লাইলাতুল ক্বদর ও শবেকদর অন্বেষণ,শবে কদরের ইবাদত

0
513

লাইলাতুল ক্বদর,শবেকদর অন্বেষণ ,শবে কদরের ইবাদত ৮৩ বছর ৪ মাস অপেক্ষা উত্তম

রমাযান মাসের শেষ দশকের বেজোড় সংখ্যার রাত্রিগুলোতে শবেকদর অনুসন্ধান করা মুস্তাহাব।

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর অনুসন্ধানে উক্ত রাত্রিগুলিতে বড় মেহনত করতেন। আর এ কথা পূর্বে বলা হয়েছে যে, রমাযানের শেষ দশক এসে উপস্থিত হলে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) (ইবাদতের জন্য) নিজের কোমর (লুঙ্গি) বেঁধে নিতেন, সারারাত্রি জাগরণ করতেন এবং আপন পরিজনকেও জাগাতেন।

তাছাড়া শবেকদরের সন্ধানে ও আশায় তিনি ঐ শেষ দশকের দিবারাত্রে ই’তিকাফ করতেন।

আসুন

আমরা দেখি শবেকদর কি?

তার কদর কতটুক?

এবং তার আহকাম কি?

শবেকদরের নাম শবেকদর কেন?

আরবীতে ‘লাইলাতুল ক্বাদর’-এর ফারসী, উর্দু, হিন্দী ও বাংলাতে অর্থ হল শবেকদর। আরবীতে ‘লাইলাহ’ এবং ফারসীতে ‘শব’ শব্দের মানে হল রাত। কিন্তু ‘ক্বাদর’ শব্দের মানে বিভিন্ন হতে পারে।

আর সে জন্যই এর নামকরণের কারণও বিভিন্ন। যেমনঃ-

১। ক্বাদর মানে তকদীর। সুতরাং লাইলাতুল ক্বাদর বা শবেকদরের মানে তকদীরের রাত বা ভাগ্য-রজনী। যেহেতু এই রাতে মহান আল্লাহ আগামী এক বছরের জন্য সৃষ্টির রুযী, মৃত্যু ও ঘটনাঘটনের কথা লিপিবদ্ধ করে থাকেন।

যেমন তিনি এ কথা কুরআনে বলেন,

{فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيْم}

অর্থাৎ, এই রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।

(কুরআনুল কারীম ৪৪/৪)

আর এই তকদীর; যা বাৎসরিক বিস্তারিত আকারে লিখা হয়। এ ছাড়া মাতৃগর্ভে ভ্রূণ থাকা অবস্থায় লিখা হয় সারা জীবনের তকদীর। আর আদি তকদীর; যা মহান আল্লাহ আসমান-যমীন সৃষ্টি করার ৫০ হাজার বছর পূর্বে ‘লাওহে মাহফূয’-এ লিখে রেখেছেন।

২। ক্বাদরের আর একটি অর্থ হল, কদর, শান, মর্যাদা, মাহাত্ম্য ইত্যাদি। যেমন বলা হয়ে থাকে, সমাজে অমুকের বড় কদর আছে। অর্থাৎ, তার মর্যাদা ও সম্মান আছে। অতএব এ অর্থে শবেকদরের মানে হবে মহিয়সী রজনী।

৩। উক্ত কদর যে রাত জেগে ইবাদত করে তারই। এর পূর্বে যে কদর তার ছিল না, রাত জেগে শবেকদর পাওয়ার পর আল্লাহর কাছে সে কদর লাভ হয় এবং তাঁর কাছে তাঁর সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। আর তার জন্যই একে শবেকদর বলে।

৪। ঐ কদরের রাতে আমলেরও বড় কদর ও মাহাত্ম্য রয়েছে।

সে জন্যও তাকে শবেকদর বলা হয়।

৫। ক্বাদরের আর এক মানে হল সংকীর্ণতা। এ রাতে আসমান থেকে যমীনে এত বেশী সংখ্যক ফিরিশ্তা অবতরণ করেন যে, পৃথিবীতে তাঁদের জায়গা হয় না। বরং তাঁদের সমাবেশের জন্য পৃথিবী সংকীর্ণ হয়। তাই এ রাতকে শবেকদর বা সংকীর্ণতার রাত বলা হয়।

শবেকদরের মাহাত্ম্যঃ-

১। শবেকদরের রয়েছে বিশাল মর্যাদা ও মাহাত্ম্য। মহান আল্লাহ এই রাতে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং সে রাতের মাহাত্ম্য ও ফযীলত বর্ণনা করার জন্য কুরআন মাজীদের পূর্ণ একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন এবং সেই সূরার নামকরণও হয়েছে তারই নামে।

মহান আল্লাহ বলেন,

{إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ، وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ، لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ}

অর্থাৎ, নিশ্চয় আমি ঐ কুরআনকে শবেকদরে অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি জান, শবেকদর কি? শবেকদর হল হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

(কুরআনুল কারীম ৯৭/১-৩)

এক হাজার মাস সমান ৩০ হাজার রাত্রি। অর্থাৎ এই রাতের মর্যাদা ৩০,০০০ গুণ অপেক্ষাও বেশী! সুতরাং বলা যায় যে, এই রাতের ১টি তসবীহ অন্যান্য রাতের ৩০,০০০ তসবীহ অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ এই রাতের ১ রাকআত নামায অন্যান্য রাতের ৩০,০০০ রাকআত অপেক্ষা উত্তম।

