গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ

0
315

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: সম্প্রতি গ্যাসের অসাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে সরকার। এই মূল্য বৃদ্ধি যদি সহনীয় মাত্রায় হতো তবে কোন আপত্তি থাকার কথা নয়।  বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করছেন। বর্তমানে আবাসিকে ডাবল বার্ণারে মাসে ৯৭৫ টাকা পরিশোধ করতে হয়। এই মূল্য বৃদ্ধি এক লাফে ২১০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। তিতাস গ্যাসের ভোক্তারা বলছেন দুই চুলার মূল্য এক লাফে যদি বাড়িয়ে ২১০০ টাকা করা হয় তবে আগামি ২০২৩ সালে তা আরেক লাফে ৪২০০ টাকা করতে পারে সরকার। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির এই প্রস্তাবে সাধারণ লোকদের মধ্যে অতংক বিরাজ করছে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত চলছে এই আতংকের ঢেউ।

চুলা প্রতি ৫০ টাকা বাড়ানো হলে তেমন আপত্তি ছিল না। কিন্তু এক লাফে এই মূল্য ডাবল করার পেছনে জন হয়রানির ইঙ্গিত বহন করছে। একাধিক সংগঠন গ্যাসের এই ভৌতিক মূল্য বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সভা, সমাবেশ র‌্যালি শুরু হয়ে গেছে। এসব প্রতিবাদ সরকারের কানে কতটুকু পৌঁছবে তা সময়ে বুঝা যাবে। করোনার পর পর তিনটি ধাক্কা সামাল দিতে সাধারণ লোকজন বিশেষ করে মধ্যবিত্ত লোকদের অবস্থা বর্ণনা করার মতো নয়। অনেক ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।

বেড়েছে বেকার সমস্যা। এই অবস্থায় গ্যাসের এই অস্বাভাবিক     মূল্য সাধারনের  ওপর জুলুমের খড়গ হতে যাচ্ছে। মূল্য বৃদ্ধির এই ধাক্কার কারণে গ্যাস নির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাবে। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাসাবাড়িতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। অনেক বাধ্য হয়ে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার প্রচুর সংখ্যক শিল্প প্রতিষ্ঠানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে তিতাস গ্যাসের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা- কর্মচারীরা প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের অভাব নেই। গ্যাসের এই অবৈধ সংযোগ নিয়ে যখন জানাজানি হয় তখনই কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়াতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। প্রস্তাবিত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কিছু ব্যবসায়ে ধ্বস নামবে ও কিছু ব্যবসায়ী রাতারাতি টাকার পাহাড় বানাবে। জিম্মি হবে সাধারণ জনগণ।

এতে দেশে দুর্নীতি বাড়বে আশংকাজনক হারে। এমনিতেই বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১৩ তম হয়েছে। বার্লিন ভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইনটারন্যাশনাল এই সুচক প্রকাশ করে। টিআই এর বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড: ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির চিত্র অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর পরিবর্তন হয় নাই। চার বছর ধরে এই স্কোরে রয়েছে বাংলাদেশ। ভোজ্য তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্তদের অবস্থা সংকটাপন্ন। ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবদিরা একটি সিন্ডিকেট করে ভোজ্য তেলের মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তাদেরকে চুপসে মারছে অথচ কোন প্রতিকার নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও অসহনীয় মাত্রায় বেড়ে চলছে। এমতাবস্থায় গ্যাসের ভৌতিক মূল্য বৃদ্ধি  চলমান সংকটকে আরও প্রকট করে তুলবে। সরকারের উচিৎ জনদূর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seventeen + 20 =