পরস্পরের মধ্যে ঋণের লেনদেন করলে তখন তা লিখে রাখবে কি ….এ বিষয় ইসলাম বলে জেনে নিন

0
409

হে ঈমানদারগণ! যখন কোন নির্ধারিত সময়ের জন্য তোমরা পরস্পরের মধ্যে ঋণের লেনদেন করো তখন তা লিখে রাখো। ( আল বারাকা ১৮৩ আয়াত),আলোচ্য আয়াতের আল্লাহ তায়ালা লেনদেনের স্বচ্ছতার বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেছেন। ঋণ গ্রহণ বা ব্যবসায়ী কাজে যাতে সমাজে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট না হয়। দ্বন্দ্ব  কলহ সৃষ্টি না হয়। যারা শুধু আয়াতের অনুবাদ পড়বে তারা বুঝতে পারবে লেনদেনের স্বচ্ছতার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কতটা গুরুত্ব প্রদান করেছেন। স্বাভাবিকভাবে এই আয়াতের গুরুত্ব অনুধাবন করতে তফসিলে সহায়তাও লাগবেনা ।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে সুদের লেনদেনকে হারাম ঘোষণা করেছেন। আবার বিনা লাভে উত্তম ঋণ তথা করজে হাসানা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেছেন। যে ঋণ সাদকার সওয়াবও রয়েছে।


ব্যবসা-বাণিজ্য বা আর্থিক লেনদেনে সততা, স্বচ্ছতা, অঙ্গীকার পূর্ণ করা, যাকাত দেয়ার ওপর ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ করেছে। ব্যবসায় ধোকা, প্রতারণা, মজুদদারি,ভেজাল, মাপে কম দেয়া, মিথ্যা শপথ করা, সুদ জুয়া ইত্যাদি বিষয়কে সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে। আর্থিক লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলাম যেসব নীতি অনুসরণের নির্দেশ দেয় তার কটি নিচে উল্লেখ করা হলো;

ক) ইসলাম জীবনের সব ক্ষেত্রে সরলতা কোমলতা ও উদারতার প্রদর্শনের শিক্ষা দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির ওপর রহমত করেন যে কেনাবেচার সময় এবং নিজের অধিকার আদায়ের সময় কোমল আচরণ করে (বুখারী ২০৭৬)।


খ) মিথ্যা শপথ, প্রতারণা ছলচাতুরি কথার মারপ্যাঁচ সুদ ঘুষ জুয়া দুর্নীতি চুরি ডাকাতি ইত্যাদি অনৈতিক উপায় সম্পদ অর্জন করাকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করে। এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা নিজেদের একে অপরের মাল-সম্পদ অন্যায় অবৈধ প্রক্রিয়ায় খেয়ো না এবং জেনে-বুঝে মানুষের মাল সম্পদের কিছু অংশ অন্যায় ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে শাসকের সামনে উত্থাপন করোনা (সূরা বাকারা আয়াত ১৮৯)।


গ) ব্যবসায়-বাণিজ্য ও লেনদেনে প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। পণ্যদ্রব্যে ভেজাল, ভালো পণ্যের সাথে খারাপ পণ্য মেশানো, অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপন করা ইসলামে হারাম করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, এবং যদি তুমি কোনো সম্পদ থেকে খেয়ানতের ( চুক্তি ভঙ্গের) আশঙ্কা করো, তাহলে তুমিও একই ভাবে তাদের দিকে (চুক্তি) নিক্ষেপ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ খেয়ানতকারী দের ভালোবাসেন না (সূরা আনফাল আয়াত ৫৯) আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা পরস্পরের হিংসা করো না, পরস্পর ধোঁকাবাজি করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পশন করো না, একে অন্যের পেছনে শত্রুতা করো না, একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করো না (সহিঃ মুসলিম ২৫৬৪)।

ঘ) ব্যবসায় বাণিজ্যের বেলায় ক্রেতাকে ঠকানো হারাম। ক্রেতার অধিকার সঠিক ওজনে পূর্ণ লাভ করা। কোরআন ও সুন্নাহতে ওজনে কম দেয়া কে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ নিন্দনীয় ও পরকালীন দুর্ভাগ্যের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, যারা মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপদেবে এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে, এটাই উত্তম এবং হরিনামের উৎকৃষ্ট (সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত ৩৬)।

‌ঙ) ইসলামের দৃষ্টিতে খাদ্যপণ্যে ভেজাল মেশানো একটি মারাত্মক অপরাধ। আল-কুরআনে গুগোল আল্লাহ বলেন, মানুষকে পরিমাপে কম্বাক খারাপ দ্রব্য কিংবা ত্রুটিযুক্ত জিনিস দিও না (সূরা শোয়ারা আয়াত ১৮৪)। অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, কোন ব্যবসায়ের জন্য উচিত নয় ভেতরের বস্তুটির কথা বর্ণনা না করে কোন জিনিস বিক্রি করা ( মুসনাদে আহমদ ১৭৪৫১)

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen − ten =