বলা বাহুল্য, এই রাতের আমল শবেকদর বিহীন অন্যান্য ৩০ হাজার রাতের আমল অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ। সুতরাং যে ব্যক্তি এই রাতে ইবাদত করল, আসলে সে যেন ৮৩ বছর ৪ মাস অপেক্ষাও বেশী সময় ধরে ইবাদত করল।

২। শবেকদরের রাত হল মুবারক রাত, অতি বর্কতময়, কল্যাণময় ও মঙ্গলময় রাত। মহান আল্লাহ বলেন,

{إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ}

অর্থাৎ, আমি এ কুরআনকে বর্কতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি।

(কুরআনুল কারীম ৪৪/৩)

উক্ত বর্কতময় রাত্রি হল ‘লাইলাতুল ক্বাদর’ বা শবেকদর। আর শবেকদর নিঃসন্দেহে রমাযানে। বলা বাহুল্য, ঐ রাত্রি শবেবরাতের রাত্রি নয়; যেমন অনেকে মনে করে থাকে এবং ঐ রাত্রে বৃথা মনগড়া ইবাদত করে থাকে। কারণ, কুরআন (লাওহে মাহফূয থেকে) অবতীর্ণ হয়েছে (অথবা তার অবতারণ শুরু হয়েছে) রমাযান মাসে। কুরআন বলে,

{شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ}

অর্থাৎ, রমাযান মাস; যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

(কুরআনুল কারীম ২/১৮৫)

আর তিনি বলেন,

{إِنا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ}

অর্থাৎ, নিশ্চয় আমি ঐ কুরআনকে শবেকদরে অবতীর্ণ করেছি।

(কুরআনুল কারীম ৯৭/১-৩)

আর এ কথা বিদিত যে, শবেকদর হল রমাযানে; শা’বানে নয়।

{فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ}

৩। এই রাত সেই ভাগ্য-রাত; যাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। (কুরআনুল কারীম ৪৪/৪)

৪। এটা হল সেই রাত; যে রাতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফিরিশ্তাকুল তাঁদের প্রতিপালকের আদেশে অবতীর্ণ হন। অর্থাৎ, যে কাজের ফায়সালা ঐ রাতে করা হয় তা কার্যকরী করার জন্য তাঁরা অবতরণ করেন। মহান আল্লাহ বলেন,

{تَنَزَّلُ الْمَلاَئِكَةُ وَالرُّوْحُ فِيْهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ}

৫। এ রাত হল সালাম ও শান্তির রাত।

মহান আল্লাহ বলেন,

{سَلاَمٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ}

অর্থাৎ, সে রজনী ফজর উদয় পর্যন্ত শান্তিময়।

পূর্ণ রাতটাই শান্তিতে পরিপূর্ণ; তার মধ্যে কোন প্রকার অশান্তি নেই। রাত্রি জাগরণকারী মুমিন নারী-পুরুষের জন্য এ হল শান্তির রাত্রি। শয়তান তাদের মাঝে কোন প্রকার অশান্তি আনয়ন করতে পারে না। অথবা সে রাত্রি হল নিরাপদ। শয়তান সে রাত্রে কোন প্রকার অশান্তি ঘটাতে পারে না। অথবা সে রাত হল সালামের রাত। এ রাতে অবতীর্ণ ফিরিশ্তাকুল ইবাদতকারী মুমিনদেরকে সালাম জানায়।[1]

৬। এ রাত্রি হল কিয়াম ও গোনাহ-খাতা মাফ করাবার রাত্রি।

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন,

‘‘যে ব্যক্তি ঈমান রেখে ও নেকী লাভের আশা করে শবেকদরের রাত্রি কিয়াম করে (নামায পড়ে), সে ব্যক্তির পূর্বেকার গোনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়।’’[2]

বলা বাহুল্য, এ রাত্রি হল ইবাদতের রাত্রি। এ রাত্রি ধুমধাম করে পান-ভোজনের, আমোদ-খুশীর রাত্রি নয়। আসলে যে ব্যক্তি এ রাত্রের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সেই সকল প্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।

শবেকদর কোন্ রাতটি?

রমাযান মাসের শেষ দশকের যে কোন একটি রাত্রি শবেকদরের রাত্রি। একদা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) শবেকদরের অনবষণে রমাযানের প্রথম দশকে ই’তিকাফ করলেন।

অতঃপর মাঝের দশকে ই’তিকাফ করে ২০শের ফজরে বললেন, ‘‘আমাকে শবেকদর দেখানো হয়েছিল; কিন্তু পরে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাত্রে তা অনুসন্ধান কর। আর আমি দেখেছি যে, আমি পানি ও কাদাতে সিজদা করছি।’’[3]

