ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গার-এর ২৫ বছর পূর্তিতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত

0
552

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ-এর ৩০ বছর এবং প্রতিষ্ঠানটির ইয়ূথ সংগঠন ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গার-এর ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আজ ১১ ডিসেম্বর ২০২১, শনিবার, সকাল ১০টায় একটি পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। অনলাইনে অনুষ্ঠিত এই পুনর্মিলনীতে সারাদেশ থেকে সহস্রাধিক ইয়ুথ লিডার অংশগ্রহণ করেন।   অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক জনাব আব্দুলাহ আবু সায়ীদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ হাই কমিশনার জনাব রবার্ট ডিকশন, প্রথম আলোর যুগ্ম স¤পাদক জনাব সোহরাব হোসেন, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট, কান্ট্রি ডিরেক্টর ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বৃটিশ কাউন্সিলের ইনক্লুসিভ কমিউনিটি এন্ড আর্টস-এর পরিচালক জনাব শাহনাজ করিম। ঢাকা বিভাগের ইয়ূথ লিডার তিথী চক্রবর্তীর কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে ছয় জন ইয়ূথ লিডার ছয়টি বিষয়ে ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গারের কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরেন।  বিষয়গুলো হচ্ছে: গণতন্ত্র ও সামজিক ন্যায়বিচার, ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম সাম্প্রদায়িকতা, তারুণ্য ও বহুত্ববাদ, জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা সহিষ্ণু গ্রাম এবং শিক্ষা ও আÍউন্নয়ন। 

আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, গণতন্ত্র খুব অল্প জায়গায় এসেছে, চিরদিন সংগ্রাম করেছে। ইতিহাস থেকে দেখা যায়, যার হাতে শক্তি তার হাতেই সব। যুগে যুগে গণতন্ত্র বিরোধীদেরই প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। খুব কম সময় সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার ভোগ করতে পেরেছে। নানান সময় নানান জায়গায় অল্প-বিস্তর গণতন্ত্র দেখা গিয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্রের পরিপূর্ণ রূপ খুব কম দেখা গিয়েছে। রেনেসাঁস পরবর্তী সময়ে এবং পুঁজিবাদের প্রথম যুগে যখন পুঁজিবাদের একটি প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করেছে তখন গণতন্ত্রের পরিপূর্ণ রূপ আমরা দেখতে পেয়েছি। এরপর দেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছে। কিন্তু এখন আবার আমরা দেশে দেশে স্বৈরতন্ত্রের উত্থান লক্ষ করছি। একটা অন্ধকার সময় আসছে, তাই সবাইকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে সংঘবদ্ধ ও সচেতন হতে হবে।   

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, যে স্বপ্নের ভিত্তিতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিয়েছেন সেই স্বপ্ন  গড়তে হলে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। মুক্তি অর্জনের জন্য যে আদর্শ ও মূল্যবোধের ভিতিতে বাংলাদেশ গঠিত হয়েছিল সেগুলো আমাদের জন্য এখন প্রয়োজনীয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু জনগণের আÍনিয়ন্ত্রণের অধিকারের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ঘোষোণা দিয়েছিলেন। এরপর মুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণায়পত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়।  স্বাধীনতার পর প্রণীত সংবিধানে এসব আদর্শ ও অঙ্গীকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে পরিণত করা হয়, মূলনীতিগুলো হচ্ছে:  জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। এগুলোর  প্রায়োগিক অর্থ স¤পর্কে আমাদের সুপষ্ট ধারণা থাকা দরকার। এগুলোর  বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হবে।

সোহরাব হাসান বলেন, তরুণদের মধ্যে সম্প্রীতির সমাজ গড়ার আকাক্সক্ষা লালনের জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। আমরা যারা বয়স্ক আছি তারা যে তাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করছেন না এজন্য তরুণরা আমাদের অভিযুক্ত করতে পারেন। রাষ্ট্রের সাথে জনগণের যে চুক্তি সেখানে রাষ্ট্র বড় নয়, জনগণ হচ্ছে বড়। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা  জনগণের আকাক্সক্ষার বিপরীতে চলছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমি ভালো থাকি, তুমিও ভালো থাক এই মূলমন্ত্র নিয়ে চললে কোনো সমস্যা হবে না বলে আমি মনে করি।   

রবার্ট ডিকসন বলেন, বৃটেন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করে যাচ্ছে। স্বল্প উন্নত দেশের তালিকা থেকে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটছে যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন বলে আমি মনে করি। এটা শুধু কিছু সংখ্যা মাত্র নয়। বাংলাদেশ শিশুমৃত্যু রোধ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টি, বাল্যবিয়ে রোধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।  

শাহনাজ করিম বলেন, বাংলাদেশের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান, সংসদের কার্যক্রমকে শক্তিশালীকরণ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, মানবাধিকার সুরক্ষা, আইনের শাসন বাস্তবায়ন, স্বাধীন গণমাধ্যম এই সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার গাঠনিক মুলনীতি দ্বারা পরিচালিত তরুণরা। 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × three =