রোহিঙ্গাদের তালিকায় নাম দিয়ে ভাসানচরের রোহিঙ্গা শিবিরে যেতে চায় বাংলাদেশী ১২০ পরিবার।

0
419

রোহিঙ্গাদের তালিকায় নাম দিয়ে ভাসানচরের রোহিঙ্গা শিবিরে যেতে চায় বাংলাদেশী ১২০ পরিবার। ক্ষোভ আর আক্ষেপে হতাশাগ্রস্ত ভূমিহীন পরিবারগুলো

জানিয়েছে তাদের এমন কঠিন সিদ্ধান্ত।  ভূমিহীন হয়ে ভেসে বেড়ানো এ পরিবারগুলোর একমাত্র অবলম্বন সরকারি বন্দোবস্তকৃত জমি।ভূমিহীন পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা দেখার কেউ না থাকলেও সরকারের দেয়া এসব জমিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সোনার ফসল ফলিয়ে কিছুটা বাঁচার স্বপ্ন দেখে তারা।তবে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ এর মতোই অসহায় এসব পরিবারের বাঁচার শেষ স্বপ্নটুকু কেড়ে নিতে সবসময় ওঁত পেতে থাকে মানুষরূপী এক শ্রেণীর হিংস্র জানোয়ার।সম্প্রতি পটুয়াখালীর গলাচিপার আমখোলা মৌজার চিংগুড়িয়াতে প্রায় দেশ শতাধিক অসহায় ভূমিহীনদের কান্নার আহাজারি ‘অপরাধ বিচিত্রার’র অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল।

যেখানে উঠে এসেছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী শিহাবসহ বেশকয়েকজন রাঘববোয়াল ভূমিদস্যুদের নাম।প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরীর সাথে দেখা করেন ভুক্তভোগী ভূমিহীন কৃষক আব্দুল মান্নান।পুরো অভিযোগের কথা শুনে অত্যন্ত 

আন্তরিকতার সাথে অভিযোগের দরখাস্তে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন তিনি।

জেলার সর্বোচ্চ কর্তার নির্দেশ পাওয়ার পর ইউএনও বিষয়টির দায়িত্ব দেন সহকারি ভূমি কমিশনার নজরুল ইসলামকে।তিনি সরেজমিনে সরকারি বন্দোবস্তকৃত চিংগুড়িয়া চরের সেই জমিগুলো পরিদর্শন করেন।পরিদর্শনকালে ভেকু মেশিন দিয়ে সরকারি জমিতে মাটি কাটতে দেখেন তিনি।সংশ্লিষ্ট কাউকে  ঘটনাস্থলে না পাওয়ায় ভেকু মেশিন জমি থেকে সরিয়ে দেন তিনি।কিন্তু তবুও দমে যায় নি ভূমিদস্যুরা।রাতের আঁধারে জমির পাশে রাস্তা নির্মানের চেষ্টা করা হলে ইউএনওকে খবর দেয় ভূমিহীন ভুক্তভোগীরা।ইউএনও’র কড়া নির্দেশে বন্ধ হয় সেই কাজ।পরবর্তীতে আবারও সহকারি ভূমি কমিশনার নজরুল ইসলাম তদন্তে যান সেই জমিতে।সেসময় সরকারি বন্দোবস্তকৃত ও রিসিভারের জমি থেকে ট্রলি মেশিন এবং বিপুল পরিমাণ ধান জব্দ করা হয়।আর ভেঙ্গে দেয়া হয় তরমুজ ক্ষেতের বাঁশের মাচা।তবে আটক করা হয় নি কাউকে।পরে জব্দকৃত মালামাল হস্তান্তর করা হয় গলাচিপা থানাতে।ভুক্তভোগী কৃষক আব্দুল মান্নানকে থানায় মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়।কিন্তু এরপরই শুরু হয় বিপত্তি।কৃষক আব্দুল মান্নান আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে থানার অফিসার ইনচার্জ মনির হোসেন মামলা না নিয়ে তাকে হেনস্তা করেন।এসময় ভূমিদস্যু শিহাবের সাথেও যোগাযোগ করেন ওসি । পরে জব্দকৃত ট্রলি ও সরকারি রিসিভারের জমির ধান পুরোটাই ফেরত দেয়া হয় অভিযুক্ত সেই শিহাবকে। এরপর শুরু হয় নানা হুমকি ধমকি।

কোন উপায়ান্তুর না দেখে অসহায় কৃষকরা আবারো পটুয়াখালীর বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেনের কাছে ছুটে যান । তিনি পুরো বিষয়টি শুনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে অসহায় কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেন।এরপর ভুক্তভোগী কৃষকরা সিহাব বাহিনীর নামে ৩৪৫/২০২১ মামলা দায়ের করে। কিন্তু মামলা দায়েরের পর থেকে ভূমিহীন কৃষকদের আর জমিতে ঢুকতে দেয়নি ওই সন্ত্রাসী বাহিনী। উল্টো পটুয়াখালী আদালতে কৃষকদের নামে ৩৩/২২ নং মামলা দায়ের করে দেয় ৩৪৫ নম্বর মামলার চার নম্বর আসামী কামাল হোসেন ।  যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। ভূমিদস্যুদের অত্যাচার ,নির্যাতন ও ক্ষমতার কাছে বারবার হেরে যাওয়া অসহায় কৃষকরা অবশেষে বাধ্য হয়েছেন রাস্তায় নামতে। ভূমিদস্যু সিহাব বাহিনীর বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেন তারা । গত ২৯ মে বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী মাজেদা বেগম, মন্নান সরদার ও ইদ্রিস মৃধাসহ অনেকে। 

বক্তারা বলেন, সরকার কর্তৃক তাদেরকে দেয়া বন্দোবস্তকৃত জমি তারা ভোগ করে আসছিল কিন্তু কয়েক বছর ধরে । এ জমি স্থানীয় ভূমিদস্যু শিহাব বাহিনী দখল করে নিয়ে ভোগ দখল করছে। তাদেরকে জমির কাছে যেতে দেয় না, গেলে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।

এবিষয় নিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন সুরাহা পায়নি তারা। তাই তারা সরকারের কাছে দাবী জানান, বন্দোবস্তকৃত জমি তাদেরকে দখল বুঝিয়ে দেয়া হোক অথবা তাদের নাম রোহিঙ্গাদের তালিকায় নাম দিয়ে ভাসানচরের রোহিঙ্গা শিবিরে এই ১২০ পরিবারকে পাঠিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।

মানববন্ধন শেষে তারা বিক্ষাভ মিছিল করেন এবং শিহাব বাহিনীর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করেন। এসময় অসহায় ও ভূক্তভোগি পরিবারের শতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। পরে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারক লিপিও প্রদান করেন তারা। কিন্তু কোন কিছুতেই এই অসহায় কৃষকদের আর্তনাদ পৌঁছায়নি কোথাও।

নিরুপায় কৃষকরা চলতি বছর জুন মাসের ১৯ তারিখ আবারো হাজির হোন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেনের কার্যালয়ে। তাদের দু:খ-দুর্দশা আর হতাশার কথা আবারো লিখিতভাবে দরখাস্তে তুলে ধরা হয়। মানবিক দরখাস্তটি পেয়ে জেলার সর্বোচ্চ এই কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লিখিতভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ সুপার । কিন্তু ভূমিদস্যু বাহিনীর কাছে হার মেনেছে প্রশাসনও।   

আর এই সবকিছুর নির্দেশদাতা হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কাজী আলমগীর ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুহম্মদ সাহিনের নাম উঠে এসেছে।

বলা হচ্ছে ,জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কাজী আলমগীর ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুহম্মদ সাহিনের তত্ত্বাবধানে পটুয়াখালী প্রশাসন সরাসরি এই অনিয়মের সাথে জড়িত। ওসি শওকত আনোয়ার,এসপি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ,ইউএনওসহ জেলার অভিভাবক জেলা প্রশাসকও টাকার কাছে হার মেনেছেন ।      

জানা যায়, ২০০০ সালে চিংগুড়িয়া মৌজার প্রায় সাড়ে ৯৭ একর জমি আব্দুল মন্নান সরদারসহ প্রায় ১২০ জন ভূমিহীন কৃষকদের চাষাবাদের জন্য বন্দোবস্ত দেয় সরকার।

এরপর নতুন করে চর সৃষ্টি হলে মোট জমির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৬২.১০ একর।২০০২ সাল থেকে ভূমিহীন পরিবারগুলো জীবনকে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশায় জমিতে চাষ শুরু করে।আর সরকার কর্তৃক নির্ধারিত চাষাবাদের জমির সীমানা পিলার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দেয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ অভাগা চাষীদের স্বপ্নে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় ভূমিদস্যুরা।সীমানা পিলার ফেলে দিয়ে তারা জমি দখলের চেষ্টায় মামলা দায়ের করলে তা খারিজ করে দেয় আদালত।কিন্তু তবুও থেমে থাকে নি ভূমি খেকোরা।

অভিযোগসূত্রে জানা যায়,গলাচিপা থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ আক্তার মোর্শেদ ভুমিহীনদের বন্দোবস্তকৃত জমিতে রিসিভার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।চাষাবাদের জন্য তিনি টেন্ডারের মাধ্যমে ভুমিহীন কৃষকের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে ৮ হাজার টাকার রশিদ দেন।এরপর সরকারি বন্দোবস্তকৃত সেই জমিতে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করে ৪০ মন ধান ফলায় ভূমিহীন কৃষক।চাষাবাদে সহায়তা এবং পরিদর্শনের অজুহাতে থানার বিভিন্ন কর্মকর্তা উৎকোচ হিসেবে নেন ২৫ হাজার টাকা।আর যাতায়াত খরচ বাবদ আরও ১০ হাজার টাকা আদায় করেন তারা।সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চাষাবাদ খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা দিতে হবে সরকারি কোষাগারে।কিন্তু সোনার ফসল ঘরে তোলার আগেই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান লিকনের সহযোগিতায় ভূমিদস্যু শিহাবসব বিশাল একটি বাহিনী কৃষকদের কষ্টের অর্জিত ফসল জোরপূর্বক কেটে নেয়।সেসময় ওসির পরামর্শে ভুমিহীন কৃষকরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তের নামে আবারও গলাচিপা থানা পুলিশকে দিতে হয় ৩২ হাজার টাকা।কিন্তু তবুও কোন বিচার পায় নি অভাগা ভূমিহীন কৃষকরা।   

শুধু ফসল লুট করেই ক্ষান্ত হয়নি ভূমিদস্যুরা,ভূমিহীনদের বন্দোবস্তকৃত জমিও দখল করে নেয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।ইতিমধ্যে অসংখ্য জমি দখলে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা।নদী ভাঙ্গনের চেয়েও ভয়ানক ভূমিদস্যুদের করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে অসহায় কৃষকরা জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার পর থেকে থানায় ও আদালতে প্রায় ডজন খানেক মামলা করেছেন,বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন তারও বেশি।

২০১২ সালে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের করা (সি.আর-৭৬৮/১২) মামলার তদন্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখ ভূমিদস্যু শিহাব ও তার সহযোগীরা অনধিকার প্রবেশের মাধ্যমে ভূমিহীন কৃষকদের উপর হামলা চালায়।গলাচিপা থানার তৎকালীন এসআই সৈয়দ সফিইল হোসেন সরেজমিন তদন্ত করে ২০১২ সালের নভেম্বরের ১৩ তারিখ ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে আদালতে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ।

গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী মো: সায়েমুজ্জামান ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর একটি তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানান, স্থানীয় কয়েকজন ভূমিদস্যুর নেতৃত্বে বিনা উষ্কানিতে গলাচিপা উপজেলার চিংগুড়িয়া মৌজার বিরোধপূর্ণ জমিতে প্রবেশ করে বন্দোবস্ত প্রাপ্তদের বিভিন্নভাবে বাঁধা প্রদান করছে।তাদের অবৈধ বাঁধায় চলতি বছর প্রায় ২০ একর জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হয় নি।বাকী জমিতে ধান আবাদ করা হলেও তা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রাণহানীর আশংকা রয়েছে।

২০১৪ সালের নভেম্বরে আমখোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে পুনরায় সীমানা পিলার স্থাপনের জন্য মতামত প্রদান করেন।

২০১৫ সালে গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী মো: সায়েমুজ্জামান সি.আর ৭০৪/১৪ নম্বর মামলার তদন্ত রিপোর্টে বলেন,চিংগুড়িয়ার বন্দোবস্তপ্রাপ্ত জমির মালিকরা গলাচিপা নদীর যেপাড়ে বসবাস করেন তার অপর পাড়ে চাষাবাদকৃত জমি।আর এ কারণে চাষাবাদের জন্য তাদের নদী পাড়ি দিতে হয়।এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শিহাব ও তার সহযোগিরা জমি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভূমিদস্যুরা জোরপূর্বক কৃষকদের ধান কেটে নিয়ে যায়।

সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া সীমানা পিলারও তুলে নিয়ে যায় তারা। সি.আর ৭০৪/১৪ নম্বর মামলার তদন্ত প্রতিবেদনেও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ধান কেটে নেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয় । 

২০১৫ সালের আগষ্টে সরকারের পক্ষ থেকে পুণরায় পাকা পিলার স্থাপন করা হলেও তা অমান্য করে চাষাবাধে বাঁধা সৃষ্টি করে ভূমিদস্যুরা।

এ নিয়ে ২০১৬ সালের নভেম্বরে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।   

২০১৬ সালের অক্টোবরে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আমখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, শিহাব ও তার সহযোগীরা গায়ের জোরে কৃষকদের জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।একই সভায় গলাচিপা উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা টিটো ভূমিদস্যু শিহাবের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।কিন্তু তবুও অভাগা কৃষকরা কিছুতেই রেহাই পান নি ভূমিদস্যুদের হাত থেকে।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ভূমিহীন কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে বলেন, ভূমিদস্যু শিহাব ও তার বাহিনী বন্দোবস্তকৃত জমিতে অবৈধভাবে মাটি খনন করছে।এরপ্রেক্ষিতে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো: মজিবুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদনে জানান, ২ টি পিলার উত্তোলন করে আমখোলা মৌজায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে ডেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটছে ভূমিদস্যুরা ।

এরপর আদালত থেকে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জকে বিরোধপূর্ণ জমির মধ্যে ১৬.৫০ একর জায়গার রিসিভার নিয়োগ দেয়া হলে এক বছরের বন্দোবস্তের জন্য উন্মুক্ত ডাকের আহবান করা হয়।টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে ভুক্তভোগী আব্দুল মন্নান সর্বোচ্চ ডাকদাতা হিসেবে বন্দোবস্ত পান।কিন্তু তারপরও ভূমিদস্যুরা সরকারি খাসজমিসহ ভূমিহীনদের বন্দোবস্তকৃত জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

বর্তমানে বন্দোবস্তকৃত জমি চাষাবাদ করতে না পারায় চলতি বছরের জুন মাসে ভূমিদস্যু সিহাব ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে ভূমিহীন কৃষকরা জেলা পুলিশ 

সুপার বরাবর আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে গলাচিপা থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ আক্তার মোর্শেদ টেন্ডারের মাধ্যমে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে প্রশ্ন এড়িয়ে যান।এর কিছু সময় পর তিনি ভুক্তভোগী আব্দুল মান্নান নামে একজন ভূমিহীন কৃষককে ফোন দিয়ে দেখা করার প্রস্তাব দেন।কিন্তু বিষয়টি জানাজানি পরও আক্তার মোর্শেদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।  

ওই সময়ে অপরাধ বিচিত্রাকে পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহাজাদা বলেন,বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন।ইতিমধ্যে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

তবে সংসদ সদস্যের নির্দেশনার পরও বিন্দুমাত্র ভাগ্য পাল্টে নি ভূমিহীন হতভাগা কৃষকদের।স্থানীয় প্রশাসনের সাথে ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে বর্গা চাষীদের দিয়ে তরমুজের চাষ করে শিহাব।অসহায় ভুক্তভোগীরা এর প্রতিকার চেয়ে মামলা করতে গেলেও মন গলে নি গলাচিপা থানার ওসি শওকত আনোয়ারের ।

প্রশাসনের কর্তরা বদলী হয়, পাল্টে যায় সিদ্ধান্ত , কিন্তু ভাগ্য বদলায় না ভূমিহীন অসহায় কৃষকদের। বারবার ক্ষমতা ও টাকার বিনিময়ে নিজেদের শক্তির জানান দেয় ভূমিদস্যু সিহাব বাহিনী।জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, ওসি সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেও অবহেলিত কৃষক সমাজ বরাবরই শোষণের শিকার হচ্ছে ওই বাহিনীর কাছে। দ্রুত এই বাহিনী নির্মূল করা না হলে ১২০টি অসহায় কৃষক পরিবারের মতো অসহায় হয়ে যাবে গলাচিপার সমাজ ব্যবস্থা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

12 + 15 =