অতঃপর ২১শের রাত্রিতে বৃষ্টি হয়েছিল। অতএব সে বছরে ঐ ২১শের রাতেই শবেকদর হয়েছিল।

পূর্বোক্ত হাদীসের ইঙ্গিত অনুসারে শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিগুলোতে শবেকদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। সুতরাং ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ এই ৫ রাত হল শবেকদর হওয়ার অধিক আশাব্যঞ্জক রাত। অবশ্য এর মানে এই নয় যে, বিজোড় রাত্রি ছাড়া জোড় রাত্রিতে শবেকদর হবে না। বরং শবেকদর জোড়-বিজোড় যে কোন রাত্রিতেই হতে পারে। তবে বিজোড় রাতে শবেকদর সংঘটিত হওয়াটাই অধিক সম্ভাবনাময় ও আশাব্যঞ্জক।[4]

শেষ দশকের মধ্যে শেষ সাত রাত্রিগুলো অধিক আশাব্যঞ্জক। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন,

‘‘আমি দেখছি যে, তোমাদের সবারই স্বপ্ন শেষ সাত রাতের ব্যাপারে একমত হয়েছে।

সুতরাং যে ব্যক্তি শবেকদর অনুসন্ধান করতে চায়, সে যেন শেষ সাত রাতগুলিতে করে।’’[5]

অবশ্য এর অর্থ যদি ‘কেবল ঐ বছরের রমাযানের শেষ সাত রাতের কোন এক রাতে শবেকদর হবে’ হয় এবং তার অর্থ ‘আগামী প্রত্যেক রমাযানে হবে’ না হয় তাহলে। কারণ, এরূপ অর্থ হওয়ার সম্ভাবনাও নাকচ করা যায় না। তাছাড়া যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তাঁর শেষ জীবন অবধি রমাযানের শেষ দশকের পুরোটাই ই’তিকাফ করে গেছেন এবং এক বছর শবেকদর ২১শের রাত্রিতেও হয়েছে – যেমন এ কথা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।[6]

শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিগুলির মধ্যে ২৭শের রাত্রি শবেকদরের জন্য অধিক আশাব্যঞ্জক।

কেননা, উবাই বিন কা’ব (রাঃ) ‘ইন শাআল্লাহ’ না বলেই কসম খেয়ে বলতেন, ‘শবেকদর রাত্রি হল ২৭শের রাত্রি; ঐ রাত্রিতে কিয়াম করতে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করেছেন।’[7]

অনুরূপভাবে মুআবিয়া (রাঃ) মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট থেকে বর্ণনা করে বলেন, ‘২৭শের রাত্রি হল শবেকদরের রাত্রি।’[8]

কিন্তু ঐ রাতে হওয়াই জরুরী নয়। কারণ, এ ছাড়া অন্যান্য হাদীস রয়েছে, যার দ্বারা বুঝা যায় যে, শবেকদর অন্য তারীখের রাতেও হয়ে থাকে।

বলা বাহুল্য, শবেকদরের রাত প্রত্যেক বছরের জন্য একটি মাত্রই রাত নয়। বরং তা বিভিন্ন রাত্রে সংঘটিত হতে পারে। সুতরাং কোন বছরে ২৯শে, কোন বছরে ২৫শে, আবার কোন বছরে ২৪শের রাতেও শবেকদর হতে পারে। আর এই অর্থে শবেকদর প্রসঙ্গে বর্ণিত সমস্ত হাদীসের মাঝে পরস্পর-বিরোধিতা দূর হয়ে যাবে।

শবেকদর একটি নির্দিষ্ট রাত না হয়ে এক এক বছরে শেষ দশকের এক এক রাতে হওয়ার পশ্চাতে হিকমত এই যে, যাতে অলস বান্দা কেবল একটি রাত জাগরণ ও কিয়াম করেই ক্ষান্ত না হয়ে যায় এবং সেই রাতের মর্যাদা ও ফযীলতের উপর নির্ভর করে অন্যান্য রাতে ইবাদত ত্যাগ না করে বসে। পক্ষান্তরে অনির্দিষ্ট হলে এবং প্রত্যেক রাতের মধ্যে যে কোন একটি রাতের শবেকদর হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বান্দা শেষ দশকের পুরোটাই কিয়াম ও ইবাদত করতে আগ্রহী হবে। আর এতে রয়েছে তারই লাভ।[9]

ঠিক হুবহু একই যুক্তি হল মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর হৃদয় থেকে শবেকদর (তারীখ) ভুলিয়ে দেওয়ার পিছনে।[10]

আর এতে রয়েছে সেই মঙ্গল; যার প্রতি ইঙ্গিত করে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘আমি শবেকদর সম্বন্ধে তোমাদেরকে খবর দেওয়ার জন্য বের হয়ে এলাম। কিন্তু অমুক ও অমুকের কলহ করার ফলে শবেকদরের সে খবর তুলে নেওয়া হল।

এতে সম্ভবতঃ তোমাদের জন্য মঙ্গল আছে। সুতরাং তোমরা নবম, সপ্তম এবং পঞ্চম রাত্রে তা অনুসন্ধান কর।’’[11]

