রবিউলকে বাঁচাতে গিয়ে, শহিদুল হাতে ছোরা দিয়ে লোকমান আলীর মাথায় আঘাত, থানায় মামলা

0
573

আবু সুফিয়ান: তিন ছেলের বাবা লোকমান আলী(৭০) বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম(৪৮) জমজ রশিদুল ইসলাম(৪৮) রবিউল ইসলাম(৩৪)। মাত্র চার বিঘা জমির কৃষক হয়ে তার মাঝে তিন ছেলেকে প্রতি পালন করেন। স্নেহ ভালবাসা বুক ভরা দরদের মাঝে বড় হয়ে উঠেন। শহিদুলরা, মায়ের আদরের কলিজার টুকরা সন্তান হয়ে এখন বড় ছেলে শহিদুল হিংসা প্রতিহিংসা আর লোভের বর্সপতি হইয়া এমন রুপ ধারণ করেছে পিতা বেঁচে থাকা কালীন চার বিঘা জমির অংশের দাবীদার হয়ে বসেছেন। কিন্ত এই চার বিঘা জমি নিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা অতি কষ্ঠে জীবন-যাপন করে আসছেন। রোগ ব্যাধি চিকিৎসা আর আত্মীয় স্বজন সাথে কোন রকম সমাজ মিলিয়ে চলছে, বাবা-মায়ের সংসার। সেই সংসারে কয়েক বৎসর ধরে পুত্রবধু ময়না বেগমের চক্রান্তে শহিদুল এখন বাবার সম্পতি লিখে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। কখনও বাবার প্রতি মিথ্যা মামলা দিয়ে আবার কখনও খুন গুম প্রাণনাশ করার পায়তারা করছে। নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা চাঁদখানা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বগুলা গাড়ী মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা লোকমান আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ময়না বেগম শালিকা ছানদিয়া আক্তারসহ গত ১০/১২/২০২২ইং তারিখে দুপুর ০২:০০ ঘটিকার সময় ছোট ভাই রবিউল ইসলাম ধানের কারি টোপা দিতে গেলে বড় ভাই শহিদুল ধারালো ছোরা বটি আর বাঁশের বাংয়াকা হাতে নিয়ে স্ত্রী ময়না বেগম শালিকা ছানদিয়া আক্তার বাঁধা প্রদান করেন। এমতাবস্থায় হুমকি, ধমক এমনকি হাতে ছোরা লাঠির ভয় প্রদর্শন করে বলেন, আমার কথা না শুনিলে সমস্যা হবে।এই কথায় ভয় পেয়ে রবিউল কারির টোপা থেকে নেমে যান। এরপর রবিউলের স্ত্রী লাভলী বেগম এসে শহিদুলকে বলেন, যা করার আমার উপর করেন, স্বামীকে মারবেন না। পাষাণ বড় ভাই কোন শুনতে না চেয়ে হাতের বাঁশের বাংয়াকা দিয়ে মাথা বরাবর ডাং মারেন। ছেলে রবিউলের করুন পরিনিতি দেখে জীবন রক্ষা করতে পিতা লোকমান আলী  মা সহিদা বেগম বাঁচাতে এলে শহিদুলের ডান হাতে থাকা ধারালো ছোরা দিয়ে বাবা লোকমান আলীর মাথায় আঘাত করেন। অস্ত্র চোটে মাথার রক্ত ফিংকি দিয়ে উঠে। এমতাবস্থায় মাটিতে লুটে পরেন লোকমান আলী। তার পরেও যেন ক্ষোভ মিটছে না, নরপশু ছেলের বাংয়াকা দিয়ে বাবার দু‘হাত লক্ষ্য করে ডাং মারেন। মা সহিদা বেগম স্বামীর রক্ত ক্ষরণ দেখে অবাক হয়ে বড় ছেলে শহিদুলের কাছাকাছি হয়ে চোখের পানি আর্তোনাদে যেন ঐ এলাকার আকাশ বাতাশ ভারি হয়ে যাচ্ছে। মায়ের কান্নায় অতিষ্ঠ হয়ে বাংয়াকা দিয়ে মাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ভাবে মারপিট করেন। তার অস্ত্রের ভয়ে এলাকার মানুষ বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না। কথা কে শুনে কে নিবে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে, তৎক্ষনিক কিছুটা চলাফেরা করতে পারে ছোট ছেলে রবিউল।

