বৈশ্বিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রাজনীতির উত্তপ্ত পরিস্থিতি কাম্য নয়

0
1212

সানজিদ আমিন: – দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাজনীতির মাঠে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থেকেই এসব অস্থিরতা শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গলজনক নয়। বিএনপিকে এ মাসে আসল খেলা দেখিয়ে ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, বাড়াবাড়ি করছে সরকার। এ জন্য সরকারকে পালাতে হবে। পাল্টাপাল্টি এই হুমকি শঙ্কার বিষয়। বৈশ্বিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রাজনীতির এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি কাম্য নয়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এখন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে মানবসৃষ্ট বিপর্যয়। মহামারী করোনার পর মানবসৃষ্ট রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে টালমাটাল করে দিয়েছে। এই যুদ্ধের কারণে তেল-গ্যাসের বিশ্ববাজার অস্থির। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। শ্রীলংকার মতো আলামত না থাকলেও অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ে সার্বিক অর্থনীতি চাপে রয়েছে। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর সরকার থেকে আশা করা হচ্ছিল, নানা ইস্যু হয়ত চাপা পড়ে যাবে। বাস্তবে তা হয়নি। হঠাৎ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাফল্যভরা প্রচার থমকে গেছে। অর্থনীতির প্রায় সব শাখায় মন্দা দেখা দিয়েছে। সিন্ডিকেটের দাপট, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। ডলার সংকট, প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার মতো অর্থনৈতিক বিপর্যয় সামনের দিনগুলোতে আরও প্রকট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। নতুন করে ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ধরা পড়েছে। প্রকৃত রিজার্ভ নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। অর্থ পাচারও থেমে নেই। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে। সব মিলিয়ে ধেয়ে আসা অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের বিদ্যুৎসাশ্রয়ের পদক্ষেপ, ব্যয় সংকোচনসহ বিভিন্ন কৌশল খুব একটা কাজে দিচ্ছে না। আগে সরকার ত্বরিৎ এ ধরনের অঘটন সামাল দিতে পারলেও এখন তা পারছে না। এর মধ্যে নানা ধরনের কথাবার্তা রটছে। কুশীলবরা গুজব-গুঞ্জন রটানোর সুযোগটা নেয় যে কোনো সংকটকে পুঁজি করে। তাদের মূল মতলব মানুষকে আতঙ্কিত ও বিভ্রান্ত করা।

ব্যাংক খাত অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এ নিয়ে অর্থনীতিবিদদের চেয়ে বেশি কথা বলছেন রাজনীতিবিদরা। তারা কেউ বাংলাদেশকে শ্রীলংকা বানিয়ে ফেলেন, কেউ সিঙ্গাপুর বানিয়ে ফেলেন। ব্যাংকে টাকা নেই, গ্রাহকরা জমাকৃত টাকা ফেরত পাচ্ছে না, কয়েকটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি কথা ছড়িয়েছে। তবে বিদেশি নানা সংস্থা কূটনৈতিক ভাষায় বলছে বাংলাদেশ ‘চাপে আছে কিন্তু ঝুঁকিতে নেই’ । বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩ নভেম্বর জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছরে কোনো ব্যাংক বন্ধের রেকর্ড নেই।

ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্বিপাক, জলাবদ্ধতা, নদীর নাব্য হ্রাস, পানির স্তর নেমে যাওয়া, ফসলি জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে মানুষের জীবন-জীবিকা প্রতিনিয়ত হুমকিতে পড়ছে। এর মধ্যে ‘খেলা হবে, খেলা হবে’ স্লোগান দিয়ে হুঙ্কার-পাল্টা হুঙ্কার চললেও বাস্তবে খেলা চলছে পুরোদমে। এ খেলার রেফারি-আম্পায়ার এখনো অচেনা। আন্দোলন-সমাবেশ-বিক্ষোভ ইত্যাদি কারও দান বা দয়া-দাক্ষিণ্যের বিষয় নয়। এক সময় তা করতে চাইলেই করা যেত। সারাবিশ্বে, এমনকি বাংলাদেশেও তার শত শত উদাহরণ রয়েছে।

সমাবেশ বা মিছিল করা এক সময় ছিল পুলিশকে অবহিত করার বিষয়। সেই ‘অবহিতকরণ’ গত কয়েক বছরে ‘অনুমতি’ নির্ভর হয়ে পড়েছে। সভা-সমাবেশের অনুমতি নিয়ে চলছে রাজনৈতিক টানাপড়েন। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাজনীতির মাঠে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থেকেই এসব অস্থিরতা শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গলজনক নয়। বিএনপিকে এ মাসে আসল খেলা দেখিয়ে ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, বাড়াবাড়ি করছে সরকার। এ জন্য সরকারকে পালাতে হবে। পাল্টাপাল্টি এই হুমকি শঙ্কার বিষয়। বৈশ্বিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রাজনীতির এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি কাম্য নয়। তথ্যের অবাধ প্রবাহের এই যুগে জনগণ ভালো করেই জানে, চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে তারা কতটা স্বস্তিতে রয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এই সঙ্কট পুঁজি করে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং তার অবনতি ঘটলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × 2 =