শবেকদরের সওয়াব অর্জনের জন্য শবেকদর কোন্ রাতে হচ্ছে তা জানা বা দেখা শর্ত নয়। তবে ইবাদতের রাতে শবেকদর সংঘটিত হওয়া এবং তার অনুসন্ধানে সওয়াবের আশা রাখা শর্ত। শবেকদর কোন্ রাতে ঘটছে তা জানা যেতে পারে। আল্লাহ যাকে তওফীক দেন, সে বিভিন্ন লক্ষণ দেখে শবেকদর বুঝতে পারে। সাহাবাগণ (রাযি.) একাধিক নিদর্শন দেখে জানতে পারতেন শবেকদর ঘটার কথা। তবে তা জানা বা দেখা না গেলে যে তার সওয়াব পাওয়া যাবে না -তা নয়। বরং যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশা রেখে সে রাত্রিতে ইবাদত করবে, সেই তার সওয়াবের অধিকারী হবে; চাহে সে শবেকদর দেখতে পাক বা না-ই পাক।

বলা বাহুল্য, মুসলিমের উচিত, সওয়াব ও নেকী অর্জনের উদ্দেশ্যে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর আদেশ ও নির্দেশমত রমাযানের শেষ দশকে শবেকদর অনবষণ করতে যত্নবান ও আগ্রহী হওয়া। অতঃপর দশটি রাতে ঈমান ও নেকীর আশা রাখার সাথে ইবাদত করতে করতে যে কোন রাতে যখন শবেকদর লাভ করবে, তখন সে সেই রাতের অগাধ সওয়াবের অধিকারী হয়ে যাবে; যদিও সে বুঝতে না পারে যে, ঐ দশ রাতের মধ্যে কোন্ রাতটি শবেকদররূপে অতিবাহিত হয়ে গেল।

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন,

‘‘যে ব্যক্তি ঈমান রেখে ও নেকী লাভের আশা করে শবেকদরের রাত্রি কিয়াম করে (নামায পড়ে), সে ব্যক্তির পূর্বেকার গোনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়।’’[12]

অন্য এক বর্ণনায় আছে,

‘‘যে তার খোঁজে কিয়াম করল এবং সে তা পেতে তওফীক লাভ করল তার পূর্বেকার গোনাহসমূহ মাফ হয়ে গেল।’’[13]

আর একটি বর্ণনায় আছে,

‘‘যে ব্যক্তি শবেকদরে কিয়াম করবে এবং সে তা ঈমান ও নেকীর আশা রাখার সাথে পেয়ে যাবে, তার গোনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে।’’[14]

আর এ সব সেই ব্যক্তির ধারণাকে খন্ডন করে, যে মনে করে যে, যে ব্যক্তি শবেকদর মনে করে কোন রাতে কিয়াম করবে, তার শবেকদরের সওয়াব লাভ হবে; যদিও সে রাতে শবেকদর না হয়।[15]

শবেকদরের আলামতসমূহঃ-

শবেকদরের কিছু আলামত আছে যা রাত মধ্যেই দেখা যায় এবং আর কিছু আলামত আছে যা রাতের পরে সকালে দেখা যায়। যে সব আলামত রাতে পরিলক্ষিত হয় তা নিম্নরূপঃ-

শবেকদরের রাতের আকাশ অস্বাভাবিক উজ্জ্বল থাকে। অবশ্য এ আলামত শহর বা গ্রামের ভিতর বিদ্যুতের আলোর মাঝে থেকে লক্ষ্য করা সম্ভব নয়। কিন্তু যারা আলো থেকে দূরে মাঠে-ময়দানে থাকে, তারা সে ঔজ্জ্বল্য লক্ষ্য করতে পারে।অন্যান্য রাতের তুলনায় শবেকদরের রাতে মুমিন তার হৃদয়ে এক ধরনের প্রশস্ততা, সবস্তি ও শান্তি বোধ করে।অন্যান্য রাতের তুলনায় মুমিন শবেকদরের রাতে কিয়াম বা নামাযে অধিক মিষ্টতা অনুভব করে।এই রাতে বাতাস নিস্তব্ধ থাকে। অর্থাৎ, সে রাতে ঝোড়ো বা জোরে হাওয়া চলে না। আবহাওয়া অনুকূল থাকে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন,

‘‘শবেকদরের রাত উজ্জ্বল।’’[16]

অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘‘নাতিশীতোষ্ণ; না ঠান্ডা, না গরম।’’[17]

শবেকদরের রাতে উল্কা ছুটে না।[18] 

এ রাতে বৃষ্টি হতে পারে।

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন,

‘‘আমাকে শবেকদর দেখানো হয়েছিল; কিন্তু পরে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাত্রে তা অনুসন্ধান কর। আর আমি দেখেছি যে, আমি পানি ও কাদাতে সিজদা করছি।’’[19]

অতঃপর ২১শের রাত্রিতে সত্যই বৃষ্টি হয়েছিল।শবেকদর কোন নেক বান্দা স্বপ্নের মাধ্যমেও দেখতে পারেন। যেমন কিছু সাহাবা তা দেখেছিলেন।

পক্ষান্তরে যে সব আলামত রাতের পরে সকালে দেখা যায় তা হল এই যে, সে রাতের সকালে উদয়কালে সূর্য হবে সাদা; তার কোন কিরণ থাকবে না।[20]

অথবা ক্ষীণ রক্তিম অবস্থায় উদিত হবে;[21]

ঠিক পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত। অর্থাৎ, তার রশনি চারিদিকে বিকীর্ণ হবে না।

❑শবেকদরের দুআঃ

মা আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত,

তিনি বলেন,

আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি শবেকদর লাভ করলে তাতে কি দুআ পাঠ করব?উত্তরে তিনি বললেন,

‘‘তুমি বলো,

اَللّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ.