মা-বাবাকে নিয়ে ভ্যানে করে এবং নিজেও চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি হন। ভর্তি হন রবিউল, মা সহিদা বেগম, বাবা লোকমান আলী কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তির পর বাবা লোকমান আলীর মাথার কাটা জখম, ডান হাত ভাংগা দেখে তৎক্ষনিক মাথায় পনেরটি সেলাই দিয়ে রোগী বাঁচার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেপার্ট করেন।

বাবা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় ছোট ছেলে রবিউল বাধী হয়ে ১৩/১২/২০২২ইং তারিখে কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নম্বর ১২। তড়িৎ গতিতে কিশোরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ রাজিব কুমার রায়ের নির্দেশে এসআই ভীষ্ম, এসআই সুশান্ত কুমার রায়, এসআই রুবেল ও সঙ্গীয় ফোর্স সহ সাথে নিয়ে ১নং আসামী শহিদুলকে গ্রেরেফতার করে নীলফামারী জেল হাজতে পাঠান।

নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে ঐ এলাকা বাসি জানান, শহিদুলের এই ঘটনা নতুন কিছু নয় পূর্বের জমি নিয়ে জের ধরে তার বাবা-মায়ের সাথে বিবাদ চলছে, এমনকি বাবার জমি আদায় করতে গিয়ে স্ত্রী ময়না বেগমকে দিয়ে গত ১৮/০৮/২০২১ইং তারিখে শ্বশুরের বিরুদ্ধে মাননীয় ট্রাইবুনাল ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধীত/০৩) এর ৯(৪) (খ) ধারা মতে মামলার বাদিনী হন।

শুধু তাই নয় এই শহিদুল অভাব অটনের সংসারে দৈর্ঘ্যদিন ধরে চিন্তিত কিভাবে বড় টাকা ওয়ালা হতে পারি। তাই সহজ উপায় বেঁচে নিলেন সুধের ব্যবসা। যদিও সুদ সামজে অবৈধ তবু তিনি বৈধ করে অনেক টাকার মালিক। যার ফলে টাকা পয়সার চেয়ে বাবা-মা বড় হতে পারে না। লোকমান আলী অপরাধ বিচিত্রাকে বলেন, আমার জমি নিয়ে দৈর্ঘ্য দিন ধরে বড় ছেলে লেখে নেওয়ার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তার ব্যবহার আর অমানবিক অন্যায় অত্যাচারে এখন বৃদ্ধ বয়সে আমি বারবার পিতা হয়ে যে সম্মান পাওয়ার কথা বরং সমাজে মুখ দেখাতে পাচ্ছি না। কথায় কথায় লাঠি সোটা আর ছোরা বটি হাতে নিয়ে মৃত্যুর ভয় দেখায়। যা ১০/১২/২০২২ইং তারিখে আমাকে ছোরা দিয়ে চোট মারে আমার মাথায়। পরে মাঠিতে পরে যাই কে আমাকে হাসপাতালে নিল তা জানিনা । এই দুষ্ট পুত্র শহিদুলের হাতে আল্লাহ বুঝি মৃত্যু লিখেছেন। আমার ডান হাত বর্তমান তার হাতের বাংয়াকার কোবে ভেঙ্গে যায়, এক্সরে করে বুঝা যায়। মা শহিদা বেগম অপরাধ বিচিত্রাকে জানান, ছোট ছেলে রবিউলকে বাঁচাবার জন্য আমি আগুয়ান হই, আমাকে দেখে কথা না বলে ইউকালেকটর গাছের ডাল দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে শুধু মার ডাং করে এমতাবস্থায় মাঠিতে গড়াগড়ি করি, তবু ক্ষোভ মিটছে না শহিদুলের। এ ঘটনা নতুন কিছু নয় তার অত্যাচার শয্য করতে না পেরে অবশেষে গত ১৩/১১/২০২২ইং তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করি। শুধু তাই নয় গত ১৫/১১/২০২১ইং তারিখে চাঁদখানা ইউনিয়ন গ্রাম আদালতে তার বাবা বাদি হয়ে মামলা করেন, মামলা নং ২২/২০২১। গত ১৩/০৮/২০২১ইং তারিখে লোকমান আলী বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর শহিদুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন।

