ওসি প্রদীপের শীর্ষ মূসার পতেঙ্গায় অবৈধ দোকান বানিজ্য

0
800

মোহাম্মদ জুবাইর: দণ্ড প্রাপ্ত আসামি, কুখ্যাত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসের শীর্ষ, কথিত ক্যাশিয়ার, চাঁদাবাজ মূসার নিয়ন্ত্রণে দিনের পর দিন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে স্থায়ী দোকান। কোন এক অদৃশ্য গ্রীন সিগনালে মাত্র দিন কয়েকের মধ্যেই পতেঙ্গা বিচ থেকে নারিকেল তলা পর্যন্ত সাগরপাড়ে নির্মিত হয়েছে শতাধিক স্থায়ী দোকান। সন্ত্রাসীর কাছে জিম্মি হয়ে তিব্র ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এই এলাকার স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে, এ সব অপরিকল্পিত দোকান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছে। একই সাথে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের পাশাপাশি জুয়া ও মাদক ব্যবসারও আস্তানা গড়ে উঠেছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিনিয়তই রক্তক্ষয়ী সংঘাত ঘটে চলেছে। স্থানীয় একটি চাঁদাবাজ চক্রের মূলহোতা ক্যাশিয়ার মূসা সহ থানা পুলিশ ও টুরিস্ট পুলিশের এইসব দোকান নির্মাণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তথ্য মতে,এ সব দোকান থেকে প্রতিদিনই ২০০ থেকে ৪০০ টাকা চাঁদা আদায় করে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করা হয় বলেও জানা গেছে। “পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হকার ক্যামেরাম্যান সমবায় সমিতি লিঃ” ও “পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিঃ” নামক দুইটি কথিত  সমবায় সমিতি আড়ালে এখানে দিনের পর দিন চলছে চাঁদাবাজি ও অপরাধকান্ড। “পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হকার ক্যামেরাম্যান সমবায় সমিতি লিঃ” এর আড়ালেই চলছে চাঁদাবাজির সবচেয়ে বড় মহোৎসব। অভিযোগ রয়েছে  সমিতি’র সহ- সভাপতি তাজুল ইসলাম এর নেতৃত্বেই দেওয়া হয় অবৈধ দোকান বরাদ্দের বানিজ্য এর সহযোগী হিসেবে কাজ করে সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন ও

সদস্য মন্জু নামক আরো এক চাঁদাবাজ।প্রতিদিনের চাঁদার টাকা তোলার দ্বায়িত্ব এই দুই জনের।

সূত্র মূলে জানাযায়,এই টাকা থেকে প্রতিদিন পতেঙ্গা থানার জন্য বরাদ্দ ৪ হাজার টাকা ও টুরিস্ট পুলিশের জন্য বরাদ্দ ১২০০। যা জায়গা মত পৌছানোর কাজ করে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ মূসা ও মামুন।

এইসব অবৈধ দোকানগুলোর পিছনে রয়েছে বড় অংকের লেনদেন। প্রতিটি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। যার প্রতিটা অংশ ভাগ বাটোয়ারা হয় নিজেদের মধ্যেই। সমবায় সমিতি গুলোর মূল কাজ যেন শুধু প্রকাশ্য চাঁদাবাজিকে ডেকে রাখা। 

প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোড নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রাস্তা নির্মাণে পতেঙ্গা এলাকায় রাস্তা কাম বাঁধ নির্মিত হয়। এই প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা এলাকায় অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয় অনন্য সৌন্দর্যের পতেঙ্গা বিচ। প্রকল্পটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। অথচ বিচ এলাকায় যততত্র অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করতে গিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো গাছ ও ঘাস কেটে ফেলা হচ্ছে। বিচ এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ঢিবি তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিটি গ্রিন লনে লাগানো হয়েছিল গাছ এবং ঘাস। অবৈধ দোকান নির্মাণের জন্য সবগুলো গ্রিন লন দখল করে ঘাস এবং গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে।

অবৈধ দোকানগুলোর মালিকদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সমবায় সমিতির সভাপতি- নূর মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক- শাহাবুদ্দিন, সহ-সভাপতি- তাজুল ইসলাম সহ সদস্য- মন্জুর মাধ্যমেই চলে দোকান বরাদ্দ থেকে দৈনিক চাঁদা উত্তোলন। উত্তোলিত চাঁদা থেকে গড়ে ২০ টাকা রাখা হয় সমিতি পরিচালনার জন্য আর বাকি অংশ  ভাগ করে খায় থানা পুলিশ সহ স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।

তারা আরো বলেন,হারুন নামের একজন পুলিশ সদস্য সমিতির সাথে সমন্বয় করে দোকানগুলো নির্মাণে সহায়তা করছেন। 

মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনিই এ সব দোকান নির্মাণ করাচ্ছেন। মূসা, মামুন ও তার সহায়তাতেই রাতেদিনে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থায়ী দোকানগুলো। দোকানগুলো নির্মাণের জন্য প্রকারভেদে এককালীন টাকা নেয়ার পাশাপাশি দৈনিক ভাড়াও পরিশোধ করতে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ মাসিক ভাড়া ভিত্তিতে দোকান ভাড়া দিয়েছে।

এসময় একজন দর্শনার্থী বলেন, পতেঙ্গা সৈকতকে যেভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল সেভাবে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এখানের সব সৌন্দর্য অবৈধ দখলদারেরা ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে শেষ করে দিচ্ছে। পুলিশের ভূমিকা এখানে প্রশ্ন বিদ্ধ। 

তার মতে, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। তারা এসব  সৌন্দর্য বিনষ্টকারী দোকান দেখে মনক্ষুন্ন হবেন।

চাঁদাবাজি ও অবৈধ দোকান বানিজ্যের বিষয়ে, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হকার ক্যামেরাম্যান সমবায় সমিতির লিঃ এর সভাপতি- নূর মোহাম্মদ এর মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বর্তমানে প্রচন্ড অসুস্থ। আপনারা সমিতির ‘সাধারণ সম্পাদক’ ‘শাহাবুদ্দিন’ সহ বাকিদের সাথে যোগাযোগ করে দেখুন তারা টাকা তুলে কাকে দেয় কি করে! আমি এগুলো থেকে বাইরে আছি এখন। তবে আমার জানামতে অবৈধ দোকানপাট থেকে মোটা অংকের একটা টাকা তুলে।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিনের মুঠো ফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা ২০ টাকা করে নেই জেনারেটরের বিল বাবদ, বাকি টাকা হোসেন নিয়ে থানার পতেঙ্গা ক্যাশিয়ার মামুন ও মূসাকে দেয়। 

চাদাঁবাজ হোসেন সহ থানার ক্যাশিয়ার মূসা ও মামুনের বিষয়ে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, আমি তাদের চিনি না, যদি কেউ আমার বা থানার নাম ভাঙ্গিয়ে সমুদ্র সৈকতের অবৈধ দোকানপাট থেকে চাঁদা উত্তোলন করে থাকে তাদেরকে ধরে নিয়ে আসার জন্য সাংবাদিকদের বলেন!

টুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইসরাফিল বলেন, আমি এদের কাউকেই চিনি না, তবে আমাদের নামে যদি কেউ অপকর্মে লিপ্ত থাকে আমাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করুন। পুলিশ সাংবাদিক ভাই ভাই। তিনি আরো বলেন,আমার একজন সিনিয়র ইফতেখার সাহেব নতুন যোগ দিয়েছেন আপনারা ওনার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ এর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে  তিনি জানান, তিনি গুরুত্বপূর্ণ ঢাকায় কাজে অনেক ব্যস্ত আছেন পরবর্তীতে আলাপ করবেন।

স্থানীয়দের মতে, সংঘবদ্ধ একটি চক্র দিনের পর দিন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের এই সৌন্দর্য নষ্ট করে দিচ্ছে।সময় থাকতে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে না আসলে অপার সৌন্দর্যের এই স্থানটি ধ্বংস হয়ে যাবে বলেও তারা আশংকা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fifteen − fifteen =