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নী।[23]

اَللّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيْمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ.

উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারীমুন তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নী।[24]

অর্থঃ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল (মহানুভব), ক্ষমাকে পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।

বিঃদ্রঃ শবে কদরের দুইটা দো’আ ই সঠিক,

যেকোন একটি দো’আ পড়লেই হবে।

[1] (তাফসীর ফাতহুল ক্বাদীর ৫/৬৮০-৬৮১, শারহুস সাদর বিযিক্রি লাইলাতিল ক্বাদর, ইমাম শাওকানী ২৪-২৫পৃঃ)

[2] (বুখারী : ৩৫, মুসলিম : ৭৬০ নং, সুনানে আরবাআহ; আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)।

[3] (বুখারী ২০১৬, মুসলিম ১১৬৭নং)

[4] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪৯৬)

[5] (আহমাদ, মুসনাদ ২/৬, বুখারী ২০১৫, মালেক, মুওয়াত্তা, মুসলিম ১১৬৫নং)

[6] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪৯৩)

[7] (মুসলিম ৭৬২নং)

[8] (সহীহ আবূ দাঊদ ১২৩৬নং)

[9] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪৯৪)

[10] (শারহুস সাদর বিযিক্রি লাইলাতিল ক্বাদর ৪৯পৃঃ)

[11] (বুখারী ২০২৩নং)

[12] (বুখারী ৩৫, মুসলিম ৭৬০ নং, সুনানে আরবাআহ; আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)

[13] (আহমাদ, মুসনাদ ৫/৩১৮, ২২৬১২নং)

[14] (মুসলিম ৭৬০নং)

[15] (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ ২০/১৮৬-১৮৭)

[16] (আহমাদ, মুসনাদ, ত্বাবারানী, মু’জাম, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ ২১৯২, প্রমুখ, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৫৪৭২, ৫৪৭৫নং)

[17] (ঐ) [18] (ঐ)

[19] (বুখারী ২০১৬, মুসলিম ১১৬৭নং)

[20] (মুসলিম ৭৬২নং)

[21] (সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৫৪৭৫নং)

[23] (আহমাদ, মুসনাদ ৬/১৭১, ১৮২, ১৮৩, ২৫৮, নাসাঈ আমালুল ইয়াওমি অল-লাইলাহ ৮৭২নং, ইবনে মাজাহ ৩৮৫০, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৫৩০)

[24] (তিরমিযী ৩৫১৩নং)

❑ লাইলাতুল ক্বদরে যেই আমলগুলো করা যেতে পারেঃ

(১) নামাযঃ দুই রাকাত, দুই রাকাত করে তারাবীহ বা তাহাজ্জুদের নামায পড়বেন। এই নামাযে সুরা ক্বদর বা সুরা ইখলাস এতোবার পড়তে হবে, এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। অন্য যেকোনো নফল নামাযের মতোই দুই রাকাত নফল নামায পড়বেন। চেষ্টা করবেন দীর্ঘ কিরাতে নামায লম্বা করার জন্য। বড় সুরা না পারলে এক রাকাতে ছোট সুরা ২-৩টা পড়ে বড় করা যাবে।

নিচের আমলগুলো ঋতুবতী নারীসহ সকলেই করতে পারবেনঃ

(২) কুরআন তেলাওয়াত। আরবী কুরআন স্পর্শ না করে ঋতুবতী নারীরা মুখস্থ অথবা বাংলা অর্থ দেওয়া আছে এমন কুরআন থেকে, মোবাইল থেকে বা হাতে রুমাল বা কাপড় দিয়ে স্পর্শ করে কুরআন পড়তে পড়তে পারবে, আলেমদের এই মতটাই সঠিক। তবে সন্দেহের কারণে কেউ কুরআন তেলাওয়াত করতে না করতে চাইলে, অথবা যেই সমস্ত আলেম ঋতুবতী নারীদের কুরআন তেলাওয়াত হারাম মনে করেন, এটার সাথে একমত হলে, কুরআনের তাফসীর, হাদীস, দ্বীনি অন্যান্য বই-পুস্তক পড়তে পারেন।

(৩) তওবাহঃ সারা জীবনের সমস্ত গুনাহর জন্য কান্নাকাটি করে তওবাহ করা ও মাফ চাওয়া। বাংলা বা আরবী যেকোনো ভাষায়, অতীতের ভুলের জন্য লজ্জিত হয়ে আন্তরিকভাবে ভবিষ্যতে আর না করার সংকল্প নিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আরবীতে করতে চাইলে – আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি – হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি ও তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি, এতোটুকু পড়ে বা কুরআন-হাদীসের অন্য দুয়া দিয়ে তওবাহ করা যাবে।

(৪) দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত কল্যানের জন্য দুয়া করা। নিজের জন্য, মাতা পিতা বা ভাই বোন, স্ত্রী-সন্তান, মযলুম, জীবিত ও মৃত সমস্ত মুসলমানদের জন্য দুয়া করতে হবে।

(৫) জান্নাতুল ফিরদাউস পাওয়ার জন্য দুয়া করতে হবে।

(৬) যিকির-আযকারঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ১০০বার, ৩৩ বার সুবাহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহাদাহু লা শারীকালাহু…… ১০ বার বা ১০০ বার করে সহ, লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। আরো দুয়া পড়ার জন্য হিসনুল মুসলিম দেখুন। মুখস্থ না পারলে বই খুলে পড়তে পারবেন। আরবী দুয়াগুলো না  পারলে দ্রুত শিখুন..বা যে পারে তার সাহায্য নিন ..সঠিক উচ্চারণ না হলে অর্থ বদলে যায়।

(৭) দুরুদঃ দুরুদের ইব্রাহীম বা নামাযে যেই দুরুদ পড়া হয় সেটা পড়াই সবচাইতে বেশি সওয়াব। আর দুরুদের হাজারী, লাখী, জামিল, মাহী, দুরুদে আকবর এইরকম যত্তগুলো দুরুদ দেওয়া আছে ওযীফার বেদাতী কিতাবে – এইসবগুলো দুরুদ হচ্ছে বানোয়াট বেদাতী দুরুদ, এর ফযীলত যা দেওয়া আছে সমস্তটাই হচ্ছে ধোঁকা। এইগুলো পড়া বেদাত।

(৮) সাধ্যমতো কিছু দান-সাদাকাহ করতে পারেন। দান ছোট হোক, কোনটাই কম নয়, এমনকি হাদীস শুকনো একটা খেজুর দান করে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্যে চেষ্টা করতে বলা হয়েছে।

(৯) জাহান্নামের আগুনের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্যে ফকীর মিসকীনকে খাদ্য দেওয়া অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটা ইবাদত, সুতরাং শবে কদরের রাতে সম্ভব হলে গরীবকে খাবার দিতে পারেন।

(১০) রাতের বেলা সুরা ইখলার তেলাওয়াত করা সুন্নত। সুতরাং শবে কদরের রাত্রিগুলোতে সুরা ইখলাস পড়তে পারেন। সুরা ইলখাস কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমতুল্য।(সহিহ বুখারি : ৫০১৩, আবু দাউদ : ১৪৬১, নাসায়ি : ২/১৭১, মুআত্তা মালেক : ১/২০৮)…মুহাম্মাদ ইবন মারযূক আল-বাসরী (রহঃ) ….. আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে, তার ৫০ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, তবে ঋণ থাকলে তা মাফ হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯৮).. সুরা ইখলাস দশ বার পড়লে আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে একটা প্রাসাদ নির্মান করবেন (মুসনাদে আহমাদ)

(১১) প্রতিদিন রাতের বেলা সুরা মুলক ও সুরা সিজদাহ পড়া সুন্নত। সুতরাং আপনারা কুরা্আন তেলাওয়াতের সময় এই দুইটি সুরা পড়ে নেবেন।

(১২) এছাড়া ওয়াক্ত মতো নামাযগুলো সুন্দরভাবে আদায় করবেন, সুন্নত নামায সহকারে। ফরয নামাযের পরে যিকিরগুলো করবেন, নামায দীর্ঘ ও সুন্দর করতে চাইলে রুকু সিজদাহর তাসবীহ বেশি করে পড়বেন, নামাযে বিভিন্ন সময়ে যেই দুয়া আছে সেইগুলো পড়বেন। নামাযে বেশি বেশি দুয়া করবেন।

(১৩) ঘুমানোর পূর্বের যিকির-আযকারগুলো করবেন। আযানের জবাব ও দুয়া পড়বেন।

(১৪) তাহিয়াতুল ওযুর নামায পড়তে পারেন। তওবাহর নামায পড়তে পারেন।

(১৫) আরো যত সুন্নতী যিকির আযকার আছে করতে পারেন।

 মা-বোনেরা হাযেজ হয়ে গেলে লাইলাতুল

কদরে(১০রাত্রি) কি কি ইবাদত করবেন ???

لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ.

শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ (কল্যাণকর)।

(সূরাঃআল-কদরঃ৩)

বোন কষ্ট পাবেন না।

এটাও আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা।

হয়তো,,,

এই কষ্টের জন্যে আল্লাহ তা’আলা আপনাকে অন্য বোনদের মত সমান নেকি দিয়ে দিবেন। হয়তো,,, তাদের চেয়েও বেশি নেকি দিবেন। আল্লাহ তা’আলা আপনাকে নেকি থেকে বঞ্চিত করবেন না।

ইং শা আল্লাহ! যে বোন নির্ধারিত সময় পেয়ে যাবেন তিনি শুধু নামায, রোজা, কুরআন তিলাওয়াত, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ব্যতীত বাকী সমস্ত ইবাদত করতে পারেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি রমজানের শেষ দশকে রাত জাগতেন।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত:

শেষ দশক প্রবেশ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমর বেঁধে নামতেন।

তিনি নিজে রাত জাগতেন এবং তাঁর পরিবারবর্গকে জাগিয়ে দিতেন।

[সহীহ বুখারী (২০২৪) ও

সহীহ মুসলিম (১১৭৪)] 

লাইল বা রাত জাগা শুধু নামাযের জন্য বিশিষ্ট নয়, বরং তা সকল ইবাদতের মাধ্যমে হতে পারে। আলেমগণ

কথাটিকে এই অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন।

ইবনে হাজার বলেছেন:

