পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন-ঘরে ঘরে শতভাগ বিদ্যুৎ….. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

0
291

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,’ ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জন্ম গ্রহন করেন। যাঁর জন্ম না হলে আমরা কোনদিন স্বাধীনতা পেতাম না। জাতি হিসেবে মর্যাদা পেতাম না। এ মার্চ মাসের ২৬ মার্চ তিঁনি স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন। পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ২৫শে মার্চ যে গনহত্যা শুরু করে তার পরপরই তিঁনি স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। আর এ মার্চ মাসেই আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে আজ আলো জ্বালতে পেরেছি।’ আজ সোমবার ২১ মার্চ দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা ভিত্তিক পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫’র ১৫ আগষ্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিল জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধুকে। স্বজন হারা, দেশ হারা হয়ে রিফুজি হয়ে থাকতে হয়েছিল বিদেশের মাটিতে। বেশ সময় লেগেছিল এ আঘাত সহ্য করতে। ৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকার গঠন করি। তখন দেশে ছিল বিদ্যুতের জন্য হাহাকার, সামান্য কিছু লোক বিদ্যুৎ পায়। গ্রামে গ্রামে তো বিদ্যুৎ নাই। আমরা উদ্দোগ নিলাম। শুধু সরকারই না, বেসরকারী খাতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করে মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌছাঁবো। যেখানে মাত্র ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম, পাঁচ বছরের মধ্যেই আমরা ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হলাম। দুর্ভাগ্য আমরা ২০০১ – এ সরকারে আসতে পারিনি। ২০০৮-এ নির্বাচনের পর যখন ২০০৯-এ সরকার গঠন করি তখন দেখলাম ৪৩০০ থেকে কমে ৩২০০-তে নেমে গেছে বিদ্যুৎ। মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু বাংলাদেশ সেখানে পিছিয়ে যাচ্ছিল। ২১টা বছর, এছাড়া ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যারা সরকারে ছিল এদেশকে এগিয়ে নেয়ার কোন আন্তরিকতাই তাদের ছিল না। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য এদেশের মানুষের। ’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ’২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ২০২২ পর্যন্ত এই ১৩ বছর এক টানা গনতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি বলেই দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি মানুষ ও ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবেনা। আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো, ইনশআল্লাহ। রাঙ্গাবালী, নিঝুম দ্বীপ, স্বন্দীপ এলাকায় নদীর তলদেশ থেকে আমরা সাব মেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছি। ২১০০ সালের ডেল্টা প্লান আমরা করে দিচ্ছি। আমাদের সকলকে এক সাথে কাজ করতে হবে যাতে বাংলাদেশ আর পেছনে না ফেরে। ’

বিদ্যুত ও জ্বালানী মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, চীন সরকারে রাষ্ট্রদূত লে চিং, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো.হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড (বিপিসিএল)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদ আলম প্রমুখ। এ সময় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বৃন্দ, সিনিয়র সচিব বৃন্দ, প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ১০টা ৪৫মিনিটে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এসে পৌঁছালে রামনাবাদ চ্যানেলে ২২০ টি পাল তোল নৌকা পতাকা নাড়িয়ে ও সঙ্গীত পরিবেশন করে আকর্ষনীয় ডিসপ্লের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানায়। প্রতিটি নৌকায় ৫ জন জেলে রঙীন পোষাকে সজ্জিত হয়ে এ ডিসপ্লেতে অংশ নেয় জেলেরা। প্রধানমন্ত্রী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে বসে জেলেদের এ ডিসপ্লেতে মুগ্ধ হয়ে তার ব্যবহৃত মুঠো ফোনে তাঁকে ছবি তুলতে দেখা গেছে। পরে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন। এছাড়া ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সভাস্থলে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতির উপর বিশেষ প্রমান্য চিত্র উপভোগ করেন। পরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন ও দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষনার পর পর রঙীন আতশবাজিতে বর্নিল হয়ে ওঠে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার রোদ্রজ্জ্বল নীল আকাশ।

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সুত্রে, আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩ তম দেশ। এশিয়ায় সপ্তম ও দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশ ছাড়া শুধু ভারতে এ ধরনের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমর্পোট অ্যান্ড এক্সর্পোট করপোরশনের (সিএমসি) মধ্যে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে কয়লা ভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ হাজার একর জমির উপর নির্মিত পরিবেশবান্ধব এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মানে ব্যয় হয়েছে ২.৪৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 4 =