রাজমিস্ত্রির কাজ করা নাহিদুল” যেভাবে স্বপ্নের নটর ডেম পেরোলেন

0
474

শৈশব কাটানো নাহিদুল পরিবারের বড় সন্তান। চার ভাইবোন আর মা-বাবা মিলিয়ে পরিবারে সদস্য ছয়জন। অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। শৈশব থেকে দারিদ্র্য দেখেছেন, কিন্তু পড়ালেখায় ছিলেন সব সময় ভালো। মেধাবী ছাত্র হিসেবে গ্রামে তাঁর একটা আলাদা পরিচয় ছিল। তবে স্কুল থেকে ফিরে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন কি না, সেই নিশ্চয়তা ছিল না। কখনো কখনো একবেলা খাবার জোগাতেই বেগ পেতে হতো। বাবা অন্যের জমিতে কাজ করতেন।তিনি আরো বলেন ‘মানুষের জমিতে কাজ করে কিছু টাকা পেতাম। ফসল তোলার সময় উত্তরাঞ্চল থেকে এদিকে শ্রমিক আসেন। আমি তাঁদের সঙ্গেও কাজ করেছি। এ ছাড়া প্রতিদিন মাঠে গরু চড়াতে যেতাম। এত কিছুর পর আসলে লেখাপড়াটা বিলাসিতা মনে হতো।’

তবে আশপাশের মানুষের সহযোগিতা নাহিদুল পেয়েছেন সব সময়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে যেমন ভালো ফলাফলের সুবাদে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেয় প্রজাপতি ডি এল উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জেএসসি পরীক্ষায় সব বিষয়ে জিপিএ–৫ পেয়ে কর্তৃপক্ষের আস্থার প্রতিদান দেন নাহিদুল। পরে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পড়ালেখা ছেড়ে দেবেন। স্কুলের এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে কাজের সন্ধানে প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসেন। কেরানীগঞ্জে জুটে যায় রাজমিস্ত্রির রাজমিস্ত্রির কাজ করা নাহিদুল যেভাবে নটর ডেম পেরোলেন

‘এসএসসি পরীক্ষার পর পড়ালেখা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জীবিকার সন্ধানে বাড়ি থেকে চলে আসি। কেরানীগঞ্জে শুরু করি রাজমিস্ত্রির কাজ,’ বলছিলেন নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পেরোনো শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম। ২০২১ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ–৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন নাহিদুল।

কখনো কখনো একবেলা খাবার জোগাতেই বেগ পেতে হতো। বাবা অন্যের জমিতে কাজ করতেন। নাহিদুলও ছিলেন বাবার সঙ্গী।

সংগ্রামের সেই দিনগুলো নিয়ে নাহিদুল বলছিলেন, ‘মানুষের জমিতে কাজ করে কিছু টাকা পেতাম। ফসল তোলার সময় উত্তরাঞ্চল থেকে এদিকে শ্রমিক আসেন। আমি তাঁদের সঙ্গেও কাজ করেছি। এ ছাড়া প্রতিদিন মাঠে গরু চড়াতে যেতাম। এত কিছুর পর আসলে লেখাপড়াটা বিলাসিতা মনে হতো।’

ঢাকা শহরের মতো নতুন এক জায়গায় কঠিন সময় পার করছিলেন নাহিদুল। এমন সময় হঠাৎ এক বড় ভাই নটর ডেম কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু পড়াশোনার সঙ্গে যেহেতু দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে, নাহিদুল সাহস পাচ্ছিলেন না। বড় ভাইয়ের জোরাজুরিতে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সুযোগ পেয়ে যান।

কিন্তু মায়ের উৎসাহ আর নটর ডেমের শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় নাহিদুল পথ হারাননি। তবে সবচেয়ে বেশি সাহায্য পেয়েছেন নটর ডেম কলেজের অ্যালামনাইদের কাছ থেকে। নাহিদুল বলছিলেন, ‘কলেজে ভর্তি হওয়ার পর নিজের খরচ জোগাতে বিভিন্ন রকম কাজ করেছি। উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ–৫ পাওয়ার পর এখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করছি। এখানেও সব খরচ দিয়েছেন নটর ডেম কলেজের অ্যালামনাই ও নটর ডেমিয়ানস ক্লাব বিডি লি.–এর সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাফায়েত উল্লাহ স্যার। এ ছাড়া শেখ মোহাম্মদ আরিফ স্যার, শহিদুল হাসান পাঠান স্যারসহ অনেকেই পাশে থেকেছেন।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × 5 =