ধর্ষিতা মনি আক্তারের ভাসমান রোহিঙ্গা শিশুর ন্যায় আরশ কাঁপানো আহাজারি, দেখার কেউ নাই!

0
337

মানবাধিকার সবার জন্য সর্বত্র সমান।মানবাধিকার মানবতা ও ক্ষমা ন্যায় বিচার কি নির্বাসনে মনি আক্তারের পিতা লুৎফর রহমান নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার পূর্ব দলিরাম মাঝাপাড়ার একজন ভূমিহীন নিঃস্ব ব্যাক্তি। একই পাড়ার ডিজিটাল প্রত্যারক নূরল কামারের ছেলে দেলাবর হোসেন ওরফে আকাশ (২১) এর চরম হিংস্রতার বিষাক্ত খপ্পরে পড়ে সবকিছু হারিয়ে বিয়ের প্রলোভনে সংসার বিহীন সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গা শিশুর ন্যায় তাদের আরশ কাঁপানো আহাজারি। জানা যায়, অসহায় দিনমজুর লুৎফ্ফর রহমানের ২য় কন্যা মনি আক্তার (১৭) স্ত্রীর অধিকার ও তার ছয় বছরের কন্যা সন্তান দিলরুবার পিতার স্বীকৃতির আশায় প্রশাসন ও এলাকার মহৎ প্রধানের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।

এ বিষয়ে ঐ এলাকার পানের দোকানদার হেলাল উদ্দিন, আসাব উদ্দিন, আতিয়ার রহমান ও মেম্বার সুরুজ খান, সাংবাদিক সুফিয়ান ও জাহাঙ্গীর আলম জানান, মনি আক্তারের বয়স যখন ১১ বছর তখন প্রতিবেশি নুরল কামারের লম্পট ছেলে দেলাবর হোসেন প্রায় কুপ্রস্তাব দিত।

রাজী না হলে তাকে বিয়ের প্রলোভন দিত। অবশেষে দেলাবর সুযোগ বুঝে তার পছন্দের চারজন লোকের উপস্থিতিতে বিয়ে রেজিস্ট্রির কথা বলে সবুজ কাগজে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া মনি আক্তারের স্বাক্ষর নেয়। প্রকাশ করে যে, আমাদের বিবাহ কার্য সম্পন্ন হলো। আজ হতে আমরা স্বামী-স্ত্রী।

মনি আক্তারকে সতর্ক করে দেয়া হয় যে, তোমার বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহের কথা প্রকাশ করা যাবে না। তার পর থেকে মনি আক্তারকে যখনেই একা পেত তখনেই স্বামী-স্ত্রী রুপে সঙ্গম করতো। যখন ১৫/২০ সপ্তাহের অন্তসত্বা তখন মনির মা ও বাবা তার মেয়ের পরিণতির কথা জানতে পারে।

মনির অসহায় মা- বাবা গর্ভবর্তী মনি আক্তারকে দেলাবরের বাড়ীতে নিয়ে যাবার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে সে বিবাহের কথা অস্বীকার করে। স্থানীয়ভাবে আপোষের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে এফিডেভিট ও আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টসহ ৯/১ ধারায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নীলফামারী আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ২৬/১৫।

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করলে থানা কতৃপক্ষ জানান, ধর্ষক দেলাবর পালিয়ে থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। এই অসহায় ধর্ষিত মনি আক্তার তার সন্তান দিলরুবার পিতৃত্বের অধিকার চায়। এটাই তার জীবনের সর্ব্বোচ্চ চাওয়া পাওয়া। মনি আক্তার ফলাফল শূন্য হেতু নিরাশ হয়ে দেলাবরের বাড়ীতে গিয়ে দিলরুবাকে রেখে আত্মহত্যা করে জীবনের সমাপ্তি ঘটানোই তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

মনি আক্তার এ সব কথা বলে বিভিন্ন মহৎপ্রাণ ব্যক্তির দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার। এ এক কঠিন দুঃসময়! এ দুঃসময়ে ভাল থাকবেন কি করে ? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অফিস আদালতে, ঘরে- বাইরে, মাঠে-ঘাটে, পত্র-পত্রিকায় সবখানেই ডিজিটাল প্রত্যারণা; প্রত্যারণার ভাষা ছাড়া আর কোন ভাষা নেই যেন! কবি শাহাদাৎ হোসেনের কবিতার সাথে সুর মিলিয়ে বলতে ইচ্ছা করে,” আর কভু গাহিব না গান, নিভেছে দিনের আলো, জীবনের মধ্যাহ্ন বেলায়।

” মনির বাবা আজ ছেলে- মেয়েদের ঠিকমতো খেতে দিতে পারে না। বছর জুরে তার অর্থ কষ্ঠ। মনির মেয়ের বয়স ছয়। খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে।  মনি তার অসহ্য জীবন নিয়ে বাঁচতে চায় না। মনির বাবা- মা জানায়, আমরাতো নিজেই তিন বেলা তিন মুঠো খেতে পাই না। মনির সন্তানকে কে খাওয়াবে? সে চিন্তায় আজ মনির বাবা- মা অস্থির! কি করবে? কিছু বুঝতেই পারছেন না। জীবনের চাওয়া- পাওয়া সবেইতো ভেস্তে গেছে। কে মনির বাচ্ছাকে খাওয়াবে। কেমন করে মানুষ করবে? বাচ্ছাটি কার দায়িত্বে থাকবে।

থাকার ঘর নাই। মনির বাবার জমি কিনে বাড়ী করার সামর্থ্য না থাকায় অন্যের জমিতে ছাপড়ী টাঙ্গিয়ে পরিবার নিয়ে কোন রকম দিনাতিপাত করেন। কবিতার ভাষায়, অসহ্য এই জীবন ধারণ দুনিয়াতে আসি, জন্ম থেকে দিল প্রভু ব্যথার ও হাসি। ব্যথার হাসিতে জীবন নিঃস্ব বাকী কিছু নাই। মানব কুলের যাত্রী হয়ে পেলাম নাকো ঠাই, ঠাই বা যদি নাই দিলে জন্ম কেন দিলে, তখনেই ভাল হতো বুঝি জন্ম থেকে নিলে..। এই ক্ষতিগ্রস্থ বিপদাপন্ন দুর্দশাগ্রস্থ মনি ও মনির বাবার পার্শ্বে দাড়ানো অবশ্যই দরকার।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

sixteen + eighteen =