারা দেশে প্রায় দেড় শতাধিক পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় দুই শতাধিক যাত্রীসহ ১৪জন রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারী আহত হয়েছে। গত বছর ১৯ নভেম্বর মালবাহী ট্রেনে পাথর নিক্ষেপে গার্ডসহ ৬ জন নিহত হয়। গত ৫ বছরে প্রায় ২ হজার ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ট্রেনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় যে সকল যাত্রী গণপরিবহের তুলনায় ট্রেনকে নিরাপদ ভেবে যাতায়াত করেন। তাদের মাঝে আতংক সৃষ্টি হচ্ছে। রেলওয়ে কতৃর্পক্ষ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সহসাই রোধ করা যাচ্ছে না পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। দিন দিন অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে ট্রেন যাতায়াত। প্রতিটি ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে রেলওয়ে কতৃর্পক্ষ তৎপরতা দেখালেও কিছু দিন পরে আবার নিরব হয়ে যান। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আতংকের মধ্যে দিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ২০১৯ সালে ৫ মে রাজশাহীগামী রকেট মেইল ট্রেনটি ঈশ্বরদী ষ্টেশনের প্রবেশের পূর্বে পাথর নিক্ষেপের শিকার হলে জুথি আক্তার নামে ১৩ বছরের এক শিশু আহত হন। ৪ মে পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে জাম তৈল মুলাডুলি এলাকায় পাথর নিক্ষেপে ৫ বছরের শিশু ইশানসহ দুই শিশু আহত হয়। ১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে জামতৈল ষ্টেশনের মধ্যবতীর্ স্থানে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বীকে বহনকারী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ২ মে রাজশাহী—ঢাকা—রাজশাহী বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস বিভিন্ন স্থানে পরপর তিন বার পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালের ৩০শে এপ্রিল বেনাপোল কমিউটার ট্রেনের পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) পাথর নিক্ষেপে গুরুতর আহত হন। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ মাস পরে মারা যান।

রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি বলেন, দুষ্কৃতিকারীরা চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে নিরাপদ বহনকে অনিরাপদ করে তুলছে, করছে রেলের ব্যাপক ক্ষতি, মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। অথচ রেল কতৃর্পক্ষ কোন স্বার্থনেষী মহলের ষড়যন্ত্র কিনা তা চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সনাক্ত করতে পারছে না কারা পাথর ছুড়ছে।

তিনি আরো বলেন, রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে পাথর নিক্ষেপে কারো মৃত্যু হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে। যদিও এসব আইনে কারো শাস্তির কোন নজির নেই।

মনিরুজ্জামান মনির ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের এ ঘটনাগুলো রেলওয়ের বিরুদ্ধে পরিবহন মালিকদের ষড়যন্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one + 15 =