একাধিক লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরেও তার কোন ভাবে পিতা মাতার প্রতি ও ছোট ভাই রবিউলের উপর ক্ষোভ যাচ্ছে না ঐ এলাকার আমিনুরের সাথে সাক্ষাতে কথা হলে তিনি বলেন, শহিদুল আমার খালাতো ভাই কিন্তু এভাবে বাবা-মায়ের প্রতি অন্যায় অবিচার মারা-মারি ছোরা বটি, লাটি বাংয়াকা হাতে নিয়ে ছোট ভাই রবিউল যখন কারি টোপা দেয় ঠিক তখনেই ঐ শহিদুল ও তার স্ত্রী ময়না বেগম, শালিকা ছানদিয়া আক্তারসহ এক যোগে বাঁধা দেয় তার ভয়ে ভিত হয়ে রবিউল দারিয়ে থাকেন। তারপর হঠাৎ করে শহিদুল ছোট ভাইকে বাংয়াকা দিয়ে ডাং মারেন। এমতাবস্থায় রবিউলের স্ত্রী লাভলী বেগম ও মা-বাবা  বাঁচাতে এলে হাতের লাটি, ছোরা দিয়ে তার পিতার হাত বরাবর ডাং দেন। মা, সাহিদা  ছোট ছেলে রবিউলকে রক্ষা করতে এলে গাছের ডাল দিয়ে অমানুষিক ভাবে মায়ের পুরো শরীরে ঘাতকের মত মারেন শহিদুল।

ঐ এলাকাবাসী নুরজাহান অপরাধ বিচিত্রাকে বলেন, শহিদুল আমার ভাগিনা আমি তার খালা, লোকমান ভগ্নিপতি, শহিদা বোন। যে দৃশ্য দেখেছি তাতে মনে হয় দুনিয়া নাই। রবিউল কারিয়া কিনি ওমার খুলিতে পোজ দেয়, তারপর শহিদুল ওর বৌ ময়না শালি ছানদিয়া, সাবিনা ছুরি ভেকা দাও, নাটি বাংয়াকা হাতে নিয়ে রবিউকে বাধা করে কারিয়া পুজ দেওয়া হবে না। জীবনের ভয়ে রবিউল দারে থাকে। তখন শহিদুল সবাকে গালিগালাজ করে। হঠাৎ করি বাংয়াকা দিয়ে ডাং মারে শহিদুল, রবিউলের গায়ে। মার দেখি মা শহিদা, বাবা লোকমান, স্ত্রী লাভলী বাঁচাতে আসলে তখন হাতের চুরি দিয়া বাবার মাথায় চোট মারে, সাথে সাথে মাঠিত পরি যায়। আবার মাকে লক্ষ্য করে ঐ বাংয়াকা দিয়া ডাং মারে। মুই এরকম দেখি পিচন পাশে যাবার ধরছুন হুরুম করে পরি গেছুং। লোকমানের মাথার রক্ত দেখি আবাক, এটা কেমন কথা বেটা হয়ে বাপোক ধরি মারে।

চাঁদখানা ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আসাদ আলী অপরাধ বিচিত্রাকে বলেন, ঐ পরিবারের বিচার আমি এবং চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান হাফি সহ কয়েকবার করেছি। কারও কথা রাখে না তবে, বাবা-মায়ের উপর হাত তোলা ঠিক হয়নি।

৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অলিয়ার রহমানের সাথে সাক্ষাতে কথা হলে তিনি বলেন, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপর অন্যায় ভাবে মারপিট করা অধাউ ঠিক করেনি। যা করেছে শহিদুল অপরাধ যোগ্য।

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ থানার এস আই ভীষ্মর সাথে সাক্ষাতে কথা হলে তিনি বলেন, থানায় মামলা হয়েছে আমরা ১নম্বর আসামী শহীদুল কে গ্রেফতার করে নীলফামারী জেল হাজতে পাঠাই এবং একটা ধারালো হাচুয়া, বাঁশের বাংয়াকা ও লাঠি উদ্ধার করি।

কিশোরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ রাজিব কুমার রায়ের সাথে সাক্ষাতে কথা বললে তিনি বলেন, থানায় মামলা হয়েছে, ১নম্বর আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five + fifteen =