অর্থ- তিনি ইবাদত ও আনুগত্যের মধ্যে রাত জাগতেন।

নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন:

অর্থাৎ তিনি সালাত ও অন্য ইবাদতের মাধ্যমে গোটা রাত কাটিয়ে দিতেন।

আউনুল মাবূদ গ্রন্থে বলা হয়েছে: অর্থাৎ নামায, যিকির-আযকার ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে

(রাত কাটিয়ে দেয়া)।

লাইলাতুল কদরে বান্দা যে যে ইবাদত করতে পারেন তার মধ্যে কিয়ামুল লাইল (রাতের নামায) সর্বোত্তম।

এজন্য নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে বা ভাগ্য রজনীতে নামায আদায় করবে তার পূর্বের গুনাহসমূহ  মাফ করে দেয়া হবে।

[সহীহ বুখারী (১৯০১)ও

সহীহ মুসলিম (৭৬০)]

যেহেতু নারীর ঐ সময় শুরু হয়েছে তার জন্য নামায আদায় করা নিষিদ্ধ তাই তিনি নামায ব্যতীত অন্য সব ইবাদত করার জন্য রাত জাগতে পারেন।

যেমনঃ

কুরআন_তিলাওয়াত_মন_দিয়ে_শোনাঃ-

মন যোগ দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত শোনা ওয়াজিব।কুরআন ই একমাত্র গ্রন্থ যা পড়লেও নেকি মনোযোগ দিয়ে শুনলেও নেকি। কদরে মনোযোগ দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত শোনা উচিত। কারণ – এই রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে।

যে নারীর হাযেজ শুরু হয়েছে তিনি শুধু নামায, রোজা, বায়তুল্লাহ তওয়াফ ও মসজিদে ইতিকাফ ব্যতীত বাকী সমস্ত ইবাদত করতে পারেন। (মোবাইল থেকে কুরানের যে কোন সুরা অক্ষর টাচ করে ও পড়তে পারেন)

১.আয়েশা(রা) নবী(স)কে কদরের রাতে কি দুয়া পড়বে  জিজ্ঞেস করলে বলেন–“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউন তুহিব্বুল আ’ফওয়া ফাআ’ফু আ’ন্নী”।

(তিরমিযী, ইবনু মাজাহ )

‏اللهم إنك عفو تحب العفو فاعفُ عني‏

উক্ত দোয়াটি বেশী বেশী পড়বেন।

২. ১০০ বার *আস্তাগফিরুল্লাহ* পড়ে আল্লাহর কাছে  ক্ষমা চাওয়া (মুস্লিম,তিরমিজী)। নবী(স)  দিনে ৭০ বা ১০০ বার পড়তেন।

৩. ৩ বার *সুরাহ ইখলাস* পড়লে ১খতম কুরান পড়ার সমান।

৪. ১০ বার *সুরাহ ইখলাস* পড়লে তার জন্য জান্নাতে ১টি ঘর তৈরী হয়। ( মুসনাদে আহমদ)

৫. ১০০ বার  *”সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি”*

(পড়িলে গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়, তা সাগরের ফেনারাশির সমপর্যায় হলেও।(তিরমিজী-৩৪৬৬)

سُبحَانَ اللّهِ وَ بِحَمْدِهِ ، سُبحَانَ اللّهِ الْعَظِيمِ

৬.১০ বার পড়িলে “লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আ’লা কুল্লি শাইইন কাদির!”

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحَدْهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِير

(১০ বার পড়িলে সে ব্যক্তি ইসমাইলের বংশধরের চারজন দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব লাভ করবে।” (বুখারী-মুসলিম)

৭. যদি কেউ ১০০ বার *লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আ’লা কুল্লি শাইইন কাদির!”*১০০ বার পড়ে তাহলে ” সে একশ গোলাম আযাদ করার সাওয়াব অর্জন করবে এবং তার জন্য ১০০টি নেকী লেখা হবে, আর তার ১০০টি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে। আর সে দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এটা তার জন্য রক্ষা কবচে পরিণত হবে এবং তার চাইতে বেশী ফযীলত ওয়ালা আমল আর কারো হবে না,তবে যে ব্যাক্তি এ আমল তার চাইতেও বেশী করবে সে ছাড়া।(বুখারী ৫৯৬১।

৮. যে ব্যক্তি দিনে সকালে ১ বার দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ সায়্যিদুল ইসতিগফার  *আল্লাহুম্মা আন্তা রব্বি লাইলাহা ইল্লা আন্ত,খালাক্বতানি ওয়া আনা আ’ব্দুক ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’ত, আও’যু বিকা মিন শাররিমা সনায়া’ত,  আবুওলাকা বিনি’মতিকা আলাই, ওয়া আবুওলাকা বিযাম্বি ফাগ্ ফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আন্ত* ১ বার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে প্রথম ভাগে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ ১ বার পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী ৬৩০৬)

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّه“ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْت

৯. *”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”* -নবী(সঃ) বলেছেন, যে লোক ইহা ১০ বার পড়বে সে ঐ লোকের সমান হয়ে যাবে, যে লোক ইসমাঈল (আঃ)- এর বংশ থেকে একটা গোলাম মুক্ত করে দিয়েছে।

(সহীহ বুখারী -৬৪০৪)

*লা ইলাহা ইল্লল্লাহ* বেশী পড়তে পারেন,  এটা সর্বোত্তম জিকির,৭আসমান ও জমিন এক পাল্লায় রাখলে আর অন্যদিকে এই কালিমা এক পাল্লায় রাখলে এর ওজন ভারী হবে।

১০. যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় *‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি’*  ১০০ বার পাঠ করবে, কিয়ামতের দিনে ওর চাইতে উত্তম আমল কেউ আনতে পারবে না। কিন্তু যদি কেউ তার সমান বা তার থেকে বেশি সংখ্যায় ঐ তাসবীহ পাঠ করে থাকে (তাহলে ভিন্ন কথা)।”

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার বলে,

 «سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ».

