অনেক ফজিলতপূর্ণ নামাজ হলো সালাতুত তাসবীহ। প্রত্যেক রাকাআতে ৭৫ বার করে ৪ রাকাআতে মোট ৩০০ বার তাসবীহ পড়তে হয়।সালাতুত তাসবীহ নামাজের ফজিলতের মধ্যে অন্যতম হলো—বিগত জীবনের গোনাহ মাফ এবং অনেক সাওয়াব লাভ হয়। রমজানে এ নামাজের ফজিলত সবচেয়ে বেশি। এ নামাজের ব্যাপারে হাদিসের একটি বর্ণনা পাওয়া যায়।
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘একদিন রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমার পিতা) হজরত আব্বাসকে বললেন, ‘হে আব্বাস! হে চাচাজান! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি আপনাকে সংবাদ দেব না? আমি কি আপনার সঙ্গে ১০টি সৎকাজ করব না? (অর্থাৎ ১০টি উত্তম তাসবীহ শিক্ষা দেব না) যখন আপনি তা (আমল) করবেন—
✔️ তখন আল্লাহ্ আপনার আগের, পরের, পুরাতন, নতুন, সব ধরনের গোনাহ মাফ করে দেবেন।
✔️ ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত গোনাহ মাফ করে দেবেন।
✔️ সগিরা ও কবিরা গোনাহ মাফ করে দেবেন।
✔️ গোপন ও প্রকাশ্য গোনাহ মাফ করে দেবেন।
(হে চাচা!) আপনি ৪ রাকাআত নামাজ পড়বেন এবং প্রত্যেক রাকাআতে সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন এবং যে কোনো একটি সূরা মিলাবেন। (অর্থাৎ প্রত্যেক রাকাআতে এ তাসবীহটি ৭৫ বার করে আদায় করতে হবে।)
সালাতুত তাসবীহ পড়ার নিয়ম—
সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরা মিলানোর পাশাপাশি প্রত্যেক রাকাআতে—
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ
“সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার”
—এ তাসবীহটি ৭৫ বার পড়তে হবে। একই নিয়মে ৪ রাকাআতে মোট ৩০০ বার তাসবীহ পড়ার মাধ্যমে তা আদায় করতে হয়।
✔️ নামাজে দাঁড়িয়ে সানা পড়ার পর [সূরা ফাতিহা পড়ার আগে] এ তাসবীহ (১৫ বার)
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ
✔️ সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা মিলানোর পর [রুকুর আগে] এ তাসবীহ (১০ বার)
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ
✔️ রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহ (سُبْحَانَ رَبِّىَ الْعَظِيْم) পড়ার পর এ তাসবীহ (১০ বার)
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ
✔️ রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় এ তাসবীহ (১০ বার)
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ
✔️ সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ (سُبْحَانَ رَبِّىَ الْأَعْلَى) পড়ার পর সিজদাবস্থায় এ তাসবীহ (১০ বার)
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ
✔️ দুই সিজদার মাঝে বসাবস্থায় এ তাসবিহ (১০ বার)
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ
✔️ দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ (سُبْحَانَ رَبِّىَ الْأَعْلَى) পড়ার পর সিজদাবস্থায় এ তাসবীহ (১০ বার)
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ
এভাবে দ্বিতীয় রাকাআতে দাঁড়িয়ে প্রথম রাকাআতের মতো এ নামাজ আদায় করতে হবে।
দুই রাকাআতের পর বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে উপরের নিয়মে বাকি ২ রাকাআত আদায় করতে হবে।
তাসবীহ ভুলে হলে করণীয়—
মনে রাখতে হবে তাসবীহ পড়ার সময় যদি কোনো স্থানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে/নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম তাসবীহ পড়া হয় তবে, পরবর্তী যে রোকনে তা স্মরণ হবে সেখানেই তা পড়ে নিলেই হবে।
[তবে ক্বওমা তথা রুকু থেকে দাঁড়ানোকালে ও দুই সিজদার মাঝখানে তাসবীহ ভুলে যাওয়া তাসবীহ আদায় করা যাবে না।] সূরা-ক্বিরয়াত পড়ার পূর্বে তাসবীহ ভুলে গেলে সূরা-ক্বিরয়াত পাঠের সেটি আদায় করতে হবে।
একইভাবে ক্বিরায়াতের পর তাসবীহ ভুলে গেলে—
রুকুতে গিয়ে আদায় করতে হবে।
রুকুতে তাসবীহ ভুলে গেলে—
উক্ত তাসবীহ প্রথম সিজদায় আদায় করতে হবে।
সিজদায় যাওয়ার পূর্বে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে—
প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে।
প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে—
দুই সিজদার মাঝখানে আদায় না করে দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে।
ঠিক দুই সিজদার মাঝখানের তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে পড়তে হবে।
আর দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে—
পরের রাকাআতে সূরা-ক্বিরয়াত পাঠ করার পূর্বে পড়ে নিতে হবে।
শেষ সিজদার তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে—
সালাম ফিরানোর পূর্বে তাসবীহ পড়ে নিতে হবে।
আর কোনো কারণে যদি এ নামাজে সাহু সিজদার প্রয়োজন হয় তবে এ সিজদায় কিংবা সিজদার মাঝখানে বসাবস্থায় এ তাসবীহ পড়তে হবে না।
‘ছলাতুত তাসবীহ’ নামাজ পড়াবস্থায় দানাদার তাসবীহ হাতে গণনা করা মাকরূহ বা অনুচিত।
তাসবীহ পড়ার ক্ষেত্রে স্মরণ রাখার জন্য আঙুলের কর গণনা করা যাবে না তবে আঙুল চেপে তাসবিহ এর সংখ্যা স্মরণ রাখা যাবে।
অতঃপর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে চাচা! এভাবে যদি প্রতিদিন একবার এ নামাজ পড়তে সক্ষম হন; তবে তা পড়বেন। আর যদি সক্ষম না হন, তবে প্রত্যেক জুমুআর দিনে একবার পড়বেন।
তাও যদি না পারেন, তবে প্রত্যেক মাসে একবার পড়বেন। তাও যদি না পারেন তবে প্রত্যেক বছর একবার পড়বেন, আর যদি তাও না পারেন তবে আপনার জীবনে অন্তত একবার পড়বেন।
—(তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
আল্লাহ্ তা’আলা মুসলিম উম্মাহকে সর্বাধিক সালাতুত তাসবিহ সম্বলিত নামাজ পড়ে উল্লেখিত ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন।