সুনামগঞ্জে বেড়েই চলেছে কৃষকদের কান্না : হালীর হাওরের বাঁধ ভেঙে ফসল ডুবি

0
588

মোজাম্মেল আলম ভূইয়া : সুনামগঞ্জে বেরী বাঁধ ভেঙে একের পর এক ডুবে যাচ্ছে হাওর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও এজেলার কৃষকরা রক্ষা করতে পারছেনা তাদের সোনালী ধান। এরপরও কৃষকরা দিনরাত পাহাড়া দিয়ে, সেচ্ছাশ্রমে বেরী বাঁধ রক্ষা করার জন্য কাজ করছে। তারপরও শঙ্কা কাটছে না। একের পর এক হাওর ডুবির ঘটনায় জেলার বেশির ভাগ কৃষকরা এখন দিশেহারা। ফসল হারানো ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের বেড়েই চলেছে কান্না। তাদের ওপর থেকে শনির দশা কেন কাটছে না এটাই এখন হাওরের সর্বস্থরের কৃষকদের প্রশ্ন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- গতকাল সোমবার (২৫ এপ্রিল)) রাত ১২টায় সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার বৃহৎ হালীর হাওরের বাঁধ ভেঙে তলিতে গেছে প্রায় হাজার হেক্টর জমির পাকা-আধা পাকা ধান। এর আগে রাত ১০টায় হালীর হাওরের আহসানপুর গ্রামের স্কুল সংলগ্ন বাঁধটি ভেঙে ধীরে ধীরে পানি ঢুকতে শুরু করে। কিন্তু তদারকির অভাবে বাঁধটি ভেঙে যায়। এই হাওরে বোরো জমির পরিমান ৫ হাজার ২শ হেক্টর।

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে এই হালীর হাওরের প্রায় ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়েগেছে। আর অবশিষ্ট ধান কাটার জন্য কৃষকরা চেষ্টা করছে। কিন্তু হাওরের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, এই হাওরে এখনও ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ধান কাটা বাকি রয়েছে। বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে কৃষকরা যে যার মতো করে রাত থেকেই ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

আহসানপুর গ্রামের কৃষক আলামিন, রফিজ উদ্দিন, রাজু মিয়াসহ আরো অনেকেই বলেন- বাঁধ নির্মাণ কাজে গাফলতির কারণে হালীর হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। আমরা আমাদের জমির ২৫ ভাগ ধানও কাটতে পারিনি। কারণ শ্রমিক নাই। এবার ঋণ নিয়ে অনেক কষ্ট করে হাওরের বোরা ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু বাঁধের কারণে ফসল হারিয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হলাম।

হালীর হাওরের কৃষক মুসলিম মিয়া বলেন- ধান কেটে খলায় রেখে রাতে বাড়িতে ঘুমাতে আসি। কিছুক্ষন পর জানতে পারি বাঁধ ভেঙে গেছে। তারপর দৌড়ে খলায় গিয়ে দেখি কাটা ধানগুলো পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমারতো সব শেষ। এখন আমি বৌ-বাচ্ছা নিয়ে কি ভাবে কি করব।

জামালগঞ্জ উপজেলার বেহলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুব্রত শামন্ত সরকার বলেন- অনেক চেষ্টা করেও আমাদের হালীর হাওরের শেষ রক্ষা হলো না। বাঁধ ভাঙার খবর পরপর সবাইকে নিয়ে অনেক চেষ্টা করেছি। বাঁধটি দূর্বল ছিল। দুরমুজ করে নাই। লিকেজ দিয়ে পানি প্রবেশ করার কারণে বাঁধটি ভেঙে যায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ^জিৎ দেব জানান- পানি আসার সাথে সাথে আমরা সাধারণ কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি বাঁধটি অক্ষত রাখার জন্য। কিন্তু রাতে হঠাৎ করে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। বাঁধের অক্ষত স্থান কিভাবে ভেঙে গেল বুঝে উঠতে পারছিনা। কারণ বাঁধের মূল ক্লোজার এখনও অক্ষত রয়েছে। তবে হালীর হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়েগেছে। বাকি ধান কাটার জন্য কৃষকরা চেষ্টা করছেন।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন- হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়েগেছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধটি মেরামতের সর্বার্ত্মক চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।         

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen − sixteen =