সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে একের পর এক কুঠারাঘাত হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এই খাতে বিনিয়োগে স্বল্প আয়ের লোকদেরকে যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে তাতে মনে হয় না তারা আর বিনিয়োগ করতে পারবে। এমনিতেই মুনাফার ওপর শতকরা হারে কর কর্তন করে নেওয়া হচ্ছে। পাঁচ লাখ টাকার ওপর বিনিয়োগ করতে গেলে মুনাফার ওপর ১০% হারে কর কর্তন করা হচ্ছে। এরপরও স্বল্প আয়ের লোক যারা শেষ বয়সে ব্যবসা করার মত কোন ঝুঁকি নিতে পারছেন না তারা এই খাতে বিনিয়োগ করে একটু নিরাপদ থাকতে চেয়েছিলেন। অথচ তাদের নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্রটি ক্রমশ: সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। একবার টিন নম্বর বাধ্যতামূলক করা হলো। আবার ব্যাংক হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক করা হলো। একজন দরিদ্র লোক যিনি ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করবেন তিনি কিভাবে ব্যাংক হিসাব খুলবেন? কারণ ব্যাংক প্রতি বছর প্রতিটি একাউন্ট হতে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে টাকা কর্তন করে। ২০ হাজার টাকার একজন বিনিয়োগকারী কিভাবে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করবে তা বোধগম্য নয়। বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে গেলে নতুন করে আরেকটি খড়গ সৃষ্টি করা হয়েছে। তা হচ্ছে ৫ লাখ টাকার ওপর বিনিয়োগ করতে গেলে আয়কর রিটার্নের কাগজ জমা দিতে হবে।
একটি সঞ্চয়পত্র করতে গেলে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে তা জোগাড় করতে একজন বিনিয়োগকারীকে অনেক দিন পার করতে হচ্ছে। এভাবে একের পর এক জটিল পদ্বতি সৃষ্টি করে এই খাতে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কী উদ্দেশ্যে এমন করা হচ্ছে তা অনেকেই জানেন। কিন্তু বলার উপায় নেই। বললেও কোন প্রতিকার নেই। ব্যাংকগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে।
বিদেশে সেকেন্ড হোম বানিয়ে লুটোরারা দেশের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে যা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ, সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় প্রকাশিত হচ্ছে। হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, বিসমিল্লা গ্রুপ ইত্যাদি কোটি কোটিা টাকা পাচার করে দিল।
এদিকে সঞ্চয় পত্রে সামান্য টাকা বিনিয়োগে এতসব বাধা নিষেধ কিসের আলামত বহণ করছে তা বুঝতে আর দেরি নাই। এই খাতে বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়ার জন্য প্রতি বছর সঞ্চয় সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে।
রাস্তায় র্যালি বের করে জনগণকে জানান দেওয়া হচ্ছে যে এই খাতে বিনিয়োগের এক সুযোগ আছে। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে এর বিপরিত। একের পর এক কুঠারাঘাতের কারণে এই খাতে বিনিয়োগ ধ্বস নেমে আসছে। দেশের অভ্যন্তরীন উৎস হতে সরকারের ঋনের পরিমাণ কমে আসছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেই শুভ নয়।