কুমিল্লার বাজার গুলোতে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম, সরকারি মনিটরিং জোরদারের আহবান

0
355

খোলা সয়াবিনের দাম ছিলো ১২২-১২৫ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন ১৩০-১৩৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকায়। একইভাবে চিনি ৬৫-৭০ থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। গুঁড়া দুধের দাম ছিলো প্রতিকেজি ৫০০-৬৩০ টাকা। এখন একই মানের দুধের দাম ৬৯০-৭০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি  ১১০-১২০ থেকে বেড়ে এখন ১৬০-১৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সরু চালের দাম ছিলো ৫৮-৬৪ টাকার মধ্যে। এখন একই মানের চাল বিক্রি হচ্ছে এখন ৬৫-৭০ টাকায়। তবে যেকোনো ধরনের মোটা চাল ৫০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। আলু দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। একমাস আগেও আলু কেজি ছিলো সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। সেই আলু এখন ৬০-৭০ টাকা কেজি। এছাড়া পটল, বেগুন, বরবটি, কাকরোল, কচুর, করলা, টমেটো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। আগে যে লাউ কিনতে পাওয়া যেতো ৪০ টাকায়, সেই লাউ এখন ৮০-৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর দেশি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। গরুর মাংসের দাম ৫২০ থেকে বেড়ে একলাফে ৬৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আয়ের তুলনায় ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ায় পরিবারগুলোতে তৈরি হয়েছে বাজার ভীতি।

টিসিবির লাইনও দেখা যাচ্ছে অনেক দীর্ঘ লাইন। অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন, কেমন যেন চারপাশে হাহাকার। সিটির পদুয়ার বাজারে আব্দুর রহিম নামের এক সরকারী চাকুরী জীবি ক্রেতা গণ-মাধ্যমকে বলেন, বিগত বছর গুলোতে ২৫ হাজার টাকা বেতনে পেলেও পরিবারে সব ধরনের খরচ মেটানোর পর মাস শেষে কিছু সঞ্চয় হতো। কিন্তু এখন পরিবারের চাহিদা পূরণ করতেই হিমশিম খাচ্ছি, প্রতি মাসে ঋনী হচ্ছি। রহিম জানান নিত্যপণ্যের দাম যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে তো মানুষের জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও গভীর হবে। লিটন নামে এক শিক্ষক বলেন, নিয়মিত ব্যয় বাড়লেও আয় আগের মতোই আছে।

বাজারে সবকিছুর দাম প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। আমরা এখন কোথায় যাবো। শারমিন বেগম নামের এক মহিলা ক্রেতা বলেন, বর্তমানে বাজারে সবকিছুর দামই বেশি। গত মাসের তুলনায় এ মাসে আরো দাম বেড়েছে। আমরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। রাসেল নামের  নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান এখন যেভাবে তেল, পেঁয়াজ, আলুর দাম বাড়ছে। আগামী মাসে রোজা উপলক্ষে দাম যেন আর না বাড়ে সে ব্যাপারে প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি সহ কঠিন ভাবে বাজার মনিটরিং এ রাখা প্রয়োজন। রাজগঞ্জ বাজারের খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মালেক জানান, কাঁচামাল আমদানি কম হলে দাম বাড়ে। নতুন পেঁয়াজ উঠা শুরু হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে রোজার আগে দাম কমবে।

রমজানে পেঁয়াজের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কাঁচা মরিচ ব্যবসায়ী শাহাআলম জানান, বর্তমানে জমিনে মরিচ তুলে ধান চাষ হচ্ছে। এজন্য দাম বাড়ছে। সরবরাহ না থাকলে দাম আরও বাড়তে পারে। আদা-রসুন ব্যবসায়ী মজিবর জানান, আদা-রসুনের বাজারে তেমন পরিবর্তন নেই। দাম যা ছিল তাই-ই আছে। কেজিতে অল্প বেড়েছে। চক বাজারের বেশ কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী জানান, বাজার স্থিতি হলে তাদের জন্যও ভালো হয়।

হঠাৎ করে দাম বাড়লে বিক্রিতেও সমস্যা হয়। যে দামই হোক মূল্য নির্ধারিত হলে সবার জন্যই ভালো। কারণ গত এক মাসে কেজিতে তেলের দাম ৩০-৫০ টাকা বেড়েছে। সবজি বিক্রেতা মনির বলেন, বাজারে ক্রেতা না কমলেও চাহিদা কমেছে। যেসব ক্রেতা আগে ব্যাগভর্তি সবজি কিনতেন তারা এখন হিসেব করে কিনছেন।

রাজগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতারা জানান, বাজারে বর্তমানে তেল ও পেঁয়াজ নিয়ে ক্রেতাদের ক্ষোভ বেশি। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে যেন কোনো ব্যবসায়ী তেল বিক্রি না করে সেজন্য প্রতিদিন কমিটির পক্ষ থেকে নজরদারি করা হচ্ছে। আর পেঁয়াজ আমদানি কম ছিল তাই দাম বেড়েছে। এখন প্রতিদিন আমদানি বাড়ছে, দামও কমতে শুরু করেছে।

রোজায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। কুমিল্লার বিভিন্ন বাজার গুলোতে অভিযান পরিচালনাকারী একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাজারে তেল পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম যেন অযথা না বাড়ে সেজন্য জেলা প্রশাসন প্রতিনিয়ত নজরদারি ও অভিযান পরিচালনা করছে। রমজানেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। রমজানে টিসিবি অনেক বড় একটা সাপোর্ট নিয়ে আসছে। আমরা সেটাও সঠিকভাবে মনিটরিং করবো।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four + 7 =