(সুব্‌হানাল্লা-হি ওয়াবিহামদিহী)

‘আমি আল্লাহর প্রশংসা পবিত্রতা ঘোষণা করছি’, তার পাপসমূহ মুছে ফেলা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে।”

বুখারী ৭/১৬৮, নং ৬৪০৫

মুসলিম ৪/২০৭১, নং ২৬৯১

 ১১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা যবানে সহজ, মীযানের পাল্লায় ভারী এবং করুণাময় আল্লাহ্‌র নিকট অতি প্রিয়। আর তা হচ্ছে,

 «سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ، سُبْحانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ».

(সুব্‌হানাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুব্‌হানাল্লা-হিল ‘আযীম)।

‘আল্লাহ্‌র প্রশংসাসহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছি। মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি’।”

বুখারী ৭/১৬৮, নং ৬৪০৪

মুসলিম ৪/২০৭২, নং ২৬৯৪।

নবী (স)বললেন আমি কি তোমাকে এমন একটি বস্তুর সন্ধান দেব না যে বাক্যটি জান্নাতের রত্ন ভান্ডার?

১২.*সেটি থেকে একটি রত্নভাণ্ডার হল *লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।* —  বেশী বেশী পড়তে পারেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ওহে আব্দুল্লাহ ইবন কায়েস! আমি কি জান্নাতের এক রত্নভাণ্ডার সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করব না?” আমি বললাম, নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, “তুমি বল,

 «لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ».

(লা হাউলা ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ)।

“আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।”

বুখারী, ফাতহুল বারীসহ ১১/২১৩, নং ৪২০৬

মুসলিম ৪/২০৭৬, নং ২৭০৪।

১৩. ১০০ বার *সুবহানাল্লাহ* পড়া   …নবী(স) বললেন,সে একশ’ তাসবীহ ( *সুবহানাল্লাহ*)পাঠ করলে তার জন্যে এক হাজার পুণ্য লিখিত হবে এবং তার (আমলনামা) হতে ১,০০০ (এক হাজার) পাপ মুছে দেয়া হবে। (মুসলিম ৬৭৪৫)

১৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার— সূর্য যা কিছুর উপর উদিত হয় তার চেয়ে এগুলো বলা আমার কাছে অধিক প্রিয়।”

মুসলিম, ৪/২০৭২, নং ২৬৯৫।

১৫.*‘‘লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্ যোয়া-লিমীন’’*  অর্থাৎ- ‘‘তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই। তুমি পবিত্র, আমি হচ্ছি যালিম বা অত্যাচারী অপরাধী’’-(সূরা ইউনুস ১০ : ৮৭)।

যে কোন মুসলিমই যে কোন ব্যাপারে এ দু‘আ পাঠ করবে, তার দু‘আ নিশ্চয়ই গৃহীত হবে।(তিরমিযী ৩৫০৫, আহমাদ ১৪৬২)।

১৬. *‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’’* প্রতিবারে বিনিময়ে তোমার জন্য জান্নাতে একটি করে গাছ রোপিত হবে।

(সমস্ত পবিত্রতা আল্লাহর, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নাই, আল্লাহ মহান)। ইবনে মাজাহ 3807

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্‌র নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য চারটি, তার যে কোনটি দিয়েই শুরু করাতে তোমার কোনো ক্ষতি নেই। আর তা হলো,

 «سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ».

(সুবহানাল্লা-হি ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার)।

“আল্লাহ পবিত্র-মহান। সকল হামদ-প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়।”

মুসলিম ৩/১৬৮৫, নং ২১৩৭।

১৭.“‘আল-বাকিয়াতুস সালিহাত’ তথা চিরস্থায়ী নেক আমল হচ্ছে–

«سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ».

(সুবহা-নাল্লা-হি, ওয়ালহামদুলিল্লা-হি, ওয়া লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার, ওয়ালা হাউলা ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হি)

““আল্লাহ পবিত্র-মহান। সকল হামদ-প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।”

মুসনাদে আহমাদ নং ৫১৩

মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ১/২৯৭

আস-সুনানুল কুবরা, নং ১০৬১৭

১৮.*যে ব্যক্তি রাত্রে সূরা বাকারার শেষ ২ আয়াত (২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াত)  পাঠ  করবে তা সে ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।* আবু দাউদ ১২৬

১৯.*সুরা মুলক (৬৭ নং সুরা) প্রতি রাতে পাঠ করলে আশা করা যায় যে,তা তিল।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen − one =