বকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর সপ্তম জাতীয় সম্মেলন-২০২১ অনুষ্ঠিত

0
322

নারী ও কন্যাশিশু সুরক্ষার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হলো আন্তর্জাতিক সংগঠন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর সহায়তায় গড়ে উঠা নারীনেত্রীদের সংগঠন বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর সপ্তম জাতীয় সম্মেলন-২০২১। আজ ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, সকাল ১০.০০টায় অনলাইন জুম পাটফর্মে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সারাদেশের বিভিন্না প্রান্ত থেকে সহস্রাধিক নারীনেত্রী অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম. এ. মান্নান এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন জনাব রাশেদা কে চৌধুরি, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর ক্যাথি বার্ক, নেদারল্যান্ড হাঙ্গার প্রজেক্টের পরিচালক অ্যানালিস ক্যানিস, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট রাশিদা আক্তার, বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর স¤পাদক জনাব নাছিমা আক্তার জলি, ফর ইউ ফর এভার-এর প্রেসিডেন্ট জনাব রেহানা সিদ্দিকী। উপস্থাপনা করেন সৈয়দা রুখসানা জামান শানু ও তানজিলা জেরিম অমি।   

অনুষ্ঠানে নারীনেত্রীদের পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন চট্টগ্রামের শাহানা বেগম, কুমিল্লার নারীনেত্রী শাহানা হক, ময়মনসিংহয়ের আঞ্জু আনোয়ারা ময়না, সিলেটের সৈয়দা আরমিনা আক্তার, রাজশাহীর রোকসানা আক্তার, ঢাকার ইভান আহমেদ কথা, বরিশালের ফেরদৌসি জামান এবং খুলনার মল্লিকা দাস।    

মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম. এ. মান্নান বলেন, নারীর প্রতি নির্যাতন, নিপিড়ীন, সহিংসতা কেবল বাংলাদেশে ঘটে তা নয়, এটি পুরো মানবজাতির জন্য একটা প্রকট সমস্যা। আমাদের মত দেশে যেখানে নারীরা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল সেখানে হয়ত এটি বেশি ঘটে। নারীরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হলে ধীরে ধীরে এটা কমে যাবে। আমাদের বর্তমান সরকারপ্রধান নারী হওয়ার ফলে গ্রামে গঞ্জে নারী নেতৃত্ব গড়ে ওঠেছে। আমাদের কাজ ভবিষ্যতে আরও জোরালো হবে। মন্ত্রণালয়য়ে যখন কোনো প্রকল্প আসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই খোঁজ নেন যে ওই প্রকল্প থেকে নারীরা উপকৃত হবেন কিনা।

নাছিমা আক্তার জলি বলেন, এই মাসেই স্বাধীনতা পেয়েছি, পতাকা পেয়েছি। এই স্বাধীনতা অর্জনে অনেক নারী মুক্তিযোদ্ধা জীবন দিয়েছেন, সর্বস্ব হারিয়েছেন । আমাদের আজকের সম্মেলটি আমাদের প্রাণের মেলা, ভালবাসার মেলা। আমাদের নারীনেত্রীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের নারীনেত্রীরা মাটে-ঘাটে কাজ করেছেন বলেই বাংলাদেশ এমডিজিতে এত অর্জন করতে পেরেছে বলে আমি মনে করি। এসডিজি অর্জনেও আমাদের নারীরা কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে,। এই পথ পাড়ি দেয়ার জন্য আমাদের আÍবিশ্বাস ও নিজেদের মধ্যে সাহস যোগাতে হবে এবং অন্যদের অনুপ্রেরণা যোগাতে হবে। আজকের এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে নারীরা এই সাহস ও শক্তি অর্জন করবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮১৩ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১২৭ জন কন্যাশিশুকে কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। নারীর প্রতি এসব নির্যাতন দূরীভূত করাই আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। নারীর প্রতি এসব নির্যাতনের বড় কারণ হলো পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। এ মানসিকতা আমাদের রক্তের সাথে মিশে গিয়েছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, তাই এটা সহজ নয়। কিন্তু আমাদের এ লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।  

রাশেদা কে চৌধুরি বলেন, গত মার্চে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইন্ডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫টি দেশের মধ্যে ৬৫তম অবস্থানে আছে। ২০১৫ সাল থেকে চারটি সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে । এগুলো হচ্ছে গড় হিসাব। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে এই নারীরা কারা? উচ্চবিত্ত নইলে মধ্যবিত্ত, কিন্তু নিুবিত্ত কি আছে? গড়ে বাংলাদেশের নারীরা অনেক দূর এগিয়েছেন অগ্রগতির দিক থেকে। কিন্তু ক্ষমতায়নের জন্য দুটি জিনিস দরকার একটি হল সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নারীরা আছেন কি না। আরেকটি হলো নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে কি না। এ জায়গায় আমরা বার বার হোঁচট খাচ্ছি। এ জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে।

ইভান আহমেদ কথা বলেন, আমি পাচার রোধ, যৌনকর্মী এবং হিজড়াদের অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমার এ কাজের অনুপ্রেরণা পেয়েছি দি হাঙ্গার প্রজেক্ট থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর ত্থেকে। বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক-এর ট্রেনিং করার পর থেকে আমি নিজেকে বুঝতে শিখেছি, উজ্জীবিত হয়েছি। আমি এখন কাজ করে অন্যদের উজ্জীবিত করে যাচ্ছি।  

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fifteen − twelve =