স্টাফ রিপোর্টারঃ- র্যাবের অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও সাংবাদিক ফরমান খান নিবিড়কে গভীর রাতে তার বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে নাটকীয় ভাবে অস্ত্র উদ্ধারের সাজানো মামলায় ফাঁসিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছে বলে অভিযোগ করেন তার পরিবার। র্যাব-১০ এর একটি আভিধানিক দল ১ ফেব্রুয়ারি-২০২২ রাত আড়াই ঘটিকায় যাত্রাবাড়ী থানাধীন দক্ষিণ কাজলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটায়। যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা নং-০৫, তারিখ-১ ফেব্রুয়ারি-২০২২ । মামলায় র্যাব কর্মকর্তা আব্দুল আলিম যে বক্তব্য উপস্থাপন করে সাংবাদিক নিবিড়কে অপরাধী বানানো হয়েছে, বাস্তবতার সাথে তার কোন মিল নেই। যা র্যাব কর্তৃক বিশেষ প্রেস ব্রিফিং ও র্যাব কর্মকর্তার দায়েরকৃত মামলার এজাহারেই প্রতীয়মান। এছাড়া ঘটনাটি সংগঠিত হওয়ার সময়ে ঘটনাস্থলের প্রত্যক্ষ দর্শী সাক্ষী ও সিসিটিভির ফুটেজে অসংখ্য তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
মামলার এজাহারে র্যাব কর্মকর্তা আব্দুল আলিম বলেন, তিনি নিয়মিত টহল ডিউটিতে থাকাবস্থায় ১ফেব্রুয়ারি-২০২২ রাত ৩.৫০ ঘটিকায় মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানাধীন নিমতলা নামক এলাকায় অবস্থান করাকালে গোপন সূত্রে সংবাদ পান ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন দক্ষিণ কাজলা এলাকার ১৪/এ আবুল হাশেম সরকারের বাহার মঞ্জিল বাসার গেটের সামনে কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী মাদক দ্রব্য ক্রয় বিক্রয় করিতেছে। উক্ত সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মোবাইল ফোনে অবহিত করিয়া সঙ্গীয় ফোর্সসহ রাত ৩টা ৫৫ ঘটিকায় শ্রীনগর থানাধীন নিমতলা এলাকা হইতে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে একই তারিখ ভোর ৫ টা ৫ মিনিট সময়ে ডিএমপি ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন দক্ষিণ কাজলা সাকিনস্থ ১৪/এ আবুল হাশেম সরকারের বাহার মঞ্জিল বাসার গেটের সামনের পাকা রাস্তার উপর পৌঁছালে উপস্থিতি টের পেয়ে একজন লোক পালানোর চেষ্টাকালে সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় আসামি ফরমান উল্লাহ খান নিবিড়কে আটক করেন।
এ সময় উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আবুল হাশেম সরকার, মোঃ আলী রবিন ও মোঃ মেহেদী হাসানের সম্মুখে নিবিড়ের দেহ বিবি মোতাবেক তল্লাশি করিলে নিবিড় তার পরিহিত প্যান্টের সামনের ডান কোমরে গোঁজানো অবস্থায় রাখা একটি বিদেশী পিস্তল নিজের হাতেই বের দেন। পিস্তলটির দৈর্ঘ্য সাড়ে সাত ইঞ্চি। যাহার ভিতর স্প্রিংযুক্ত একটি ম্যাগাজিন ছিল ও ১ একটি গুলি ছিল। অতঃপর তিনি ৫.৩০ ঘটিকায় পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক ও টর্চ লাইটের আলোতে জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (পরিচালক) মাহফুজুর রহমান বিশেষ প্রেস ব্রিফিংয়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল ১ফেব্রুয়ারি- ২০২২ তারিখ রাত ০২:৩০ ঘটিকা হতে ০৪:৩০ ঘটিকা পর্যন্ত একটি অভিযান পরিচালনা করে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন দক্ষিণ কাজলা এলাকা থেকে বিদেশী পিস্তলসহ ০১ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মোঃ নিরব @ নিবির@ ফরমান উল্লাহ খান (৪২) বলে জানা যায়। এসময় তার নিকট থেকে ০১টি বিদেশী পিস্তল, ০১টি ম্যাগাজিন ও ০১ রাউন্ড এ্যামুনিশান উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি একজন পেশাদার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। সে দীর্ঘদিন যাবৎ যাত্রাবাড়ীসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সুবিধামত স্থানে বিভিন্ন লোকজনদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালানা এবং একই সাথে লাইসেন্স ব্যতীত অবৈধ অস্ত্রের কেনাবেচা করে আসছিল বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি অস্ত্র মামলা রুজু করা হয়েছে।
সাংবাদিক ফরমান উল্লাহ খান নিবিড়ের স্ত্রী শাহানা আক্তার ঘটনার বিবরন দিয়ে বলেন, আমার স্বামী সংবাদিক ফরমান উল্লাহ খান নিবিড় এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ফরহাদ সিন্ডিকেট সহ তাদের শেল্টার দাতাদের বিরুদ্ধে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে আসছে। এ কারণে আমার স্বামী নিবিড় মাদক ব্যবসায়ী ফরহাদ সিন্ডিকেটকের নির্যাতনের শিকার হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় জিডি করেন। যা আদালত কর্তৃক তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এতে অপকর্মকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যাবে বিধায় আমার স্বামীকে চক্রান্ত করে এই মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করেছে। আমার স্বামীকে গভীর রাতে ঘর থেকে তুলে নিয়ে নাটকীয় ভাবে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছে। এই ঘটনার যথেষ্ট স্বাক্ষ্যপ্রমান রয়েছে। ঘটনার সময় আমার স্বামী ৯৯৯-এ ফোন করে সহযোগিতা চেয়েছিলেন এবং আমার বাড়ীওলা সহ আশপাশে অনেক জায়গায় সিসিটিভির ফুটেজ রয়েছে। যা সুষ্ঠ তদন্ত করলে প্রকৃত সত্যঘটনা বেরিয়ে আসবে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাই আদালতের কাছে সুবিচার কামনা করছি। অত্র মামলার নিয়োজিত আইনজীবী মোঃ মনির হোসেন শাওন বলেন, আসামি ফরমান উল্লাহ খান নিবিড় সম্পূর্ণ নির্দোষ, তাকে পরিকল্পিতভাবে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আসামিকে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ১ফেব্রুয়ারী-২০২২ রাত আনুমানিক ২ টা ৩০ মিনিটে নিজ বাসগৃহ থেকে গ্রেফতার করে পরবর্তীতে টাকা পয়সা নিয়ে নিয়ে মনোমালিন্য হয় এবং চক্রান্তকারীদের চক্রান্তের বিষয়ে সাক্ষ্য প্রমাণ দিতে অস্বীকার করায় অস্ত্র মামলায় জড়িত করা হয়, আমরা বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে ঘটনাস্থল ও পারিপার্শ্বিক বাড়ির এবং সড়কের সিসিটিভি ফুটেজ এবং গ্রেপ্তারকৃত আসামি ফরহাদ ও শহীদের মোবাইল নাম্বার ট্রেকিং, র্যাব কর্মকর্তাদের নাম্বার ট্রেকিং এবং বাড়িওয়ালা ও র্যাব কর্মকর্তার মোবাইলের কথোপকথন বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জব্দের আবেদন করি। উক্ত বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত আগামী ৩ মার্চ-২০২২ তারিখ শুনানির দিন ধার্য করেন